ঝুলন গোস্বামী। ফাইল ছবি
অ্যাক্রোপলিস মলের পিছন দিকে তিন তলার ফ্ল্যাটের দরজা খুললেই চোখ যায় দেওয়াল-জোড়া ছবিতে। বল করছেন ঝুলন গোস্বামী। মনে হবে, ঠিক যেন মাঠে খেলা চলছে। পাশের ক্যাবিনেটে ট্রফি ভর্তি। ক্রিকেটের আবহেই থাকতে ভালবাসেন ঝুলন। বিশ্বকাপ খেলে ফেরার পর ভারতীয় দলের জোরে বোলার এই প্রথম কোনও সাক্ষাৎকার দিলেন।
প্রশ্ন: ৩৯-এও খেলে যাচ্ছেন। গোটা ক্রিকেটবিশ্ব অবাক। বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে চোটের জন্য খেলতে পারেননি। ভারত ছিটকে যায়। অধিনায়ক বলেন, আপনার না থাকাটাই তফাত গড়ে দিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে এখনও ভারতীয় দলের অন্যতম ভরসার জায়গা আপনি। এর রহস্য কী?
ঝুলন গোস্বামী: রহস্য কিছু নেই। বছরের পর বছর ধরে খেলতে খেলতে, একটা অভ্যাসের মধ্যে থাকতে থাকতে এটা হয়ে যায়। ট্রেনিং পদ্ধতি, খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানোর সময় সব কিছু এর মধ্যে পড়ে। আর দেশের হয়ে খেলার কথা ভাবলে বাকিটা এমনিই হয়ে যায়।
প্রশ্ন: সচিন ২৩ বছর খেলেছেন। আপনার ২০ বছর হয়ে গেল। সচিন এক জনই হয়েছে। মেয়েদের ক্রিকেটে সে দিক থেকে দেখলে জায়গাটা আপনার। এটা কী করে সম্ভব হল?
ঝুলন: হওয়াই যায়। এটা বিরাট কিছু ব্যাপার নয়। যখন ছোট ছিলাম, তখনই বুঝে গিয়েছিলাম, ট্রেনিংটা খুব ভাল করে করতে হবে। কারণ, আমি জোরে বোলার। এখানে কোনও গাফিলতি নয়। এটাই আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমার বোলিংটা অনেকটা ছন্দের মতো। ছন্দটাই আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেটা ধরে রাখতে হবে। সেটা যখন বুঝলাম, সে ভাবেই নিজেকে তৈরি করেছি। যখন অভিষেক হল, ভাবিনি ২০ বছর খেলব। কেউই ভাবে না কত বছর খেলবে। কারও কেরিয়ার দু’বছর, কারও পাঁচ, কারও দশ। ফলে ওই ভাবে পরিকল্পনা করা যায় না। সচিনও কি ভেবেছিল ২৩ বছর খেলবে? লক্ষ্য একটাই ছিল— যখনই খেলব, নিজের সেরাটা দেওয়া। সেই খিদেটাই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের হয়ে খেলব, এই ছবিটা চোখের সামনে যখন ভেসে ওঠে। তখন বাকিটা হয়ে যায়।
প্রশ্ন: যে ভাবে অবলীলায় বলে দিলেন, সচিন-ঝুলন হওয়াই যায়, তা হলে বাংলা থেকে আমরা আর এক জন ঝুলন গোস্বামী পেলাম না কেন?
