ICC Champions Trophy 2025

গম্ভীর জোর দিচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে, কিন্তু লাভ কি আদৌ হবে? প্রশ্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল নির্বাচন নিয়ে

ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার কথা বার বার বলে এসেছে বোর্ড। কোচ থেকে প্রাক্তন সচিব, সবার মুখেই এই কথা ছিল। অথচ সীমিত ওভারে ঘরোয়া ক্রিকেটে যিনি সবচেয়ে ভাল খেললেন, তাঁর কথাই ভাবা হল না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৫৮
Share:

গৌতম গম্ভীর। — ফাইল চিত্র।

জাতীয় দলে ফিরতে গেলে আর কী করতে হবে? করুণ নায়ার নিজেকে প্রশ্নটা করে দেখতেই পারেন। আর যা-ই হোক, সব ব্যাটারের তো ঘরোয়া ক্রিকেটে ৭৫২ গড় থাকে না!

Advertisement

তবু ভারতীয় দলে তিনি সুযোগ পেলেন না। না ইংল্যান্ড সিরিজ়‌ের দলে, না চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে। তা হলে যে বোর্ডের বিভিন্ন মহল থেকে বার বার বলা হয় ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার জন্য, তা কি স্রেফ কথার কথা? ঘরোয়া ক্রিকেটে দাপটে খেললেও কি জাতীয় দলে শিকে ছিঁড়বে না?

গত বছর প্রথম বার সিনিয়র ক্রিকেটারদের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন বোর্ড সচিব জয় শাহ। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ে হারের পর কোচ গৌতম গম্ভীরের মুখে একাধিক বার সেই কথা শোনা গিয়েছিল। তার পরে হাওয়ায় এটাও ভেসেছিল যে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেললেই জাতীয় দলের দরজা খুলে যাবে। তা যে সত্যি নয়, প্রমাণিত করুণের ক্ষেত্রেই। ভারতীয় দলে ‘তারকাপূজা’ এখনও বন্ধ হল না।

Advertisement

বিজয় হজারে ট্রফিতে করুণের পারফরম্যান্সের দিকে এক বার নজর রাখা যাক। অপরাজিত ১১২, অপরাজিত ৪৪, অপরাজিত ১৬৩, অপরাজিত ১১১, ১১২, অপরাজিত ১২২, অপরাজিত ৮৮। সাত ইনিংসে মাত্র এক বার আউট। একার হাতে ফাইনালে তুলেছেন বিদর্ভকে। বিজয় হজারের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গড় নিয়ে প্রতিযোগিতা শেষ করার নজির এখনই নিশ্চিত করেছেন।

করুণের প্রশংসা করেছেন খোদ সচিন তেন্ডুলকর। সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, “সাত ইনিংসে পাঁচটি শতরান-সহ ৭৫২ রান অসাধারণের থেকে কম কিছু নয়। এ ধরনের পারফরম্যান্স এমনি এমনি হয় না। নিখুঁত ফোকাস এবং কঠোর পরিশ্রম থাকলে তবেই সম্ভব। করুণ নায়ার, এ ভাবেই এগিয়ে যাও এবং প্রতিটা সুযোগ কাজে লাগাও।”

মুখ খুলেছেন হরভজন সিংহও। কটাক্ষ করে বলেছেন, “এক-এক জনের জন্য এক-এক রকম নিয়ম হওয়া উচিত নয়। নায়ার যখন ভাল খেলছে তখন ওকে জাতীয় দলে খেলানো উচিত, তাই নয় কি? শরীরে ট্যাটু নেই, জমকালো পোশাক পরে না বলেই কি ওকে দলে নেওয়া হচ্ছে না? ও কি কঠোর পরিশ্রম করে না?”

করুণকে বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গে কী বলেছেন নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকর? শনিবার তাঁর বক্তব্য, “ওকে বাদ দেওয়া সত্যিই কঠিন ছিল। অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছে। একজন ক্রিকেটারের সাড়ে সাতশোর উপরে গড় ভাবাই যায় না। আমরা ওর সঙ্গে কথা বলেছি। এই মুহূর্তে এই দলে করুণের জন্য জায়গা বার করা খুবই কঠিন। যাদের নেওয়া হয়েছে তাদের দিকে দেখুন। প্রত্যেকের গড় ৪০-এর উপরে। দুর্ভাগ্যবশত, ১৫ জনের দলে সবাইকে জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এ ধরনের পারফরম্যান্স নজর কাড়বেই। তাই ভবিষ্যতে কেউ যদি ফর্ম হারায় বা চোট পায়, তা হলে করুণের কথা নিশ্চয়ই ভাবা হবে।”

কেন করুণকে কারও ফর্ম হারানো বা চোট পাওয়ার উপর নির্ভর করতে হবে তা স্পষ্ট নয়। যশস্বী জয়সওয়াল ভাল ফর্মে রয়েছেন মানা গেল। কিন্তু তিনি এখনও এক দিনের ম্যাচে খেলেননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে শেষ বার ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলেছেন ২০২২ সালে। তাঁর জায়গায় যিনি ফর্মে রয়েছেন তাঁকে কি নেওয়া যেত না? শ্রেয়স আয়ার, কেএল রাহুলেরা ভারতের মিডল অর্ডারে রয়েছেন ঠিকই। যদি তাঁরা ব্যর্থ হন তখন হাতে শক্তিশালী বিকল্প কোথায়? ভরসা রাখতে হবে সেই অলরাউন্ডারদের উপরে, যাঁরা কবে খেলবেন কবে ব্যর্থ হবেন কেউ জানেন না। অন্তত ইংল্যান্ড সিরিজ়‌ে করুণকে জায়গা দেওয়া যেতেই পারত।

অবশ্য যে ক্রিকেটার টেস্টে ত্রিশতরান করেও পরের ম্যাচে বাদ পড়েছিলেন, তাঁর কাছে এ সব নতুন অভিজ্ঞতা নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই উপেক্ষা সহ্য করেছেন করুণ। তবে তাঁকে দলে না নিয়ে ভারতীয় বোর্ড এটাও প্রমাণ করেছে, ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সই শেষ কথা নয়। জাতীয় দলে জায়গা পেতে গেলে হয়তো আরও কিছু করতে হতে পারে।

দল নির্বাচনের আগে করুণের ভবিতব্য বুঝে গিয়েই হয়তো জনৈক সমর্থক লিখেছেন, “দলে জায়গা পেতে গেলে এ বার বোধহয় ওকে পিআর এজেন্সি (যারা প্রচার করে) ভাড়া করতে হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement