লখনউয়ের মাঠ এমনই ফাঁকা থাকল। ছবি: রয়টার্স।
সরকারি ভাবে ৫০ হাজার লোক খেলা দেখতে পারেন। কিন্তু লখনউয়ের একানা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচে যত জন দর্শককে দেখা গেল, তাঁদের সবাইকে এক করলেও দর্শকাসনের একটি অংশও ভরবে না। আমদাবাদ, হায়দরাবাদ, দিল্লি, চেন্নাইয়ের সঙ্গে এক তালিকায় বসল লখনউও। বিশ্বকাপে ভারতের খেলা না থাকলে মাঠে লোকই হচ্ছে না। ক্রিকেটবিশ্বের দুই শক্তিশালী দল অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা মুখোমুখি হলেও তা লোক টানতে ব্যর্থ।
এ বারের বিশ্বকাপে যে ক’টি মাঠে ম্যাচ হচ্ছে তার মধ্যে ধর্মশালা বাদ দিলে বাকি সবক’টি শহরেই বেশ ভাল গরম। ফলে দুপুর রোদে কেউ খেলা দেখতে আসছেন না। যাঁরা আসছেন তাঁরাও চেষ্টা করছেন একটু ছায়া খোঁজার। একই অবস্থা লখনউয়েও। সেখানে অবশ্য গ্যালারি এতটাই ফাঁকা যে ছায়া খুঁজে নিতে অসুবিধা হয়নি। ম্যাচ শুরু হওয়ার সময়ে মেরেকেটে হাজার খানেক দর্শকও মাঠে ছিলেন কি না সন্দেহ।
দর্শকের ব্যাপারে লখনউয়ের অনেক দিন ধরেই ‘সুনাম’ রয়েছে। এ বারের আইপিএলে স্থানীয় দল লখনউ সুপার জায়ান্টস নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছিল দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে। আইপিএলের ১৫ বছরের ইতিহাসে সেটাই লখনউয়ে ছিল প্রথম ম্যাচ। কিন্তু তা-ও উৎসাহিত করতে পারেনি স্থানীয় মানুষকে। প্রচুর ফাঁকা আসন দেখা যায়।
তবে সেটাও ছাপিয়ে গিয়েছিল মে মাসের একটি ঘটনা। সেটিও আইপিএলে লখনউয়ের একটি হোম ম্যাচের। এক ক্রিকেটপ্রেমী একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন, যেখানে দেখা যায় স্টেডিয়ামের ফাঁকা চেয়ারের উপর শুয়ে রয়েছেন এক দর্শক। তিনি মোবাইলে যে ম্যাচটি দেখছেন, সেটিই তখন ওই স্টেডিয়ামে হচ্ছে। অর্থাৎ, মাঠের দিকে তাকিয়ে সরাসরি খেলা দেখার বদলে তিনি খেলা দেখছেন মোবাইলে। পরে ওই সমর্থককে ‘সুপারফ্যান’ আখ্যাও দেওয়া হয়।
বিশ্বকাপের বেশির ভাগ ম্যাচে ফাঁকা স্টেডিয়াম দেখা যাচ্ছে। অনেকেই এর পিছনে দায়ী করছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে। দাবি, বোর্ডের অব্যবস্থার কারণেই দর্শকেরা খেলা দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একে তো বোর্ড দেরি করে টিকিট ছেড়েছে। ফলে অনেকে হোটেল বা যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে পারেননি বলে টিকিট কাটেননি। তার উপর স্পনসরদের তরফে অনেকে টিকিট পেয়েও মাঠে আসছেন না।
বিখ্যাত আইনজীবী এবং ক্রিকেটপ্রেমী সাফির আনন্দ এক ওয়েবসাইটে বলেছেন, “আমি গোটা বিশ্ব জুড়ে ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছি। ওখানে অনলাইন ব্যালটের ব্যবস্থা আছে। আগে থেকে ম্যাচ বেছে নেওয়া যায়। ব্যালট খোলার পর ড্রয়ের মাধ্যমে আপনি কোন ম্যাচের টিকিট পাবেন সেটা জানিয়ে দেওয়া হয়। উইম্বলডনেও একই ব্যবস্থা। বিশ্বের সব জায়গাতেই তাই। এখানে পুরোটাই ভুলভাল। প্রথম দিন থেকে ওয়েবসাইট ক্র্যাশ করে যাচ্ছে। কত ক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে সেটাও ঠিক করে দেখা হচ্ছে না। সেটা যদিও বা হল, আসন খুঁজতে গিয়ে নাজেহাল হতে হচ্ছে। এমন অবস্থা যে সারা দিন ধরে অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই।”
অনেকে বলেছেন, ভারতের বিরাট ক্রিকেট স্টেডিয়াম থাকার কারণে লোক হলেও মাঠ ফাঁকা দেখাচ্ছে। যেমন আমদাবাদে দর্শকসংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজার। সেখানে ৫০ হাজার লোক আসা মানে অর্ধেক স্টেডিয়ামও ভর্তি হবে না। কিন্তু সেই সংখ্যাটাই যে কোনও স্টেডিয়াম ভর্তির জন্যে যথেষ্ট। এই কারণেই আমদাবাদ, লখনউয়ে লোক হলেও মাঠভর্তি তা বলা যাচ্ছে না।
বোর্ডের বিশ্বকাপ আয়োজক কমিটিকেও দুষেছেন অনেকে। দেরি করে টিকিট ছাড়াই এর মূল কারণ। টিকিট পেতেই যদি গলদঘর্ম হতে হয় তা হলে হোটেল বা যাতায়াতের ব্যবস্থা হবে কী করে? উল্লেখ্য, গত বিশ্বকাপের সূচি প্রকাশ এবং টিকিট বিতরণ শুরু হয়েছিল এক বছরেরও বেশি আগে। ফলে যাঁরা খেলা দেখতে যাবেন ভেবেছিলেন তাঁরা অনায়াসে গিয়ে খেলা দেখে এসেছেন।
প্রচুর পরিমাণে ক্রিকেট হওয়াও একটা কারণ। অন্যান্য দেশে বছরের নির্দিষ্ট একটা সময়ে ক্রিকেট হয়। বাকি সময়ে নিজেদের দল বিদেশে খেলে। কিন্তু ভারতে আইপিএলই চলে দু’মাসের কাছাকাছি। তার পর একগাদা হোম সিরিজ় তো রয়েছেই। এত ক্রিকেট দেখার আগ্রহ লোকজন পাচ্ছেন কি না, সেটাও একটা প্রশ্ন।
পাশাপাশি, দিন দিন কমছে এক দিনের ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা। টেস্টে যে দাঁত কামড়ে পড়ে থাকা লড়াই, মাধুর্য এবং শিল্প দেখা যায় বা টি-টোয়েন্টিতে যে ধুমধাড়াক্কা বিনোদন পাওয়া যায়, তার কোনওটাই এক দিনের ক্রিকেটে নেই। ফলে এই ফরম্যাট গুরুত্ব হারাচ্ছে। সে কারণেই মাঠে ভিড় হচ্ছে না।