ঝুলন: কেন পাওয়া যাবে না? এক দিনে তো আসে না। নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। আমার আগে অনেকেই বাংলা থেকে দেশের হয়ে খেলে গিয়েছেন। কিন্তু তখন প্রচারের সেই সুযোগ ছিল না। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এখন ঘরে বসে সব কিছু জানা যায়, জানানো যায়। আরও একটা ব্যাপার আছে। তখন খেলা অনেক কম হত। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই তাঁরা প্রচারের আলোয় আসার সুযোগ তুলনায় অনেক কম পেতেন। দুটো বা তিনটে বছরে একটা সিরিজ হয়েছে। আমরা অনেক বেশি খেলার সুযোগ পেয়েছি। পরের প্রজন্ম আরও বেশি খেলার সুযোগ পাবে। আমরাও প্রথম সাত-আট বছর সে ভাবে সুযোগ পাইনি। বছরে একটা হোম সিরিজ, একটা অ্যাওয়ে সিরিজ হত। ২০১৫-’১৬ থেকে আইসিসি যখন মেয়েদের চ্যাম্পিয়নশিপ চালু করল, তখন সেটা আমাদের দারুণ সাহায্য করল। সেরা আটটা দলকে পরস্পরের সঙ্গে সিরিজে তিনটে করে ম্যাচ খেলতেই হবে। অর্থাৎ বছরে ২১টা ম্যাচ। সঙ্গে আরও কিছু সিরিজ। ফলে তফাৎ তো হয়েইছে। ঝুলন গোস্বামী এল কি না সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভারত জিতছে, এটা গুরুত্বপূর্ণ। আর বাংলা থেকে তো প্লেয়ার উঠেছে। রিচা ঘোষ, দীপ্তি শর্মা রয়েছে।
প্রশ্ন: কিন্তু দীপ্তিকে তো সরাসরি বাংলার বলা যাবে না।
ঝুলন: ও উত্তরপ্রদেশের মেয়ে। কিন্তু ও তো বাংলা থেকেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছে। মহম্মদ শামিও তো তাই। শামিকে তো সবাই বাংলার প্লেয়ার বলেই জানে। ফলে বাংলা থেকে প্লেয়ার উঠছে না, এ রকম নয়। আরও কয়েক জন তৈরি হচ্ছে। তাদের নাম নেব না। আমার পক্ষে সেটা বলা উচিত হবে না। ওদের উপর একটা বাড়তি চাপ তৈরি হবে। প্রিয়ঙ্কা খেলেছে। নম্বর দিয়ে সব সময় সব কিছু বিচার হয় না।
প্রশ্ন: খেলা থেকে না পাওয়ার কোনও আক্ষেপ?
ঝুলন: অবশ্যই। দু’বার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে ট্রফি পাইনি। সেটা তো মিস্ করি। মহিলা দল এখনও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। সেই না পাওয়া তো আছে।
প্রশ্ন: ব্যক্তিগত জীবনে এখনও তথাকথিত সেটল্ড নন। বিয়ে করেননি। আক্ষেপ হয় না?
ঝুলন: কেন আক্ষেপ হবে? বাড়ি থেকে তো কেউ জোর করেনি খেলার জন্য। বাড়িতে আমার আগে কেউ খেলেওনি। নিজের ইচ্ছেয় খেলায় এসেছি। আক্ষেপ কেন থাকবে?
প্রশ্ন: ইচ্ছে করে না ঘর-সংসার করতে? অনেক খেলোয়াড়ই তো দিব্যি সংসার করতে করতে খেলছেন। চোখের সামনে সানিয়া মির্জা আছেন।
ঝুলন: ইচ্ছে হবে না কেন? হয়েছে। কিন্তু আমি যে ভূমিকাটা পালন করি, অর্থাৎ মিডিয়াম পেসার, সেখানে জীবনটাকে ওই জায়গায় নিয়ে যাওয়াটা কঠিন। কারণ মিডিয়াম পেসার হওয়ার ফলে বাড়তি কিছু পরিশ্রম করতে হয়। এটা ফুলটাইম কাজ। সেখান থেকে সরে আসা যায় না। আমি এ ভাবেই দেখেছি বিষয়টা। সানিয়া ওর মতো করে ভেবেছে। ও ভারতের মহিলা খেলাধুলোর ছবিটাই বদলে দিয়েছে। তার জন্য ওকে সেলাম। আমরা সবাই ওর কাছে কৃতজ্ঞ। সবাই তো সবটা পারে না।
প্রশ্ন: খেলা ছাড়ার পরেও কি এরকমই থাকবেন?
ঝুলন: দেখা যাক! যত দিন খেলছি, এ সব নিয়ে তো ভাবছিই না। আর কবে খেলা ছাড়ছি, সেটা নিয়ে এখনই ভাবছি না।
প্রশ্ন: সবাই এটাই জানতে চাইছে, খেলা কত দিন চালিয়ে যাবেন?
