ডার্বির মহারণে জিতবে কোন দল? ফাইল ছবি
রবিবার কলকাতা ডার্বি। সাত মাস পর আবার মুখোমুখি হতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান। আড়াই বছর পর কলকাতায় এই ম্যাচ হতে চলেছে। দু’দলের সমর্থকদের উত্তেজনাই যে তুঙ্গে, এটা নিয়ে নতুন করে বলার দরকার নেই। ডার্বির বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই টিকিটের জন্য যে হুড়োহুড়ি, কাড়াকাড়ি দেখা যাচ্ছে, তাতেই বোঝা যায় অতীতের উন্মাদনা এখনও রয়েছে।
২০২০-র ১৯ জানুয়ারি শেষ বার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে খেলেছিল দুই প্রধান। আই লিগের সেই ম্যাচে তৎকালীন মোহনবাগান জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। তার দু’মাস পর আই লিগের ফিরতি পর্বের খেলা থাকলেও করোনার কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। সেই শেষ। এত দিন পর আবার যুবভারতীতে দুই দলের ম্যাচ দেখা যেতে চলেছে।
ডার্বিতে কোনও দলকেই সে ভাবে এগিয়ে রাখা যায় না। তবে আগের পারফরম্যান্সের বিচারে খাতায়-কলমে বা ধারে-ভারে কোনও না কোনও দল ঠিকই এগিয়ে থাকে। এ বারও রয়েছে। ডার্বির আগে দুই দলই জয়হীন। এটিকে মোহনবাগান প্রথম ম্যাচে হারার পর দ্বিতীয় ম্যাচে ড্র করেছে। ইমামি ইস্টবেঙ্গল দু’টি ম্যাচেই ড্র করেছে। এ তো গেল পরিসংখ্যান। ধারে-ভারে এগিয়ে থাকার কথা বললে নিঃসন্দেহে সবুজ-মেরুনকেই ধরতে হবে।
ডার্বির আগে দু’দলের পারফরম্যান্সের বিচার করতে বসলে, সেখানেও কিছুটা এগিয়ে থাকবে এটিকে মোহনবাগান। প্রথম ম্যাচে তারা হেরে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু গোল করার যে সমস্ত সুযোগ তারা পেয়েছে, তা কাজে লাগাতে পারলে নিঃসন্দেহে জয় আসত। শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে সবুজ-মেরুন জনতার হৃদয়ভঙ্গ করে দেয় রাজস্থান ইউনাইটেড। দ্বিতীয় ম্যাচ যথেষ্ট কঠিন ছিল এটিকে মোহনবাগানের কাছে। মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে আগে কোনও দিন জেতেনি তারা। এ বারও হয়নি। এগিয়ে গিয়েও ড্র করতে হয়েছে।
ইমামি ইস্টবেঙ্গলের অবস্থাও এটিকে মোহনবাগানের মতোই। তারাও দু’টি ম্যাচে গোল করার সুযোগ পেয়েছে অনেক। হাত মেলানোর দূরত্ব থেকে তাদের দলের ফুটবলার সুযোগ নষ্ট করেছেন। গত ম্যাচে রাজস্থান পেনাল্টি নষ্ট না করলে হারত তারা। তা সত্ত্বেও ইমামি ইস্টবেঙ্গল যদি সুযোগ কাজে লাগাতে পারত, তা হলে তিন পয়েন্ট নিয়েই তাদের মাঠ ছাড়ার কথা। অর্থাৎ, দু’টি ম্যাচ থেকে অনায়াসে ছ’পয়েন্ট থাকতে পারত তাদের দখলে। অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে ডার্বিতে মাঠে নামতে পারত তারা। তা হয়নি। তবে ইমামি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের আশ্বস্ত করতে পারে তাদের মাঝমাঠ। হায়দরাবাদ থেকে আসা অনিকেত যাদব এবং শৌভিক চক্রবর্তী ছন্দেই রয়েছেন। অবাক করেছেন তুহিন দাস। বাঁ দিক থেকে তাঁর উইং ধরে উঠে আসা এবং বল ভাসানো অনেকেরই নজর কেড়েছে। রক্ষণে জেরি লালরিনজুয়ালা এবং লালচুংনুঙ্গা ভরসা দিয়েছেন। মহম্মদ রাকিপকে খেলানো হলে তিনিও ভরসা দিতে পারেন।
