ছবি কুনাল বর্মণ।
পূর্বানুবৃত্তি: বনমালী ও রমানাথের উপস্থিতিতে সম্ভব না হলেও, এখন বাড়িতেই রীতিমতো গানবাজনা আর মদের আসর বসিয়েছে উমানাথ। নীলমণির না ফেরার জন্য বিভাবতী দুঃখ করেন নিভাননীর কাছে। নিভাননী মেতে থাকেন উমানাথের দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে। তারা ছোট ছোট পায়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। এক দিন বাড়িতে আসার কথা শশীর দিদি কনকবালার। বাড়িতে আনন্দের পরিবেশ। হঠাৎই অবিনাশ কবিরাজের বাড়ির দিক থেকে শোনা যায় হইচই। শশিকান্ত গিয়ে শোনে, লাবণ্যকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন গুঞ্জনে মাঝে মাঝেই ভেসে আসছে শশীর নামও। তাদের যে মাঝে মাঝেই নদীর ধারে এক সঙ্গে গল্প করতে দেখা যেত।গভীর মনখারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে শশী মুখোমুখি হয় দিদির। কনকবালা ভাইকে আশ্বস্ত করে জানায়, অবিনাশ কবিরাজের ঠিক করে দেওয়া বয়স্ক পাত্র পছন্দ না হওয়ায় লাবণ্য পালিয়েছে। চিঠি লিখে কনকবালাকে সে জানিয়ে গিয়েছে সব কথা। শশিকান্ত ঠিক করে, সে এক দিন না এক দিন সে খুঁজে বার করবেই লাবণ্যকে।
আপিস ছুটি থাকলে, শশিকান্ত বেরিয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে এ দিক-সে দিক ঘুরে বেড়ায়। এক দিন নিভাননী শশিকান্তকে ডেকে বললেন, “তোর আজকাল কী হয়েছে বল তো?”
“কী আবার হবে?” শশিকান্ত এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। নিভাননী শশিকান্তর সামনে এসে তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকেছেন। বলেছেন, “আমাকে স্পষ্ট করে বল তো শশী, তোর কী হয়েছে? কোন মেয়েছেলের পাল্লায় তুই পড়েছিস?”
শশিকান্তর মুখ লজ্জায় লাল হয়েছে। কোনও রকমে বলেছে, “এ মা, এ তুমি কী বলছ পিসি!”
“দেখ শশী, আমার কাছে কিছু লুকোনোর চেষ্টা করিস না। বয়সটা আমার কম হল না। তোর মুখ দেখলেই আমি সব বুঝতে পারি। তুই তো আগে এ রকম আনমনা হয়ে থাকতিস না!” নিভাননী বলেন।
খানিক ক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে শশিকান্ত উত্তর দিয়েছে, “আমার এখন কিছুই ভাল লাগে না পিসি। কেন ভাল লাগে না, তা জানি না, তবে কোনও কাজে আর উৎসাহ পাই না।”
“এ তো ভাল কথা নয় মোটেই। তুই এক বার কবরেজকে দেখিয়ে আসিস। সেই বা কী ওষুধ দেবে কে জানে! তার বাড়ির যা অবস্থা। সোমত্ত মেয়েটা যে কোথায় গেল! বেঁচে আছে, না মরে গেছে, কে জানে...” বলতে বলতে নিভাননী তার কাজে চলে যান। শশিকান্ত পা বাড়ায় তার ঘরের দিকে।
শশিকান্ত এখন মাঝে মাঝে ময়দানে এসে বসে থাকে। বাড়ি থেকে অনেক দূরে এই জায়গাটা তার খুব প্রিয়। চার দিকে সবুজের সমারোহ। চোখ যেন জুড়িয়ে যায়। নরম ঘাসে বসে থেকে মনে হয় যেন সবুজ গালিচায় সে বসে আছে। অনতিদূরে রানি ভিক্টোরিয়ার নামে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি হয়েছে দু’-এক বছর আগে। শ্বেতপাথরের তৈরি এই স্মৃতিসৌধটির আকর্ষণে অনেকেই এখানে এসে জড়ো হন। শশিকান্তর অবশ্য এই সৌধটির প্রতি বিন্দুমাত্র আকর্ষণ নেই। সে আসে বিশাল এই ময়দানে একা একটু বসে থাকতে।
