ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শতরানের পর হরমনপ্রীত। ফাইল ছবি।
হরমনপ্রীত কউরের অনবদ্য শতরানের সুবাদে ১৯৯৯ সালের পর প্রথম বার ইংল্যান্ডের মাটিতে এক দিনের সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে ভারত। ছাত্রীর ছন্দ দেখে উচ্ছ্বসিত তাঁর কোচ ইয়াদবিন্দার সিংহ সোধি। তিনিই জানিয়েছেন ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়কের এমন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের রহস্য।
বিগ ব্যাশ খেলতে হরমনপ্রীত যখন অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন, তখন ইয়াদবিন্দারের কাছে অনুশীলন করতেন। এখন অ্যাডিলেডের বাসিন্দা ইয়াদবিন্দার বলেছেন, টেলিভিশনেই হরমনের ইনিংস দেখেছি। এই আগ্রাসী ব্যাটিংই ওর স্বাভাবিক খেলা। বিপক্ষ দলের বোলারদের উপর কতৃত্ব করতেই পছন্দ করে হরমন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওর খেলা দেখতে দেখতে ২০১৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের কথা মনে পড়ছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ম্যাচে ১৭১ রান করেছিল। খেলা দেখার পর ওকে মেসেজ করেছিলাম। লিখেছি, যখন তুমি তোমার স্বাভাবিক আগ্রাসী ব্যাটিং কর, তখন দলের সতীর্থরা, দর্শকরা সকলেই উপভোগ করে। তোমার ব্যাটিং দেখে শুধু।’’
রানের খোঁজে থাকা হরমনপ্রীত একটা সময় কিছু দিন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ইয়াদবিন্দারের কাছে। তাঁর বাড়িতেও কিছু দিন ছিলেন। ইয়াদবিন্দারের স্ত্রী, কন্যাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যের মতোই থাকতেন। সে সময়ের কথাও বলেছেন ইয়াদবিন্দার। তিনি বলেছেন, ‘‘গত বছর মহিলাদের বিগ ব্যাশ লিগ খেলতে যখন অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিল, তখন এক সপ্তাহ আমাদের অ্যাডিলেডের বাড়িতে ছিল। সে সময় বড় রান পাচ্ছিল না। প্রথমেই ওকে বলেছিলাম, স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা কর। চাপ নিও না একদম। তখন দীপাবলি ছিল। আমার পরিবারের সঙ্গেই উৎসব পালন করেছিল। সেটা ওকে ক’টা দিন ক্রিকেট থেকে দূরে ছিল। চাপ কাটাতে আমার স্ত্রী, মেয়েদের সঙ্গে অ্যাডিলেডের বাইরে ঘুরতে পাঠিয়ে ছিলাম।’’
কী সমস্যা হচ্ছিল সে সময় হরমনপ্রীতের? ইয়াদবিন্দার বলেছেন, ‘‘বড় রান পাচ্ছিল না বলে নিজের ব্যাটিং নিয়ে একটু বেশিই ভাবছিল। ব্যাট করার সময় অতিরিক্ত সতর্ক হয়ে যাচ্ছিল। আমাদের সঙ্গে এক সপ্তাহ কাটানোর পর বিগ ব্যাশে ১৮ বলে ৪০ রানের একটা ইনিংস খেলেছিল। মাঠে বসে দেখেছিলাম ইনিংসটা। নিশ্চিত হয়ে যাই, হরমন ছন্দ পেয়ে গিয়েছে।’’
গত বছর বিগ ব্যাশে দুরন্ত ছন্দে পাওয়া যায় হরমনপ্রীতকে। ১৩০.৯৬ স্ট্রাইক রেটে ৪০৬ রান করে। তিনটি অর্ধ শতরান করেছিলেন। প্রতিযোগিতায় সব থেকে বেশি ১৮টি ছক্কা মারেন। পাশাপাশি বল হাতেও ১৫টি উইকেট নিয়েছিলেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক। হরমনপ্রীতের রান না পাওয়া নিয়ে ইয়াদবিন্দার বলেছেন, ‘‘ছন্দে না থাকলে বা চাপে থাকলে ক্রিকেটাররা নতুন অনেক কিছু চেষ্টা করে। বিগ ব্যাশের আগে হরমনও তেমনই করছিল। শুধু উইকেটের স্কোয়ারের দিকে খেলে রান করার চেষ্টা করছিল। প্যাডল সুইপ করার চেষ্টা করছিল। তখন হরমনকে বলেছিলাম, এ ভাবে খেলার চেষ্টা করছ কেন? এটা তোমার স্বাভাবিক খেলা নয়। বিশ্বের খুব কম ব্যাটারের মধ্যে ও একজন যে মাঠের বাইরে বল পাঠাতে পারে। অনেক সময় প্রথম থেকেই উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে মারার চেষ্টা করছিল। প্রথম বল থেকেই চার-ছয় মারতে চাইছিল। এই বাড়তি চেষ্টাগুলোই ক্ষতি করে দিচ্ছিল।’’
ইয়াদবিন্দারের পরিবারের সঙ্গে হরমনপ্রীত। ইয়াদবিন্দারের অ্যাডিলেডের বাড়িতে। ছবি: টুইটার।
উল্লেখ্য, হরমনপ্রীতের ছোটবেলার কোচ কমলদেশ সিংহ সোধির ছেলে ইয়াদবিন্দার। সেই সূত্রেই ইয়াদবিন্দারের সঙ্গে পরিচয় হরমনপ্রীতের।