উইকেট নেওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার উৎসব। ছবি: এএফপি
দিনের শুরুতে ভারতীয় সমর্থকদের নজর ছিল চেতেশ্বর পুজারা এবং অজিঙ্ক রহাণের দিকে। তাঁদের অভিজ্ঞ ব্যাটিং শুরুটা করে দিলেও শেষ করতে পারল না। সেই সুযোগটাই নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শার্দূল ঠাকুরের আগ্রাসী ব্যাটিং, হনুমা বিহারীর চোয়াল চাপা লড়াইকে ভুলিয়ে দিতে চলেছেন ডিন এলগার। ভারতের থেকে আর মাত্র ১২২ রান পিছিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। হাতে রয়েছে আট উইকেট, দুটো দিন। এমন অবস্থায় ব্যাটিং দলেরই যে পাল্লা ভারী তা বলাই যায়। তবে ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, সেখানে চতুর্থ দিনের সকালে বুমরা, শামিরা যে টেস্ট নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে দেবেন না তা স্পষ্ট করে বলা যাবে না।
কিন্তু সকালে যে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের সহজে মাঠের বাইরে পাঠাচ্ছিলেন পুজারা, রহাণেরা, তাঁরাই হঠাৎ একটা জল বিরতির পর পাল্টে যেতে লাগল সব কিছু। পুজারার রানের গতি অবাক করছিল ধারাভাষ্যকারদের। ৮৬ বলে ৫৩ রান করেন ভারতের তিন নম্বর ব্যাটার। মেরেছেন ১০টি চার, স্ট্রাইক রেট ৬১.৬২। পুজারা কবে এরকম ইনিংস খেলেছেন তা মনে করতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে বইকি। রহাণেও দ্রুত রান তোলার দিকেই নজর দিয়েছিলেন। একটি ছয় এবং আটটি চার-সহ ৫৮ রান করেন তিনি। কিন্তু তার পরেই হঠাৎ ছন্দপতন। প্রায় পর পর ফিরে গেলেন দু’জনে। সুনীল গাওস্কর বলছিলেন, ‘‘সকালবেলা ভারী রোলার চালানোর ফলে পিচ বসে ছিল। বোলারদের সেরকম ভয়ঙ্কর হতে দিচ্ছিল না। ঘণ্টাখানেক পর পিচ খুলতে শুরু করল। তাতেই বিপদে পড়লেন রহাণে, পুজারা।’’
রহাণে-পুজারা ফেরার পর দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল ঋষভ পন্থ আর হনুমা বিহারীর। কিন্তু যে সময়টা ধরে খেলার কথা ছিল, সেই সময়ই অদ্ভুত কাণ্ড করলেন পন্থ। পুজারাদের ফিরিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা কাগিসো রাবাডাকে ক্রিজ ছেড়ে এগিয়ে এসে খেলতে গেলেন তরুণ উইকেটরক্ষক। ব্যাটে খোঁচা লেগে বল চলে গেল দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটরক্ষকের হাতে। গাওস্করের কথায়, বাচ্চারাও ওই ভাবে আউট হয় না। সত্যিই তো, আন্তর্জাতিক মঞ্চে এমন শট ক্ষমার অযোগ্য। ধারাভাষ্য দিতে দিতে ক্রুদ্ধ গাওস্কর বলেন, ‘‘কোনও বোধবুদ্ধিহীন ক্রিকেটারও এই ধরনের শটকে নিজের স্বাভাবিক খেলা বলে পরিচয় দিতে পারে না।’’
পন্থের পর ফিরলেন অশ্বিনও। লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে ফেললেন তিনি। প্রথম ইনিংসের মতো ব্যাট হাতে ভারতের ভরসা হয়ে উঠতে পারলেন না অভিজ্ঞ স্পিনার। তবে সেই দায়িত্বটাই কাঁধে তুলে নিলেন শার্দূল ঠাকুর। ২৪ বলে ২৮ রান করলেন তিনি। এই টেস্টটা যেন তাঁরই। বল হাতে সাত উইকেট নেওয়ার পর এমন একটা আগ্রাসী ইনিংস। ভারতকে লড়াইয়ের মঞ্চটা দিলেন শার্দূল।
লাল বলের খেলা সত্যিই বড় মজার। সেই জন্যেই বোধ হয় আইপিএল-এর যুগেও জয়দেব উনাদকাটরা লাল চেরিটা হাতে তুলে নেওয়ার জন্য ছটফট করেন। শার্দূলের আগ্রাসী ইনিংসের পরেই শুরু হল হনুমা বিহারীর চোয়াল চাপা লড়াই। শামি, বুমরা, সিরাজদের নিয়ে তিল তিল করে গড়তে লাগলেন ভারতের ইনিংস। খুব গুরুত্বপূর্ণ ৪০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেললেন হনুমা। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের গোলাগুলি সামলাতে লাগলেন। সঙ্গী ছিলেন বুমরা। জানসেনের বাউন্সার কাঁধে লাগলেও ঝেড়ে ফেললেন তা। সব আঘাত উড়িয়ে দিতে চাইলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে ২৪০ রানের লক্ষ্য রাখলেন তাঁরা।
ভারতীয় সমর্থকদের আশা ছিল বল হাতে দিনের শেষবেলায় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের চিন মিউজিক শোনাবেন বুমরা, শামিরা। কিন্তু প্রথম কিছু ওভার সহজেই খেলতে থাকলেন ডিন এলগার এবং এইডেন মার্করাম। নতুন অধিনায়ক রাহুল এমন সময় বেশি দেরি না করে শার্দূলের হাতেই বল তুলে দিলেন। আগের ইনিংসে সাত উইকেট নেওয়া শার্দূলও হতাশ করেননি অধিনায়ককে। মার্করামকে ফিরিয়ে দেন তিনি। ৪৭ রানের মাথায় প্রথম উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
মার্করাম ফিরলেও এলগার হার মানতে রাজি নন। কিগান পিটারসেনকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করতে লাগলেন তিনি। বুমরাদের বল হেলমেটে লাগল, চোয়ালে লাগল, কাঁধে লাগল। কিন্তু এলগার লড়াই চালিয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গেলেন। দিনের শেষে পিটারসেন ফিরে গেলেও এলগার রইলেন। দিনের শেষ বলটা হতেই দ্রুত পায়ে মাঠ ছাড়লেন। তাঁর চোখে মুখে দাপট। বিপক্ষের অধিনায়ক বুঝিয়ে দিলেন আজকের মতো কাজ শেষ বৃহস্পতিবার নতুন লড়াইয়ের জন্য তৈরি হতে হবে। এখনও যে ১২২ রান বাকি। শামি, অশ্বিনরা সেই রান খুব সহজে যে তুলতে দেবেন না।