ঝুলন: জুনের শেষে শ্রীলঙ্কা সফর। খেলব। তারপর কী করব জানি না। আসলে ২০১৭ সালের পর থেকেই খুব লম্বা পরিকল্পনা করে খেলছি না। গত বিশ্বকাপ পর্যন্ত ছোট ছোট পরিকল্পনা করেই খেলেছি। বয়স বাড়লে খুব বেশি পরিকল্পনা করা যায় না। কারণ, চোটের প্রবণতা বেড়ে যায়। বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচটা হঠাৎ খেলতে পারলাম না। বিশ্বকাপে সেটাই প্রথম কোনও ম্যাচ, যেটা আমি খেলতে পারিনি। ফলে কত দিন খেলব, বলা সম্ভব নয়। নিজেও জানি না। আপাতত সিরিজ ধরে-ধরে এগোতে চাই।
উইকেট পাওয়ার পরে ঝুলনের উচ্ছ্বাস। ফাইল ছবি
প্রশ্ন: এখনও খেলা চালিয়ে যাবেন বলছেন। অনুপ্রেরণা পান কোথা থেকে?
ঝুলন: দেশের জার্সি পরে মাঠে নামার আনন্দ, উদ্দীপনা আর কোনও কিছু থেকে পাই না। যত দিন ওই জিনিসটা থাকবে, তত দিন খেলতে পারব। যখন সেটা পাব না, জুতো তুলে রাখব।
প্রশ্ন: ভারতে ছেলেদের ক্রিকেটে বোলিংয়ের ছবিটা পুরো বদলে গিয়েছে। আগে ভারত যেখানে স্পিননির্ভর ছিল, এখন অনেকটাই পেসনির্ভর। আপনাদের ক্রিকেটে কি এই ছবিটা বদলেছে?
ঝুলন: না বদলায়নি। ছবিটা বদলাতে হবে। আমরা এখনও স্পিননির্ভর। এখনও দু’জন মিডিয়াম পেসারে খেলি। তিন নম্বর পেসার খেললেও সে নিয়মিত ১০ ওভার বল করে না। তিন জন স্পিনার থাকে। তার সঙ্গে হরমন (হরমনপ্রীত কৌর) থাকে। পূজা (বস্ত্রকার) অলরাউন্ডার হিসেবে খেলছে। ও মিডিয়াম পেস করে। কিন্তু আমাদের পেস বোলিং বিভাগকে আরও সুন্দর করে গোছাতে হবে। ভারতে অনেক মেয়ে জোরে বল করে। তাদের তৈরি করতে হবে। উপমহাদেশের বাইরে তো পেস বোলিংই ভরসা। এখন পাটা উইকেটে খেলা হয়। সেখানে ফাস্ট বোলার দরকার।
প্রশ্ন: টি২০ কি ক্রিকেটে আদৌ সাহায্য করছে?
ঝুলন: জনপ্রিয়তা বাড়ানোর ক্ষেত্রে তো অবশ্যই সাহায্য করছে। টি২০-র জন্যই তো এই প্রজন্ম ক্রিকেটে আসছে। খেলার উন্নতি হয়েছে। আমরা যখন খেলা শুরু করি, তখন ২৫০ রান মানেই বিশাল ব্যাপার। এখন ৩০০ রানও নিরাপদ নয়। এই বিবর্তন তো টি২০-র জন্যই। এখন টেস্টে দিনে ৩৫০ রান হচ্ছে, আগে ২৫০-র বেশি রান হত না।
প্রশ্ন: অলিম্পিক্সে কি ক্রিকেট থাকা উচিত?
ঝুলন: অবশ্যই। কমনওয়েলথ গেমসে এ বার ক্রিকেটটা দারুণ জমবে। অনেক দেশ জানেই না ক্রিকেট কী। অলিম্পিক্স যেহেতু খেলাধুলোর একটা বিশ্বব্যাপী মঞ্চ, সেখানে ক্রিকেট থাকলে সেই দেশগুলো জানবে এই খেলাটা আসলে কী। ক্রিকেটের উন্নতি হবে। ফুটবলের যেমন গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বজুড়ে, ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও সেটা হবে।
প্রশ্ন: সিএবি বাংলার ক্রিকেটের উন্নতির জন্য কিছু করছে? ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডই বা কী করছে?
