এইগুলিই কোটি কোটি বছর আগে ছিল মঙ্গলের টলটলে জলে ভরা বিশাল হ্রদ। ছবি- ‘ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (এসা)’-র সৌজন্যে।
খুব দ্রুত হারে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এখন যেমনটা হামেশাই হয় উত্তরাখণ্ড আর হিমাচল প্রদেশে। ‘লাল গ্রহ’ মঙ্গলেও তেমনই ঘনঘন হত হড়পা বান (‘ফ্ল্যাশ ফ্লাড’)। তার জলের তোড়ে বানভাসি হয়ে যেত মঙ্গলের বড় বড় নদীগুলি আর তাদের অববাহিকা। বানের জলে ডুবে গিয়ে হারিয়ে যেত মঙ্গলের বিশাল বিশাল হ্রদগুলি। লাল গ্রহের সেই বিশেষ এলাকায় যার নাম- ‘জেজেরো ক্রেটার’।
নাসার পাঠানো সর্বশেষ রোভার ‘পারসিভের্যান্স’-এর পাঠানো বহু ছবি এই খবর দিয়েছে। জানিয়েছে, মঙ্গলের হড়পা বানগুলি হত আরও ভয়াবহ। ভয়ঙ্কর। মাইলের পর মাইল এলাকা জুড়ে। তোলপাড় হয়ে যেত মঙ্গলগ্রহের বিশাল একটি অংশ। তার পৃষ্ঠভাগের উপরের স্তর (‘মার্শিয়ান সার্ফেস’)।
মঙ্গলের সেই জেজেরো ক্রেটার। হড়পা বানের ‘পদছাপ’ যেখানে খুঁজে পেয়েছে নাসার রোভার ‘পারসিভের্যান্স’। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
সেই হড়পা বানগুলির সংখ্যা ও ভয়াবহতা বেড়ে গিয়েছিল লাল গ্রহের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে। ওই সব হড়পা বানের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় চার থেকে ২০ মাইল বা ঘণ্টায় ছয় থেকে ৩০ কিলোমিটার। হড়কা বানগুলির এই প্রচণ্ড গতিবেগই মঙ্গলের উঁচু উঁচু পাহাড়গুলি থেকে বিশাল বিশাল পাথরের চাঙড়গুলিকে নিয়ে এসে ফেলত জেজেরো ক্রেটারের বিশাল বিশাল নদীগুলির অববাহিকায়। সেই পাথরের চাঙড়গুলিই পরে ওই এলাকার হ্রদগুলিকে ভরিয়ে দেয়।
নাসার রোভার পারসিভের্যান্স গত ফেব্রুয়ারিতে পৌঁছয় জেজেরো ক্রেটারে। এখনও লাল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কি না তা জানতে, বুঝতে।
নাসার রোভার জেজেরো ক্রেটারের বিস্তীর্ণ এলাকা পর্যবেক্ষণ করে সেই সব এলাকার যে ছবি পাঠিয়েছে তা বিশ্লেষণ করে নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, হড়পা বানের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা বেড়ে গিয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৩৭০ কোটি বছর আগে। তখন মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল যথেষ্টই পুরু ছিল। তার ফলে লাল গ্রহে জলের অতলান্ত ভাণ্ডারও ছিল অটুট। কিন্তু তার পর খুব দ্রুত হারে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বায়ুমণ্ডল উবে যেতে শুরু করে মঙ্গলের। উবে যেতে শুরু করে জলও।