রোহিত শর্মা। আরও একটি টেস্ট হারতে হল ভারত অধিনায়ককে। ছবি: এএফপি।
যশস্বী জয়সওয়ালকে দেখেও শিখতে পারলেন না রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা। কিছুটা শিখেছিলেন ঋষভ পন্থ। একটা সময় দেখে মনে হচ্ছিল, ম্যাচ বাঁচিয়ে দেবে ভারত। কিন্তু চা বিরতির পরে ধৈর্য হারালেন পন্থ। অস্ট্রেলিয়ার ফাঁদে পা দিয়ে উইকেট দিয়ে এলেন তিনি। সেই উইকেটই অস্ট্রেলিয়ার সামনে সুযোগ তৈরি করে দিল। দু’হাতে সেই সুযোগ কাজে লাগালেন প্যাট কামিন্সেরা। জলে গেল যশস্বীর লড়াই। চা বিরতির পর ভারতের সাত উইকেট পড়ল। ১৩ ওভারের খেলা বাকি থাকতে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১৮৪ রানে হেরে সিরিজ়ে পিছিয়ে পড়ল ভারত। সিডনিতে সিরিজ় বাঁচানোর লড়াইয়ে নামতে হবে রোহিত শর্মাদের।
ভুল শট খেলে আবার আউট রোহিত
দ্বিতীয় ইনিংসে কিছুটা হলেও ভাল দেখাচ্ছিল রোহিতকে। অফ স্টাম্পের বাইরের বল ছাড়ছিলেন। ডিফেন্স করার সময় পা নড়ছিল। তাড়াহুড়ো করছিলেন না। শুরুতে যশস্বীর থেকে রোহিতকে দেখে বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল। কিন্তু পুরনো সমস্যা মিটল না তাঁর। প্যাট কামিন্সের একটি বল মিড অনে খেলতে গেলেন। কামিন্স বল করেছিলেন অফ স্টাম্পে। তার ফলে বল রোহিতের ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে গেল। সেখানে ভাল ক্যাচ ধরলেন মিচেল মার্শ। ৪০ বলে ৯ রান করে ফিরলেন রোহিত। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকে রোহিতের ভুল শট খেলার পরিমাণ অনেক বেড়ে গিয়েছে। সেটাই আরও এক বার দেখা গেল মেলবোর্নে।
জায়গা বদলে ফর্ম হারিয়েছেন রাহুল
চলতি সিরিজ়ে প্রথম তিনটি টেস্টে ওপেন করেছিলেন রাহুল। ভাল দেখাচ্ছিল তাঁকে। কিন্তু রোহিত মেলবোর্নে ওপেন করায় রাহুলকে ব্যাটিং অর্ডারে নীচে নামতে হয়। তিন নম্বরে নেমে প্রথম ইনিংসে শুরুটা ভাল করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে পারলেন না। কামিন্সের একটি বল ডিফেন্স করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিলেন। বল ধরতে ভুল করেননি উসমান খোয়াজা। পাঁচ বল খেলে শূন্য রানে ফিরলেন রাহুল।
পুরনো রোগ সারল না কোহলির
মেলবোর্ন টেস্টের আগে বিরাট কোহলি জানিয়েছিলেন, তাঁর কোথায় সমস্যা হচ্ছে সেটা তিনি জানেন। অর্থাৎ, অফ স্টাম্পের বাইরের বলে তাঁর দুর্বলতা কোহলির অজানা নয়। তার পরেও পুরনো রোগ সারল না। দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুটা সাবধানে করেছিলেন কোহলি। অফ স্টাম্পের বাইরের বল ছাড়ছিলেন। কিন্তু মধ্যাহ্নভোজের বিরতির ঠিক আগেই মিচেল স্টার্কের ষষ্ঠ স্টাম্পের একটি বল মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন কোহলি। করলেন মাত্র ৫ রান। চলতি সিরিজ়ে পেসারদের বিরুদ্ধে পাঁচ বার আউট হয়েছেন কোহলি। পাঁচ বারই অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন তিনি।
মেলবোর্নে ‘অপরিচিত’ পন্থ পা দিলেন ফাঁদে
যশস্বী বাদে দ্বিতীয় ইনিংসে যদি কোনও ব্যাটারকে ভাল দেখিয়েছে তা হলে তিনি ঋষভ পন্থ। প্রথম ইনিংসে বাজে শট খেলে আউট হয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন। তাই এই ইনিংসে হয়তো তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন যে তাড়াহুড়ো করবেন না। বল ছাড়ছিলেন। খুব কম আক্রমণাত্মক শট খেলছিলেন। দ্বিতীয় সেশনে কোনও উইকেট পড়েনি ভারতের। তার কৃতিত্ব যশস্বী ও পন্থের। ৮৮ রানের জুটি বাঁধেন তাঁরা। পন্থ ঝুঁকি নিচ্ছেন না দেখে ফাঁদ পাতে অস্ট্রেলিয়া। ট্রেভিস হেড বল করতে আসেন। পন্থকে লোভ দেখান তিনি। সেই লোভে পা দেন পন্থ। বড় শট মারতে গিয়ে ১০৪ বলে ৩০ রান করে আউট হন তিনি। পন্থ আউট হওয়ার পরেই ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং।