ঝুলন: করছে তো অনেক কিছুই। গত চার-পাঁচ বছর ধরে মেয়েদের ক্রিকেটের উন্নতির জন্য আলাদা করে কাজ হচ্ছে বাংলায়। ঘরোয়া প্রতিযোগিতাগুলোয় বাংলা ভাল খেলছে। আরও উন্নতি করতে হবে। বিশেষ করে জেলার ক্রিকেটে আরও উন্নতি করতে হবে। বোর্ডও অনেক কিছু করছে। গত কয়েক বছরে মহিলা ক্রিকেটের ছবিটা অবশ্যই বদলেছে। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আরও বেশি করে করতে হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রতিযোগিতা আরও বাড়াতে হবে।
প্রশ্ন: মিতালি আর আপনি হয়তো প্রায় এক সঙ্গে খেলা ছাড়বেন। মিতালির পরে অধিনায়ক হিসেবে আপনি কাকে দেখছেন?
ঝুলন: এটা আমার পক্ষে বলা উচিত হবে না। বিরাট কোহলী কি বলতে পারবে রোহিত শর্মার পরে কার অধিনায়ক হওয়া উচিত?
প্রশ্ন: ভারতীয় দলে যখন খেলেন, সেখানে ফিজিয়ো, ফিটনেস ট্রেনারদের পান। ব্যক্তিগত ভাবে আপনার ট্রেনার আছে?
ঝুলন: অবশ্যই। সিএবি-র ট্রেনারদের সঙ্গে কাজ করি। এনসিএ-তে যাই দরকার পড়লে।
প্রশ্ন: যখন খেলেন, তখন কী খান? যখন খেলা থাকে না, তখনই বা কীরকম ডায়েট মেনে চলেন?
ঝুলন: খেলা থাক বা না-থাক, সারা বছর মোটামুটি একই রকম ডায়েট মেনে চলি। তবে মাঝে মাঝে নিয়ম যে ভাঙি না, তা নয়। বাঙালি তো। মিষ্টি খেতে ভালবাসে বাঙালি। ফিশ ফ্রাই কি পুরোপুরি ছাড়া যায়? রবিবার সকালে জলখাবারে লুচি-তরকারি খাওয়ার মজাটাই আলাদা। শীতকালে গুড়ের সন্দেশ যে খাবে না, সে বুঝবেই না এটা কী জিনিস। আমি লোভী মানুষ তো। তাই ১৫-২০ দিন পরে পরে একটু ভাল-মন্দ কিছু খেয়ে নিই। তবে সেটা বুঝে-শুনে।
ভারতকে বহু ম্যাচ জেতানো ঝুলন। ফাইল ছবি
প্রশ্ন: শেষ বার লুচি-তরকারি কবে খেয়েছেন?
ঝুলন: বিশ্বকাপ থেকে ফিরেই। শুধু লুচি নয়, নিউজিল্যান্ড থেকে ফিরে এক সপ্তাহ এন্তার আজেবাজে খেয়ে গিয়েছি। কিন্তু সাত-আট দিন পরে মনে হল, এ বার আর নয়। তখন লোভ সংবরণ করি।
প্রশ্ন: পারেন কী করে? অসুবিধে হয় না?
ঝুলন: কঠিন। অসুবিধে হয় তো। কিন্তু ওই যে বললাম, দেশের হয়ে খেলার খিদে। সেটা তাড়িয়ে নিয়ে যায়।
প্রশ্ন: ঝুলন গোস্বামী কলকাতায় থাকলে বাজারে গিয়ে মাছের দর করেন?
ঝুলন: নাহ্। অনেক আগে যেতাম। এখন বাজারে গিয়ে মাছের কানকো টিপে দেখতে দেখলে লোক জড়ো হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: রান্না করতে পারেন?
ঝুলন: টুকটাক। তেমন ভাল কিছু পারি না। খুব একটা আগ্রহ নেই রান্নায়।
প্রশ্ন: ক্রিকেটে ফিরি। আপনাদের ইয়ো ইয়ো টেস্ট হয়?