দু’দলের দুর্বলতা বিচার করতে বসলে, সমস্যা অনেক। এটিকে মোহনবাগানের সবচেয়ে বড় সমস্যা তাদের গোল করার লোকের অভাব। রয় কৃষ্ণ এবং ডেভিড উইলিয়ামসকে ছেড়ে দেওয়ার মাশুল গুনতে হচ্ছে প্রতি ম্যাচেই। মনবীর সিংহ, লিস্টন কোলাসো, কিয়ান নাসিরিরা কিছুতেই ভরসা দিতে পারছেন না। গোল করার জন্য জনি কাউকো, হুগো বুমোসের উপরে ভরসা করতে হচ্ছে। কোচ জুয়ান ফেরান্দো আগেই জানিয়েছেন, এ বার গোলের জন্য নির্দিষ্ট কোনও ফুটবলারের উপর নির্ভর করতে চান না তাঁরা। সেই সিদ্ধান্ত এখনও পর্যন্ত সফল হয়নি। ডার্বিতে এই সমস্যা ভোগাতে পারে।
রক্ষণেও সমস্যা রয়েছে এটিকে মোহনবাগানের। সাড়া জাগিয়ে পল পোগবার দাদা ফ্লোরেন্তিন কলকাতায় এলেও, দু’টি ম্যাচে তিনি আহামরি কিছু খেলেননি। চোখের সামনে গোল হয়েছে। ফ্লোরেন্তিন বাধা দিতে পারেননি। একই অবস্থা প্রীতম কোটালের ক্ষেত্রেও। তিনিও রাজস্থান বা মুম্বই ম্যাচে ভরসা দিতে পারেননি। গত মরসুমে এটিকে মোহনবাগানের দুর্গ আগলাতেন সন্দেশ জিঙ্ঘন এবং তিরি। এ বার জিঙ্ঘনকে ছেড়ে দিয়েছে ক্লাব। তিরি এখনও সুস্থ নন। ফলে রক্ষণ নিয়ে চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।
ইমামি ইস্টবেঙ্গলের মূল সমস্যা হল, তাদের দলটাই এখনও তৈরি হয়নি। বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি নিয়ে সমস্যা থাকায় দল গড়তে দেরি হয়েছে। স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনকে কোচ করে এবং আইএসএলের বেশ কিছু নামী ফুটবলারকে দলে নিলেও, তারা একসঙ্গে অনুশীলন করার সুযোগ পেয়েছেন কম। একটা দল হিসাবে কোনও ফুটবল ম্যাচ খেলতে গেলে যে যোগাযোগ, অনুমানক্ষমতা দরকার, সেটাই এখনও গড়ে ওঠেনি। তার ফল দেখা যাচ্ছে ম্যাচেও। অজস্র মিসপাস, ভুল পাস দেখা যাচ্ছে। কোন জায়গায় কোন ফুটবলারকে খেলাবেন, সেটা এখনও ঠিক করে উঠতে পারেননি কনস্ট্যান্টাইন।
দ্বিতীয় বড় সমস্যাটি এটিকে মোহনবাগানের মতোই। লাল-হলুদে গোল করার লোকের অভাব আরও প্রকট। এলিয়ান্দ্রো এখনও তৈরি নয় বলে খেলাতে পারছে না তারা। একই অবস্থা দিল্লি থেকে লোনে আসা হিমাংশু জাংরার ক্ষেত্রেও। সুমিত পাসি এবং ভিপি সুহেররা যে ভরসা দিতে পারবেন না, এটা বুঝে গিয়েছেন লাল-হলুদ সমর্থকরা। সুহের ভাল করে বলই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। সুমিত এক মিটার দূরত্ব থেকেও গোল নষ্ট করছেন। তবু সুহের এগিয়ে থাকবেন কারণ, তিনি দরকারে ভাল পাস বাড়াতে পারেন। যদিও চোট থাকায় ডার্বিতে তাঁর খেলার সম্ভাবনা কম। এগিয়ে সুমিতই।
ডার্বির মতো ম্যাচে বিভিন্ন বাধা টপকে যারা নির্দিষ্ট দিনে ভাল খেলতে পারে, একে অপরকে ছাপিয়ে যেতে পারে, জেতে তারাই। এখন দেখার, এটিকে মোহনবাগান না ইমামি ইস্টবেঙ্গল, কোন দল সেই কাজে সফল হয়।