ব্যর্থ জাডেজা ও নীতীশ
প্রথম ইনিংসে ভারতের ইনিংস সামলেছিলেন নীতীশ। মেলবোর্নে লড়াকু শতরান করেছিলেন। তাঁর ইনিংসের প্রশংসা করেছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। যে পরিণত মানসিকতা তিনি দেখিয়েছিলেন তাতে দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর উপর ভরসা ছিল দলের। কিন্তু পারলেন না নীতীশ। নেথান লায়নের একটি বল ভুল লাইনে খেলে স্লিপে স্টিভ স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি। মাত্র ১ রান করেন নীতীশ। রান পাননি ভারতের আর এক অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাডেজাও। ২ রান করে স্কট বোলান্ডের বলে আউট হন তিনি।
সামনে থেকে নেতৃত্ব কামিন্সের
এই সিরিজ়ে রোহিতের অধিনায়কত্বের যতটা সমালোচনা হয়েছে, ঠিক ততটা প্রশংসা হয়েছে কামিন্সের নেতৃত্বের। শুধু ঠিক সময় ঠিক বোলিং পরিবর্তন নয়, নিজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করার সময় যেমন গুরুত্বপূর্ণ ৪১ রান করেছেন, তেমনই বল হাতে এক ওভারে রোহিত, রাহুলকে আউট করেছেন। ভারতের সেরা ব্যাটার যশস্বীকেও ফিরিয়েছেন তিনি। আবার হেডের হাতে বল তুলে দিয়ে পন্থের উইকেট নিয়েছেন। অধিনায়ক হিসাবে ১০-এ ১০ পাবেন কামিন্স।
২০৮ বল খেলেও ম্যাচ বাঁচাতে পারলেন না যশস্বী
লড়াই করছিলেন যশস্বী। প্রথম ইনিংসেও করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও সেই একই দৃঢ়তা দেখালেন তিনি। ইনিংসের শুরুতে একটু সমস্যা হলেও যত সময় গড়াল তত ভাল দেখাল তাঁকে। পরিস্থিতি বুঝে খেললেন। এক ওভারে জোড়া উইকেট পড়ার পরে যেমন ২২ বলে একটিও রান করেননি, আবার তেমনই লায়নকে এক ওভারে তিনটি চারও মেরেছেন। কিন্তু অপর প্রান্তে একের পর এক সঙ্গী হারাচ্ছিলেন তিনি। তার পরেও ম্যাচ বাঁচানোর চেষ্টা করেন যশস্বী। নীতীশ আউট হওয়ার পরে রানের গতি কমে গিয়েছিল। তখন শুধুই ডিফেন্স করার চেষ্টা করছিলেন। শতরানের দিকেও মন ছিল না। কিন্তু প্যাট কামিন্সের একটি লেগ সাইডের বল খেলার চেষ্টা করেন যশস্বী। আউটের আবেদন করেন কামিন্সেরা। মাঠের আম্পায়ার আউট দেননি। রিভিউ নেয় অস্ট্রেলিয়া। রিভিউতে খালি চোখে দেখে মনে হচ্ছিল, বল যশস্বীর গ্লাভসে লেগেছে। কিন্তু স্নিকোমিটারে কিছু ধরা পড়েনি। তার পরেও তৃতীয় আম্পায়ার খালি চোখের ভরসায় আউট দেন। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি ভারতীয় ব্যাটার। ফেরার সময় তর্কও করেন তিনি। ভারতীয় দর্শকেরাও এই সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি। ২০৮ বলে ৮৪ রান করেন যশস্বী। জলে গেল তাঁর লড়াই।
পারলেন না ওয়াশিংটন, আকাশ দীপেরা
অস্ট্রেলিয়ার নীচের সারির ব্যাটারেরা যে কাজ করেছিলেন, ভারতের নীচের সারির ব্যাটারেরা তা পারলেন না। দশম উইকেটে নেথান লায়ন ও স্কট বোলান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ১২০টি বল খেলেছিলেন। সেই কাজটা করতে পারলেন না ওয়াশিংটন সুন্দর, আকাশ দীপ, জসপ্রীত বুমরাহেরা। তার ফলে ১৩ ওভার বাকি থাকতে অল আউট হয়ে গেল ভারত। হেরে মাঠ ছাড়তে হল রোহিতদের।