ঝুলন: ছেলেদের যা যা হয়, আমাদেরও তার সবই হয়। বাংলার মহিলা ক্রিকেটেও ইয়ো ইয়ো টেস্ট হয়। অবশ্যই আমাদের উত্তীর্ণ হতে গেলে যে নম্বরটা দরকার, সেটা ছেলেদের থেকে কম। এটা নতুন কিছু নয়। চোট পেলেই ইয়ো ইয়ো টেস্ট দিয়ে পাস করতে হয়। শুরুতে ব্লিপ টেস্ট ছিল। ২০১০ সাল থেকে ইয়ো ইয়ো টেস্ট এসেছে। ভারতীয় দলে এখন এটা বাধ্যতামূলক হয়ে গিয়েছে। জন রাইট, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সময় থেকেই ভারতীয় ক্রিকেটের ফিটনেসে একটা বিবর্তন এসেছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা অনেক পরে হয়েছে। আরও বদল হবে।
প্রশ্ন: লাল, সাদার পর এখন গোলাপি বলের ক্রিকেট চলে এসেছে। আপনার কোনটা পছন্দ?
ঝুলন: সাদা জামা, লাল বলের ক্রিকেট— মজাই আলাদা। পরিস্থিতি অনুযায়ী বদলাতে হয় নিজেকে। খুব ক্লান্ত, অথচ জুটি ভাঙতে হবে। বল সুইং করছে না, মাথা খাটিয়ে বল করতে হবে। এটা সম্পূর্ণ আলাদা চ্যালেঞ্জ।
প্রশ্ন: কিন্তু গোলাপি বলের ক্রিকেটই ভবিষ্যৎ নয়?
ঝুলন: হয়তো। এখনও পর্যন্ত যা দেখছি, তাতে সেটাই মনে হয়। বাণিজ্যিক কারণে হয়ত গোলাপি বলের ক্রিকেটই ভবিষ্যৎ।
প্রশ্ন: খেলতে গিয়ে অসুবিধে হয় না?
ঝুলন: অসুবিধে বলতে ওই সূর্যাস্তের সময়টায়। তখন মানিয়ে নেওয়াটা একটু কঠিন। বাকিটা বেশ মজার।
প্রশ্ন: বলছিলেন, আগে ২৫০ রান হত। এখন দিনে ৩৫০-৪০০ রান উঠে যাচ্ছে। ক্রিকেটটা শুধু ব্যাটারদের খেলা হয়ে যাচ্ছে না?
ঝুলন: বাণিজ্যিক কারণের কথা তো আগেই বললাম। বোলার পাঁচ উইকেট নিচ্ছে, এটা এখন ক’জন লোক দেখতে যাচ্ছে? এখন তো সবাই সেঞ্চুরি দেখতে যাচ্ছে। এখন কি আর পাঁচটা স্লিপ রেখে বোলিং হয়? তার উপর বোলারদের উপর নানা বিধিনিষেধ।
প্রশ্ন: বোলার হিসাবে কষ্ট হয় না?
ঝুলন: কষ্ট কেন হবে? বোলাররাই তো খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করে। বোলারদেরই তো পরিকল্পনা করতে হচ্ছে। ব্যাটারদেরও করতে হয়। কিন্তু বোলারদের চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশি।
ভারতীয় দলের অনুশীলনে ঝুলন। ফাইল ছবি
প্রশ্ন: তিনটে প্রজন্মকে চোখের সামনে খেলতে দেখেছেন। তাদের সঙ্গে খেলেছেন। তফাৎ কী?
ঝুলন: এখন পাওয়ার ক্রিকেট চলে এসেছে। ঝুঁকি নিতে এই প্রজন্ম ভয় পায় না। শেফালি বর্মা ৯৬ রানে ব্যাট করার সময় ছয় মারতে গিয়ে আউট হয়েছে। ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এটা কী করলি? বলেছিল, দিদি পরের ম্যাচে সেঞ্চুরি করে দেব। আমরা যখন শুরুতে খেলেছি, ৯০-এর ঘরে ঢুকে গেলেই বলা হত, এ বার একটু ধরে খেলতে। এখনকার ক্রিকেটারদের মধ্যে এসবের কোনও ব্যাপারই নেই। ফিল্ডিংয়ের মান অনেক উন্নত হয়েছে। খেলাটাই এখন অনেক দ্রুত গতির হয়ে গিয়েছে। ক্রিকেটাররা এখন অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। আরও বদল হবে।
প্রশ্ন: আপনাদের আইপিএল শুরু হব-হব করছে। এটা কি হওয়া উচিত?