আজ অবশ্য এখানে তার বন্ধু হরপার্বতীর আসার কথা। হরপার্বতী এলে, তারা দু’জনে মিলে বৌবাজারে যাবে। সেখানে একটি শ্রাদ্ধবাসরে তারা দু’জনেই নিমন্ত্রিত। হরপার্বতী আসার অনেক আগেই শশিকান্ত চলে এসেছে এখানে। জানুয়ারি মাসের কনকনে শীতটা বেশ ভালই মালুম হচ্ছে তার। গায়ে পিরানের উপর একটা সাদা শাল জড়িয়েছে সে। এই শালটা সে সব সময় পরে না। কোনও বিশেষ অনুষ্ঠানের দিনই পরে। শালটা বেশ বড়। তার সামলাতে বেশ কষ্ট হয়।
ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে দেখে, শশিকান্ত শালটা ভাল করে গায়ে জড়িয়ে রোদ্দুরে গা এলিয়ে দিল।
একটি ছেলে পাশে এসে বসল। বয়সে তার থেকে একটু ছোটই হবে। তাকে দেখে শশিকান্ত অবাক হল। এই শীতেও তার গায়ে কোনও শীতবস্ত্র নেই। শশিকান্তর খুব ইচ্ছে করল ছেলেটির সঙ্গে আলাপ করতে। বিশেষ করে তার আগ্রহ হচ্ছিল জানতে যে, সে এই কনকনে শীতে মাত্র একটা ধুতি ও পিরান গায়ে দিয়ে কী করে শীত নিবারণ করছে।
ইতস্তত করেও ছেলেটিকে বলল শশিকান্ত, “তোমার নাম কী ভাই?”
চকিতে শশিকান্তর দিকে তাকিয়ে ছেলেটি একটু যেন রূঢ় ভাবেই উত্তর দিল, “গোপীনাথ। গোপীনাথ সাহা। আর কিছু বলবে?”
ছেলেটির এমন আচরণে আহত হল শশিকান্ত। অন্য দিকে ঘুরে বসল সে। আর কথা বলতে ইচ্ছে করল না তার সঙ্গে। তা ছাড়া সে দেখল, ছেলেটি নিজের মনে বকে চলেছে। তার চোখ দুটো কী রকম অপ্রকৃতিস্থ লাগল শশিকান্তর।
হরপার্বতী আসতে এখনও বেশ খানিকটা দেরি আছে। এই সময়টা সে একটু বই পড়ে কাটাবে ঠিক করল। বই তার সঙ্গেই থাকে। যেখানেই যায়, কাঁধে একটা ঝোলা ব্যাগ নিয়ে যায়। তাতে কিছু থাক বা না থাক, খানদুয়েক বই থাকে। আজ এনেছে বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’ ও একটি ইংরেজি বই। ‘আনন্দমঠ’ খুলে কয়েক পাতা মাত্র পড়েছে, এমন সময় পর পর কয়েকটা পটকা ফাটার শব্দে সচকিত হয়ে উঠে বসল শশিকান্ত। দেখল, আশপাশের সকলে দৌড়চ্ছে। শশিকান্ত লক্ষ করল, একটু আগে পাশে যে ছেলেটি বসেছিল, সে-ও অদৃশ্য হয়ে গেছে। সম্ভবত, সেই ছেলেটিও সকলের মতো সামনের দিকে ছুটছে। কিন্তু কেন? কেন সকলে এমন করে ছুটছে? শশিকান্ত বই বন্ধ করে তার ঝোলায় ঢুকিয়ে, গায়ের শালটা ভাল করে সামলে, ছুটতে শুরু করল। খানিকটা এগিয়েই তার কাছে বিষয়টা পরিষ্কার হল। ময়দানে এই সকালবেলাতেই সকলের চোখের সামনে এক জন সাহেব খুন হয়েছে। আততায়ীর পিছনে সকলে ধাওয়া করেছে। বোধহয় ধরেও ফেলবে। সাহেব খুন... তার মানে বিপ্লবীদের কাজ... পটকার শব্দ বলে যা সে মনে করেছিল, তা আসলে গুলির আওয়াজ। হঠাৎ তার মনে হল, সে সকলের মতো দৌড়চ্ছে কেন? তার গতি শ্লথ হল। সে ধীরপায়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলল।
একটা টমটমের সামনে অনেক লোকের ভিড়। ক্ষিপ্ত, উন্মত্ত জনতা এক যুবককে ধরে উত্তম মধ্যম দিচ্ছে। যুবকটিকে এমন ভাবে ঘিরে আছে জনতা যে, তার মুখটাই ভাল করে দেখা যাচ্ছে না। তবু, এই বিপ্লবীর মুখটা তাকে দেখতেই হবে, ভেবে শশিকান্ত ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে। যুবকের মুখ দেখে চমকে যায় সে। একটু আগে পাশে বসে থাকা সেই আধপাগলা ছেলেটি। জনতার প্রহারে সে বিধ্বস্ত। তবু সে বলার চেষ্টা করছে, “তোমরা আমাকে মেরো না, আমাকে যেতে দাও, আমি দেশের কাজ করেছি, ভাল কাজ করেছি, আমি কোনও অন্যায় করিনি...”
