আফ্রিদি ছিটকে দিলেন লোকেশ রাহুলের স্টাম্প। —ফাইল চিত্র
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১। পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার শাহিন আফ্রিদি প্রথম ওভারেই ভারতীয় দলের শিরদাঁড়ায় ঠান্ডা স্রোত বইয়ে দিলেন। রোহিত শর্মা শূন্য রানে ফিরে গেলেন বলের গতি বুঝতে না পেরে। পরের ওভারে আফ্রিদি ছিটকে দিলেন লোকেশ রাহুলের স্টাম্প। প্রথম তিন ব্যাটারের মধ্যে এক মাত্র রান পেলেন বিরাট কোহলী। কিন্তু তিনিও উইকেট দিলেন আফ্রিদিকেই। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক মহম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়েছিলেন বিরাট।
শুধু ওই একটা ম্যাচ নয়, বাঁহাতি পেসারদের বিরুদ্ধে খেলতে নামলে এই দৃশ্যই এখন পরিচিত ভারতীয় সমর্থকদের কাছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সদ্য শেষ হওয়া সাদা বলের সিরিজে রিচি টপলে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ভারত এখনও এই বাঁহাতি পেসার নামক ভাইরাসের কোনও টিকা খুঁজে পায়নি। লর্ডসে দ্বিতীয় এক দিনের ম্যাচে টপলে একাই নেন ছ’উইকেট। প্রথম ১০ ওভারের মধ্যেই ফিরে যান রোহিত শর্মা এবং শিখর ধবন। ঘাতক বাঁহাতি টপলে। সূর্যকুমার যাদব বাইরের বল স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড হন। ম্যাঞ্চেস্টারে শেষ এক দিনের ম্যাচে টপলে ফিরিয়ে দেন রোহিত, শিখর এবং বিরাটকে। বাঁহাতি ব্যাটার শিখরকে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে তুলে নেন টপলে। রোহিত এবং বিরাট আউট হন লেংথ বলে।
টপলের বিরুদ্ধে ভারতীয় ব্যাটারদের শোচনীয় অবস্থা দেখে নাসির হুসেন বলেন, “বাঁহাতি পেসারদের বিরুদ্ধে ওদের আরেকটু ভাল খেলতে হবে। ইতিহাস বলছে শাহিন আফ্রিদি ওদের দুবাইতে উড়িয়ে দিয়েছিল। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ভারতকে একাই শেষ করে দিয়েছিল মহম্মদ আমির। এ বার রিচি টপলে ওদের বিপদে ফেলল।”
লর্ডসে দ্বিতীয় এক দিনের ম্যাচে টপলে একাই নেন ছ’উইকেট। —ফাইল চিত্র
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওবেদ ম্যাককয়ও দেখালেন ভারতীয় দলের ব্যাটারদের বাঁহাতি পেসারদের নিয়ে এখনও সমস্যা কাটেনি। সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “এই সমস্যা দ্রুত কাটাতে হবে। রাহুল দ্রাবিড়, পরেশ মাম্ব্রেদের উচিত ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে বাঁহাতি পেসারদের এনে নেটে বল করানো। ভারতীয় ব্যাটারদের বাঁহাতি পেসারদের বিরুদ্ধে খেলতে হবে, নইলে উন্নতি করা মুশকিল। আধা করছি দ্রুত এই সমস্যা কেটে যাবে।” বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়কের মতে বাঁহাতি পেসারদের বিরুদ্ধে যে কোনও ব্যাটারই সমস্যায় পড়েন। ভারতীয় ব্যাটাররাও যে বার বার পড়ছেন তা দেখাই যাচ্ছে।
সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সামনে ফের শাহিন আফ্রিদি। এখন থেকেই ভারতীয় সমর্থকদের ঘুম উড়তে শুরু করেছেন। ম্যাককয়রাই যদি কাঁপুনি ধরিয়ে দেন তা হলে বিশ্বকাপে ট্রেন্ট বোল্ট, আফ্রিদি, মিচেল স্টার্করা কী করতে পারেন তা ভেবেই শিউরে উঠছেন অনেকে। দেবাং গাঁধী যদিও এতটা চিন্তিত নন। তিনি বললেন, “বিশ্বকাপের এখনও অনেকগুলো ম্যাচ বাকি। রোহিত, (রাহুল) দ্রাবিড়রা নিশ্চয়ই এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার ওষুধ বার করে ফেলবে। ভারতীয় দলে বাঁহাতে থ্রোডাউন দেওয়ার লোকও রয়েছে।”
বাঁহাতি পেসারদের বিরুদ্ধে সমস্যা কাটানোর উপায় কী? ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক জো রুট বলেন, “আমি চেষ্টা করি মিডল স্টাম্পে দাঁড়াতে। বাঁহাতি পেসারের বিরুদ্ধে আমি ওপেন স্টান্স নেওয়ার চেষ্টা করি। ব্যাটটাকে বলের লাইনে সোজা নামানোর চেষ্টা করি।” রুটের উপদেশ ভারতীয় ব্যাটারদের সমস্যা দূর করবে কি না অজানা। কিন্তু বাঁহাতি পেসারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে যে ভারতকে বিপদে ফেলতে পারে তা স্পষ্ট।