ঝুলন: ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, অবশ্যই হওয়া উচিত। আইপিএলের মতো প্রতিযোগিতা মেয়েদের ক্রিকেটে হলে অনেক ক্রিকেটার উঠবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে কত ভাল মেয়ে আছে, যারা সুযোগের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। উপরের স্তরে সুযোগ পাচ্ছে না। মেয়েদের ক্রিকেটে এখন উপরের স্তর মানেই দেশের হয়ে খেলা। তার আগে যদি আইপিএল থাকত, তা হলে আমাদেরও উমরান মালিক তৈরি হত। প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলে সে নিজেকে তৈরি করে নিতে পারত। বড় স্টেডিয়ামে দর্শকদের সামনে খেলা, তারকাদের সঙ্গে সাজঘরে কাটানো— ফলে চাপটা কাটিয়েই জাতীয় দলে যোগ দিত। আইপিএলে খেলার ফলে ডেল স্টেন, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, বিরাট কোহলীদের থেকে পরামর্শ পাচ্ছে। আমাদের সেটা হচ্ছে না। অনেক প্রতিভাকে আমরা হারাচ্ছি। এখন ভারতীয় দলে নতুন কেউ সুযোগ পেলে, তার তৈরি হতেই এক বছর লেগে যাচ্ছে। আইপিএল হলে সে হয়ত তৈরি হয়েই জাতীয় দলে যোগ দিতে পারবে। বড় জোর একটা-দুটো সিরিজ লাগবে থিতু হতে।
প্রশ্ন: এখন বিশ্ব জুড়ে পুরুষ এবং মহিলা খেলোয়াড়দের সমান বেতনের দাবি উঠছে। কোথাও কোথাও সেটা চালুও হয়ে গিয়েছে। আপনারাও কি সেটা চাইবেন?
ঝুলন: অবশ্যই আজকের দিনে এটা একটা বড় ইস্যু। আমি এখনই এটা নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাইছি না। আমাদের অনেক উপরে উঠতে হবে, বিশ্বকাপ জিততে হবে। মেয়েদের আইপিএল চালু করতে হবে। টাকা বাড়ানোর থেকেও বেশি করে চাইব সম্মান। সেটা যেন থাকে।
প্রশ্ন: বায়োপিক শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
ঝুলন: খুব ভাল। চুক্তির কারণে এখনই এটা নিয়ে এর বেশি কিছু বলতে চাই না। এটুকু বলতে পারি, আমিও সাধারণ মানুষের মতো অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছি এই ছবি নিয়ে। আশা করি আগামী প্রজন্ম এই ছবি দেখে অনুপ্রাণিত হবে। ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কোভিডের জন্য অনেক ছেলেমেয়ে খেলাধুলো ভুলে গিয়েছে। তাদের কাছে খেলা মানে মোবাইল গেম। সেখান থেকে যাতে তাদের ফিরিয়ে আবার মাঠমুখো করা যায়। চাই এই ছবিটা সেই কাজটা করুক। শুধু আমার বায়োপিক বলে বলছি না, এখন খেলাধুলো নিয়ে অনেক ছবি হচ্ছে। এটা ভাল বিষয়। খেলা সমাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। সব সময় চাই, খেলার উন্নতি হোক।
প্রশ্ন: কবে মুক্তি পেতে পারে ছবি?
ঝুলন: হয়ত এই বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুতে।
প্রশ্ন: খেলা ছাড়ার পরেও কি ক্রিকেটের সঙ্গেই থাকবেন?
ঝুলন: মনে হয় না ক্রিকেট ছেড়ে অন্য কিছু নিয়ে থাকতে পারব। তবে কী ভাবে থাকব, জানি না। কারণ, সেটা আমার হাতে নেই। চাইব যেন ক্রিকেটের মধ্যে থাকি। কারণ, আমি আর কিছু জানি না। পারি না। বুঝি না।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।