কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লের সঙ্গে সুমন দাস। ছবি: সংগৃহীত।
গুজরাতের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে বাংলার চিন্তার জায়গা ছিল বোলিং। দলের সেরা দুই পেসার নেই। কিন্তু শনিবার সেই অভাব বুঝতেই দিলেন না সুমন দাস। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমে ২ উইকেট তুলে গুজরাতকে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। ২৪ বছরের সুমন তৈরি লক্ষ্মীরতন শুক্লের হাত ধরেই।
ভারতের হয়ে খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছেন মুকেশ কুমার। অভিমন্যু ঈশ্বরন এবং আকাশ দীপ রয়েছেন ভারত এ দলে। তাঁরাও দক্ষিণ আফ্রিকায়। ফলে তিন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে বাদ দিয়েই প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে নামতে হয়েছিল বাংলাকে। কিন্তু শনিবার তাঁদের অভাব বোঝাই গেল না। গত বছর বাংলার দায়িত্ব নেন লক্ষ্মী। এর আগে বাংলার অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কোচ ছিলেন তিনি। সেই দলে ছিলেন সুমনও। লক্ষ্মীর হাতেই তৈরি হয়েছিলেন এই পেসার। মুকেশ এবং আকাশের অভাব ঢাকতে তাঁকেই নিয়ে এসেছেন লক্ষ্মী। প্রথম ম্যাচে ১০ ওভার বল করে ৪৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তিনি। ক্ষিতিজ পটেলকে বোল্ড করে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন গুজরাতকে। ২৮ রানে ২ উইকেট চলে গিয়েছিল তাদের। নেন চিরাগ গান্ধীর উইকেটও।
পর পর দু’মরসুম রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল খেলা বাংলা সাদা বলের ক্রিকেটেও দারুণ ফর্মে। কোচ লক্ষ্মী কৃতিত্ব দিলেন ক্রিকেটারদের। রাজকোট থেকে আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, “দলে প্রচুর প্রতিভাবান ক্রিকেটার। একেক দিন একেক জন খেলে দিচ্ছে। এটাই জয় এনে দিচ্ছে দলকে।” কিন্তু সেই ক্রিকেটারদের মধ্যে থেকে সেরাটা বার করে আনার কৃতিত্ব দিতেই হবে লক্ষ্মীদের। দলের সেরা ক্রিকেটারদের না পেয়েও বাংলা ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে বিপক্ষের মনে। ভারতীয় দলে খেলা অক্ষর পটেল ছিলেন গুজরাত দলে। প্রিয়ঙ্ক পঞ্চলের মতো ব্যাটার ছিলেন। কিন্তু কেউই দলকে জেতাতে পারলেন না। প্রিয়ঙ্ক শতরান করে লড়াই করার চেষ্টা করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু বাংলার দুই ব্যাটার শতরান করে দলকে জয় এনে দিলেন।
শনিবার বাংলার হয়ে শতরান করেন সুদীপ ঘরামি এবং অনুষ্টুপ মজুমদার। এই মরসুমে সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুদীপ। গত মরসুমে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে দলের বড় ভরসা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এই মরসুমে লক্ষ্মী তাঁর কাঁধে নেতৃত্বের দায়িত্ব দিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত সফল সুদীপ। শনিবার শতরান করে দলকে জেতালেন। সঙ্গে রয়েছেন অভিজ্ঞ অনুষ্টুপ। বহু যুদ্ধের নায়ক তিনি। আগের ম্যাচেই শতরান করে দলকে জিতিয়েছিলেন। শনিবার আবার শতরান করলেন। পর পর দুই ম্যাচে শতরান ৩৯ বছরের অনুষ্টুপের। এখনও দলকে টানছেন। তরুণ সুমনদের সঙ্গে অভিজ্ঞ অনুষ্টুপদের মিশেলই ভরসা বাংলার। আর সেই মিশ্রণটাই নিপুণ ভাবে তৈরি করছেন এক সময় অধিনায়ক হিসাবে বাংলাকে বহু ম্যাচ জেতানো লক্ষ্মী। তিনি বলেন, “অনূর্ধ্ব-২৩ দল থেকে সুমন, মহম্মদ কইফদের দেখছি। তরুণদের সঙ্গে রুকুর (বাংলার সাজঘরে এই নামেই পরিচিত অনুষ্টুপ) মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার রয়েছে। গোটা দল ভাল খেলছে।”
গুজরাতকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে হরিয়ানার সামনে বাংলা। লক্ষ্মী জানেন এখনও অনেকটা কাজ বাকি। বাংলাকে ট্রফি জিততে হলে পরের তিনটি ম্যাচই জিততে হবে। তাই লক্ষ্মী বললেন, “এটা আনন্দ করার সময় নয়। এখনও অনেক ম্যাচ বাকি। প্রতিটা ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাই। পরের ম্যাচ হরিয়ানার বিরুদ্ধে। এখন লক্ষ্য শুধু ওদের হারানো।”