শশিকান্তর বিবেক বলল, তার কিছু করা উচিত। এই যুবকটিকে জনতার হাত থেকে তার বাঁচানো উচিত। শশিকান্ত মারমুখী একটি ছেলেকে বলল, “ওকে ছেড়ে দাও। সত্যি ও কোনও অন্যায় করেনি।”
শশিকান্তর কথা মারমুখী ছেলেটির কানে পৌঁছল না। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক বয়স্ক ভদ্রলোক বললেন, “অন্যায় করেনি মানে? প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করা অন্যায় নয়? আর একটু হলেই টমটমে চেপে পালাচ্ছিল। ভাগ্যিস এরা পিছু নিয়ে ধরে ফেলল, তাই...”
শশিকান্ত প্রত্যুত্তরে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল। তার হাতে একটা টান পড়ায়, বলতে পারল না। চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখল, হরপার্বতী এসে দাঁড়িয়েছে। শশিকান্তকে ভিড় থেকে বার করে সে বলল, “তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে শশী?”
শশিকান্ত অবাক হয়ে বলল, “কেন, আমার মাথা খারাপের আবার কী দেখলে?”
হরপার্বতী উত্তেজিত ভাবে বলল, “তুমি জানো, এক জন সাহেব এইমাত্র খুন হয়েছে! আমি নিজের চোখে দেখে এলাম। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে বুকটা। আমি নিশ্চিত, সাহেব হোমরাচোমরা কেউ ছিল। কারণ, বিপ্লবীদের লক্ষ্যই থাকে পুলিশ নয়তো ম্যাজিস্ট্রেট। এক্ষুনি ধরপাকড় শুরু হয়ে যাবে। আর তুমি বোকার মতো ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছ?”
শশিকান্ত হরপার্বতীর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে উত্তর দেয়, “ধরপাকড়ের কিছু নেই। খুনি জনতার হাতে ধরা পড়ে গেছে। কী আশ্চর্য দেখো, যাদের ভালর জন্য সে গুলি করে লোকটাকে খুন করল, তারাই তাকে উত্তম মধ্যম দিচ্ছে। আমার খুব ইচ্ছে করছিল ছেলেটিকে ওদের হাত থেকে রক্ষা করতে।”
“পাগল হয়েছ?” হরপার্বতী বলল, “লোকটার তো ফাঁসি হবেই, তোমাকেও পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে।”
শশিকান্ত নীরবে হরপার্বতীর সঙ্গে হেঁটে চলল। হাঁটতে হাঁটতে হরপার্বতী বলল, “তুমি এই রকম খুনের রাজনীতি পছন্দ করো শশী?”
হাঁটতে হাঁটতে ধৃত ছেলেটির মুখটি মনে পড়ছিল শশিকান্তর। কতই বা বয়স হবে? পনেরো কিংবা ষোলো। কী দরকার ছিল তার এই খুন করার? উন্মত্ত জনতার এক জনও কি বুঝবে যে, ছেলেটি তাদের ভালর জন্যই কাজটা করেছে?
হরপার্বতীর প্রশ্নে তার চিন্তার সুতোটা ছিঁড়ে গেল। বলল, “করি হর। অহিংস পথে কখনওই স্বাধীনতা আসতে পারে না। এই পথ কখনও ভারতবর্ষের রাজনৈতিক আদর্শ হতে পারে না। হ্যাঁ, আমরা অহিংস হব, কিন্তু মানবকল্যাণে যদি হিংসার আশ্রয় নিতে হয়, যদি রক্তপাত ঘটাতে হয়, আমরা দ্বিধা করব কেন?’’
হরপার্বতী চলতে চলতে মুহূর্তকাল থমকে দাঁড়াল। শশিকান্তর একটা হাত শক্ত করে ধরে বলল, “কী ব্যাপার বলো তো, বিপ্লবীদের দলে নাম লেখালে বুঝি?”
