নিউজ়িল্যান্ডকে হারাতে মরিয়া বাবররা। —ফাইল চিত্র
লাহৌর থেকে ইসলামাবাদ। বিশ্বকাপ-মঞ্চে এই প্রথমবার ভারতকে হারানোর পরে গোটা পাকিস্তান মেতে উঠেছে উৎসবে। আতশবাজির সঙ্গে ভেসে এসেছে গুলির শব্দও।
আর সেই উৎসবের আবহেই আজ, মঙ্গলবার ফের জবাব দিতে নামছেন বাবর আজ়মরা। প্রতিপক্ষের নাম যে নিউজ়িল্যান্ড! গত মাসে নিরাপত্তার অভাবের ধুয়ো তুলে পাকিস্তানে এসেও সফর বাতিল করে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন ট্রেন্ট বোল্টরা। সেই অপমান দগদগে ক্ষত হয়ে রয়েছে পাক-জনতার মনে।
সোমবার যেমন পাকিস্তানের এক টেলিভিশন চ্যানেলে শোয়েব আখতার বলেছেন, “ভারতকে হারিয়ে দিয়েছো, কিন্তু মনে রেখো নিউজ়িল্যান্ডও আমাদের শত্রু। ওরা যে ভাবে সফর বাতিল করেছিল, তা গোটা দেশের কাছে চরম অপমান। তার জবাব মাঠেই দিতে হবে তোমাদের।”
এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনেও সেই প্রসঙ্গ নিয়ে রীতিমতো বাউন্সারের মুখে পড়তে হয় কেন উইলিয়ামসনকে। যিনি মাঠের লড়াই শুরুর আগেই শান্তির বার্তা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, দুই দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সৌহার্দের সম্পর্ক আগের মতোই রয়েছে। তাই আশা করা যায়, খেলা হবে ক্রিকেটীয় ঐতিহ্য বজায় রেখেই। উইলিয়ামসন বলেছেন, “দুই দলের মধ্যে বহুদিন ধরেই সুসম্পর্ক রয়েছে। একে অপরের বিরুদ্ধে অতীতে প্রচুর ম্যাচ খেলেছি। বিশ্বাস করি, এক মাস আগের সেই অবাঞ্ছিত ঘটনার স্মৃতি মন থেকে মুছে ফেলবে পাকিস্তান।”
উইলিয়ামসন যা-ই বলুন না কেন, পাক শিবিরে শান্তির চেয়ে পাল্টা জবাব দেওয়ার মনোভাবই বেশি। যে বার্তা বিশ্বকাপ শুরুর আগে দিয়েছিলেন রামিজ় রাজা। পাক বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যানের মন্তব্য ছিল, “একটা সময় প্রতিবেশী দেশ ভারতই আমাদের লক্ষ্য ছিল। তার সঙ্গে এ বার যুক্ত হয়েছে আরও দুই দেশ। নিউজ়িল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দিতেই হবে।” ট্রেন্ট বোল্টদের অধিনায়কও মেনে নিয়েছেন, সফর বাতিল হওয়ার পিছনে তাঁদের কোনও হাত ছিল না। তিনি বলেছেন, “সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত ছিল নিউজ়িল্যান্ড সরকারের। আমাদের সেই পরামর্শ মানতে হয়েছে।” যোগ করেছেন, “প্রথম ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে যে ক্রিকেট খেলেছে পাকিস্তান, তার পরে ওদের অবশ্যই ফেভারিট বলে স্বীকার করতে হবে। দারুণ ছন্দ পেয়ে গিয়েছে দলটা। ওরা আমাদের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী হয়ে মাঠে নামবে। সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তৈরি থাকতে হবে।”
শাহিন শাহ আফ্রিদির গতির সঙ্গে বিষাক্ত ইনসুইং। ব্যাট হাতে বাবর আজ়ম এবং মহম্মদ রিজ়ওয়ানের শাসন। সঙ্গে দুই অভিজ্ঞ মহম্মদ হাফিজ় এবং শোয়েব মালিকের লড়াকু মানসিকতা। সবমিলিয়ে প্রথম ম্যাচেই রীতিমতো অগ্নিপরীক্ষার মুখে পড়তে হচ্ছে নিউজ়িল্যান্ডকে। যা নিয়ে এ দিন উইলিয়ামসন বলেন, “তারুণ্য এবং অভিজ্ঞতার দুর্দান্ত মিশেল রয়েছে এই পাকিস্তান দলে। আমাদের প্রত্যেক মুহূর্তে সতর্ক থাকতে হবে।”
এ দিকে, রবিবার ১০ উইকেটে অকল্পনীয় জয় ওয়াঘার ওপারে তৈরি করেছে উৎসবের মেজাজ। ভারতের বিরুদ্ধে জয়ের পরেই কোভিড-বিধি দূরে সরিয়ে করাচির রাস্তায় নেমে আসেন উল্লসিত ভক্তেরা। গণমাধ্যমে সেই উল্লাসের ভিডিয়ো পোস্ট করে প্রাক্তন পেসার শোয়েব আখতার লেখেন, “পাকিস্তানের সর্বত্র উৎসবের ছবিটা একই ধরনের। এত দিনে গোটা দেশের লোক একসঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠার অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন।”
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, আনন্দের আতিশয্যে লাহৌরের বেশ কয়েকটি জায়গায় পাক সমর্থকেরা আকাশে গুলি ছুড়েও পালন করেন উৎসব। প্রাক্তন পাক স্পিনার ইকবাল কাশিমও মনে করেন, বাবর আজ়মের হাত ধরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসতেই পারে পাকিস্তানে। বলেছেন, “যে ভাবে ভারতকে ধরাশায়ী করেছে পাকিস্তান, তা দেখে বিস্মিত। বিশ্বাস করছি, শাহিনরা এ বার দেশকে উপহার দেবে বিশ্বকাপ।”
উৎসবের আবহে ভারতীয় দলের প্রতি উড়ে এসেছে বিদ্রুপও। বিশেষ করে, বিস্ময়-স্পিনার সি ভি বরুণ সম্পর্কে ম্যাচের আগে বিশেষজ্ঞরা যে ধরনের মতামত দিয়েছিলেন, তার প্রতিফলন ম্যাচে দেখা যায়নি। চার ওভারে ৩৩ রান খরচ করেন কলকাতা নাইট রাইডার্স তারকা। কোনও উইকেট নেই ঝুলিতে। প্রাক্তন পাক অধিনায়ক সলমন বাট নিজের ইউটিউব চ্যানেলে বলেছেন, “আইপিএলে বরুণ সাফল্য পেয়েছিল বলে অনেকেই ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কিন্তু বরুণ বিস্ময়-স্পিনার নয়। পাকিস্তানে গলির ক্রিকেটে ওর মতো স্পিনার প্রচুর রয়েছে।” যোগ করেন, “একটা সময় শ্রীলঙ্কার অজন্তা মেন্ডিসকে নিয়েও এমন আলোড়ন হয়েছিল। বরুণও এই গোত্রেরই স্পিনার। আমাদের ব্যাটাররা ওর স্পিনকে ভোঁতা করে দিয়েছে।”