মিঠে সর্ষেপাতা দিয়ে মোড়া ভেটকি মাছের টুকরোগুলি মুখে লেগে থাকবে। ছবি: দেবর্ষি সরকার।
শীত যেন এসেও আসে না। তবে বছরশেষের উদ্যাপনে বাঙালি জোরকদমে মেতে উঠেছে। ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম খুললেই দেখা যাচ্ছে, দলে দলে লোক পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে কোথাও না কোথাও খেতে যাচ্ছেন। কমবয়সিরাও হইহুল্লোড় করতে শহরের বিভিন্ন ক্যাফে-রেস্তরাঁয় ভিড় করছেন। হট চকোলেট থেকে বিরিয়ানি, কোনও কিছুই বাদ যাচ্ছে না। তবে সবে বড়দিন পেরিয়েছে। বাঙালি এখনও সাহেবি কায়দায় ‘হলিডে সিজ়ন’ কাটাচ্ছে। তাই বাঙালি খাবারের গ্রিল্ড ফিশ আর চিকেন স্টেকের চাহিদা এখন বেশি। তবে দিনের শেষে কালো জিরের মাছের ঝোল না হলেও তো চলে না। সে সব কিছু মাথায় রেখেই এই মরসুমে মেনু সাজিয়েছে সিয়েনা ক্যাফে।
শীতের মরসুমে একটু হাঁসের মাংস খাওয়ার শখ অনেকেরই হয়। ছবি: দেবর্ষি সরকার।
হিন্দুস্তান পার্কের এই ক্যাফে এমনিতেই স্থানীয় শাকসব্জি দিয়ে নানা রকম বিদেশি পদ তৈরি করার জন্য বিখ্যাত। সেই খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। ক্যাফের প্রধান শেফ অরুণি মুখোপাধ্যায় এই ধরনের রান্নার ভাবনাকে যত্ন করে নাম দিয়েছেন ‘বাজার টু টেবিল’। মানে বাজারে যা পাওয়া যাবে, সেই অনুযায়ী মরসুমের মেনু তৈরি হবে, এবং গ্রাহকদের প্লেট সাজানো হবে। ঠিক যেমন বাঙালি ঘরে রোজ সকালে বাজারে গিয়ে ‘কী ভাল উঠল’-র খোঁজ পড়ে। এবং বাজারের থলে দেখে তবেই হেঁশেলে ঠিক হয়, কবে কী রান্না হবে। সেই ধারা বজায় রেখেই এই মরসুমেও তারা বিশেষ কিছু পদ রেখেছেন। যার মধ্যে অন্যতম কনফি ডাক লেগ। শীতের মরসুমে একটু হাঁসের মাংস খাওয়ার শখ অনেকেরই হয়। তবে সেই হাঁসের মাংসের সাহেবি খানাতেই যদি বাঙালি পাঁঠার লাল ঝোলের স্বাদ মেলে, তা হলে কেমন হয়? অচেনা বিদেশি সব্জির বদলে সঙ্গে মিলবে সতেঁ করা সীম, ৬ মিনিটের সেদ্ধ করা ডিম এবং শীতকালের নতুন আলু। সব মিলিয়ে মটন ডাকবাংলোর কথা মনে পড়ে যেতে পারে। তার পর রয়েছে অন্য রকম মাখা সন্দেশের মতো খুব হালকা একটি ছানার মিষ্টি পদ। সাধারণত তাতে ছানার সঙ্গে মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলের মহুয়া মেশানো হয়। তবে শীতের মরসুমে তার বদলে পড়ছে নলেন গুড়। সঙ্গে কিছু স্ট্রবেরি। মাখা সন্দেশ খেলে মুখে একটু দানা দানা ঠেকতে পারে। তবে এই ডেজ়ার্টে সে সব পাওয়া যাবে না। অনেকটাই মুসের মতো হালকা।
মুসের মতো হালকা ছানার মিষ্টিতে রয়েছে নলেন গুড় আর স্ট্রবেরি। ছবি: দেবর্ষি সরকার।
সিয়েনার নানা রকম পদ এখন লোকমুখে ঘুরে এতটাই বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে যে, অনেক নতুন ক্রেতাও এসে সেগুলির খোঁজ করেন। তবে নিত্যনতুন পদ তৈরি করতে প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই নতুন করে পরিশ্রম করে সিয়েনার হেঁশেলের গোটা টিম। যেমন রন্ধনশিল্পী কোয়েল রায় নন্দী জানালেন, তাঁদের নতুন ভেটকির পদের কথা। সর্ষে পাতা দিয়ে মোড়া ভেটকি মাছের টুকরোগুলি। তবে ঠিক সর্ষেের পাতা ব্যবহার করা হয় না। ভারতীয় সর্ষে শাক এমনিতে একটু তেতো। তাই ভিয়েতনাম থেকে আনা মিঠে সর্ষে পাতায় মোড়া হয় মাছগুলি। যাতে তেতো না লাগে কোনও ভাবেই। সঙ্গে যে ড্রেসিং ব্যবহার হয় এই পদে সেটা পুরোটাই বাঙালি কায়দায় তৈরি মাছের মুড়ো দিয়ে তেল ঝোল। সঙ্গে লাল শাক, ঢেকি শাক, পাকচয়ের ফুল (যেটা সর্ষের ফুলের মতোই) দিয়ে পাত সাজানো হয়। ফলে কালোর জিরের তেল ঝোল, মাছের তেলে রান্না করা শাক— সব স্বাদই মিলবে বিদেশি এই পদে।
লাজ়ানিয়ার মতো সনাতনী কিছু বিদেশি খাবারও রয়েছে এই মরসুমের মেনুতে। ছবি: দেবর্ষি সরকার।
কিছু সনাতনী বিদেশি খাবারও রয়েছে এই মরসুমের মেনুতে। যেমন লাজ়ানিয়া বা কিছু চেনা মিষ্টি পদ। তবে কোনও ছুটির দিনে যদি এই ক্যাফেতে ঢুঁ মারেন, তা হলে একটু নিরীক্ষামূলক পদগুলিই না হয় চেখে দেখুন।