উসমান খোয়াজা। ছবি: টুইটার।
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার উসমান খোয়াজার বিরুদ্ধে আরও কড়া হল আইসিসি। জানিয়ে দিল, ব্যাট বা জুতোয় শান্তির প্রতীক হিসেবে কোনও চিহ্ন লাগিয়ে খেলতে নামতে পারবেন না তিনি। ২৬ ডিসেম্বর থেকে অস্ট্রেলিয়া বনাম পাকিস্তান দ্বিতীয় টেস্ট। সেখানে কোনও ধরনের চিহ্ন বা বার্তা যাতে না দেখা যায়, তা খোয়াজাকে জানিয়ে দিয়েছে আইসিসি। তাদের এই নির্দেশের জেরে বিতর্ক বেধেছে। অনেকেরই দাবি, নিজেদের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করছে আইসিসি।
রবিবার মেলবোর্নে অনুশীলন চলাকালীন খোয়াজার ব্যাট এবং গ্লাভসে কালো ঘুঘু পাখির ছবি দেওয়া একটি স্টিকার দেখা যায়। সঙ্গে লেখা ছিল, ’০১: ইউডিএইচআর’। অর্থাৎ ‘ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অফ হিউম্যান রাইটস’-এর এক নম্বর ধারার কথাই বোঝানো হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক মানুষই স্বাধীন এবং তাঁর সমান সম্মান ও অধিকার রয়েছে।
দ্বিতীয় টেস্টে কী ভাবে বার্তা দেওয়া যায় তা নিয়ে গত কয়েক দিনে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন খোয়াজা। কিন্তু তাঁর সাম্প্রতিক উদ্যোগও খারিজ করে দিয়েছে আইসিসি। তবে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। কিন্তু আইসিসি-র সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
উল্লেখ্য, কিছু দিন আগেই কালো আর্মব্যান্ড পরার জন্য খোয়াজাকে তিরস্কৃত করেছিল আইসিসি। পাশাপাশি রাজনৈতিক বার্তারও সমালোচনা করা হয়েছিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে উসমান খোয়াজার জুতোয় লেখা ছিল, “স্বাধীনতা মানুষের অধিকার” এবং “সব মানুষের জীবনের দাম সমান।” গাজ়া হামলার কথা মাথায় রেখেই এই বার্তা দিতে চেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে সেই জুতো পরার কথা ভেবেছিলেন খোয়াজা। কিন্তু আইসিসি-র নিয়মের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। আইসিসি-র উপর ক্ষোভও উগরে দিয়েছিলেন অসি ক্রিকেটার।
আইসিসি-র নিয়ম অনুযায়ী কোনও রকম রাজনৈতিক বার্তা ক্রিকেটারেরা মাঠের মধ্যে কোথাও ব্যবহার করতে পারবেন না। খোয়াজা বলেছিলেন, “আমি কোনও রাজনৈতিক বার্তা লিখিনি। আমি কারও পক্ষ নিয়েও কথা বলিনি। আমার কাছে সকলেই সমান। মুসলিম হোক বা জিহু বা হিন্দু সকলেই এক। আমি তাঁদের হয়ে কথা বলছি, যাঁরা নিজেদের কথা বলতে পারছে না। অবলা শিশুদের কাঁদতে দেখলে আমার কষ্ট হয়। আমার দুই মেয়ের যদি এমন অবস্থা হত? জন্মের সময় তো আর কেউ ঠিক করতে পারে না, সে কোথায় জন্ম নেবে। কিন্তু যখন দেখি পৃথিবী কারও কারও থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তখন কষ্ট হয়। আইসিসি আমাকে বলেছে যে, এই জুতো পরতে পারব না। ওদের মনে হয়েছে এটা রাজনৈতিক বার্তা। আমি যদিও সেটা বিশ্বাস করি না। তবে আইসিসি যখন বলেছে, আমি সেই নির্দেশ মেনে চলব। ওই জুতো পরব না।”
কালো আর্মব্যান্ড পরার কারণ হিসেবে গত শুক্রবার সাংবাদিকদের উদ্দেশে খোয়াজা বলেছিলেন, “পার্থ টেস্টের দ্বিতীয় দিন আইসিসির তরফে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কেন কালো আর্মব্যান্ড পরেছি। সে দিনই জানিয়েছিলাম এক নিকটাত্মীয় মারা যাওয়ায় তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে এই কাজ করেছি। অন্য কোনও কথা বলিনি। আইসিসি-র নিয়মকে আমি সমীহ করি। কিন্তু এই শাস্তির বিরোধিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার মনে হয়, শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে যে ধারাবাহিকতা দেখানোর দরকার তা দেখায়নি আইসিসি। জুতো পরার কারণ অন্য ছিল মানছি। কিন্তু কালো আর্মব্যান্ড পরার জন্য যে শাস্তি হয়েছে তা হাস্যকর।”