বিশ্বকাপ জেতার পরে স্ত্রী আন্তোনেল্লার সঙ্গে মেসি। বাড়ি ঢুকতে গিয়ে হিমসিম খেলেন দু’জনে। ফাইল চিত্র
ভালবাসার অত্যাচার! বিশ্বকাপ জেতার পরে রোজারিয়োতে নিজের বাড়িতে ঢুকতে হিমসিম খেলেন লিয়োনেল মেসি। বাড়ির বাইরে কাতারে কাতারে মানুষ। ভিড়ের মধ্যে এগোতেই পারছিল না মেসির গাড়ি। স্টিয়ারিং ছিল স্ত্রী আন্তোনেল্লার হাতে। শেষ পর্যন্ত আসরে নামতে হয়ে পুলিশকে।
বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফিরে প্রথমে বুয়েনস আইরেসে গিয়েছিলেন মেসিরা। সেখানে হুডখোলা বাসে উৎসব করেন তাঁরা। তার পরে রোজারিয়োতে নিজের বাড়িতে ফেরেন মেসি। স্ত্রী আন্তোনেল্লা, তিন ছেলে ও মা আগেই সেখানে চলে গিয়েছিলেন। মেসির গাড়ি রোজারিয়ো পৌঁছনোর অনেক আগে থেকেই মেসির বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। মেসির নামে জয়ধ্বনি করছিলেন তাঁরা।
বুধবার রোজারিয়ো পৌঁছন মেসি। ভিড়ের মধ্যে দিয়ে কোনও রকমে এগোচ্ছিল তাঁর গাড়ি। পছন্দের ফুটবলারকে এক বার দেখার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল। মেসির গাড়ি ঘিরে ছিলেন পুলিশকর্মীরা। তাঁরাও কোনও রকমে বাড়ি পর্যন্ত মেসিকে পৌঁছে দেন। মেসি বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলেও ভিড় পাতলা হয়নি। তাঁর বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে সবাই উল্লাস করছিলেন। বারান্দায় এসে জনতার দিকে হাত নাড়তে দেখা যায় লিয়োকে।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে বিমানবন্দর থেকে বিখ্যাত সৌধ ‘ওবেলিস্ক’-এর উদ্দেশে হুডখোলা বাসে বিজয়যাত্রা করার কথা ছিল মেসিদের। সেই বাসযাত্রা শুরুও হয়েছিল নির্ধারিত সময়ে। কিন্তু যত বাস এগোতে লাগল, দেখা গেল সমর্থকদের আবেগের বিস্ফোরণ। বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে বুয়েনস আইরেস রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন সে দেশের মানুষ। সরকারের অনুমান, প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ নেমেছিলেন রাস্তায়। এর মধ্যে ওবেলিস্কের আশপাশেই জড়ো হয়েছিলেন ৩০ লক্ষ। অনেক মানুষকে দেখা যায় উড়ালপুল ধরে বাসের পিছনে দৌড়তে। বাস এগোতেই পারছিল না ভিড়ের চোটে।
এত দূর ঠিক ছিল। সমস্যা শুরু হয় এর পর থেকেই। আর্জেন্টিনার বাসে ওঠার চেষ্টা করতে থাকেন অনেক সমর্থক। একটি ব্রিজের তলায় দিয়ে বাস যাওয়ার কথা ছিল। সেই ব্রিজ থেকে অনেকে লাফিয়ে বাসের উপরে পড়েন। যাঁরা রাস্তায় ছিলেন, তাঁরা চেষ্টা করতে থাকেন কোনও না কোনও ভাবে বাসের উপরে চড়ার। স্থানীয় মানুষের দাবি, ফুটবলারদের উদ্দেশে বিভিন্ন জিনিস ছোড়া হয়েছে, যাতে তাদের আঘাত লাগতেও পারত। মেসিদের নিরাপত্তা নিয়ে তখন বিরাট সমস্যা দেখা দেয়।
বাধ্য হয়ে আসরে নামে সরকার। বাস এগোনোর কোনও উপায় নেই দেখে দ্রুত হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করা হয়। বাস থেকে সরাসরি সেই হেলিকপ্টারে উঠে ওবেলিস্কের উদ্দেশে রওনা দেন মেসিরা। রাস্তায় জড়ো হওয়া সমর্থকরা এতে খেপে যান। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায় তাঁদের। পুলিশের উদ্দেশেও ছোড়া হতে থাকে ইট-পাটকেল। তবে আনন্দের পরিবেশে বেশি কড়া ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। হুঁশিয়ারি দিয়ে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মেসিরা হেলিকপ্টারে উঠে যাওয়ার পরেই রাস্তা ফাঁকা হতে শুরু করে।