“বিপ্লবীদের দলে নাম লেখাতে সাহস লাগে। আমার সে সাহস নেই। সাহস থাকলে, রিভলভার হাতে ওই ছেলেটির জায়গায় হয়তো আমিই থাকতাম,” শশিকান্ত উত্তর দিল।
“ভাগ্যিস তোমার সেই সাহস নেই!” শশিকান্তর দিকে তাকিয়ে হাসল হরপার্বতী।
শশিকান্তর মুখে হাসি নেই। সে আবার ফিরে গেছে সেই যুবকের ভাবনায়। এত ক্ষণে নিশ্চয়ই পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে... কী বিচার হবে ছেলেটির... নিশ্চয়ই ফাঁসি... কত তরতাজা প্রাণই চলে গেল এই ক’বছরে... আরও কত যে যাবে...
“কী ভাবছ শশীকান্ত? একেবারে যে চুপ মেরে গেলে?” হরপার্বতী বলে।
“কী আর ভাবব? ভাবছিলাম ওই ছেলেটির কথা। কী নিষ্পাপ মুখটা! আমার পাশে তো বসেছিল বেশ খানিক ক্ষণ। কে ভেবেছিল, ছেলেটি বুকে এত সাহস ধরে!” শশিকান্ত বলে।
“সাহসই সব নয়, শশী। যুক্তি, বিচক্ষণতা না থাকলে, সেই সাহসের কোনও মূল্য নেই। আচ্ছা, তুমিই বলো, বিপ্লবীদের এই খুনখারাপি কি আদৌ দেশের কোনও ভাল করেছে? মাঝখান থেকে কিছু যুবক ফাঁসিকাঠে ঝুলেছে। এ রকম ভাবে হয় না শশী। এটা অসম লড়াই।”
“তা হলে কী ভাবে হয়? অহিংস পথে? সে পথেও তো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হল অনেক। কোনও লাভ হল কি দেশের? মহাত্মাজি দেশের মানুষের কাছে চাইলেন এক বছর সময় ও এক কোটি টাকা। আমি শুনেছি, এক কোটি টাকার অনেক বেশি সংগ্রহ হয়েছে, সময়ও হতে চলল চার বছর। কোনও সুফল দেখেছে কি দেশ?”
“সময় লাগবে শশী। আন্দোলনের সুফল পেতে অনেক সময় লাগবে।”
শশিকান্ত হেসে উঠল এ কথায়।
“তুমি হাসছ?” হরপার্বতী বলল।
“হাসব না?” শশিকান্ত বলল, “মহাত্মাজি ভরসা রেখেছেন ব্রিটিশ সরকারের মানবিকতার উপর। তার ধারণা, অহিংস উপায়ে আন্দোলন করলে, ব্রিটিশরা আমাদের ন্যায্য দাবি মেনে, এ দেশ থেকে পাততাড়ি গোটাবে। কোন ব্রিটিশ? যারা এ দেশের যুবশক্তিকে বিশ্বযুদ্ধে নিজেদের কাজে লাগায়? জালিয়ানওয়ালা বাগে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায়?”
“তোমার কথা ঠিক নয়, শশী। মহাত্মা গান্ধী মোটেই মনে করেন না যে, ব্রিটিশরা মানবিক। তা হলে তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতেন না। তাঁর পথ ভিন্ন। এটা একটা দর্শন। এই পথ কঠিন। সকলের পক্ষে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তুমি দেখো, এক দিন এই দর্শনের জন্য সারা পৃথিবী মহাত্মাজিকে মনে রাখবে। যাই হোক, আমরা বোধহয় কাছাকাছি চলে এসেছি। চিনতে পারছ জায়গাটা?”
“পারছি তো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধপাঠ শুনে এই অঞ্চলেই তো এসেছিলাম, তাই না?” বলে হরপার্বতীর দিকে তাকাল শশিকান্ত।
হরপার্বতী মাথা নেড়ে সায় দিল। বলল, “ওই দেখো, সেই বাড়িটা। চেরি প্রেস লিমিটেড। এই বাড়িটাতেই ‘বিজলী’ পত্রিকার অফিসে আমরা এসেছিলাম সে দিন।”
“আর এক দিন আসবে এখানে? আমার উপেনবাবুর সঙ্গে একটু দরকার আছে...” শশিকান্ত বলল বন্ধুকে।
“নিশ্চয়ই আসব। কিন্তু কেন বলো তো? কবিতা-টবিতা লিখছ নাকি?” হরপার্বতী অবাক হয়েপ্রশ্ন করল।
“না, না, সে রকম কিছু নয়। আসলে ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে।”
“তা কথা বলার লোক এখানে আরও অনেক পেয়ে যাবে। সুভাষচন্দ্রকে তো সে দিন দেখলে, এখন শরৎ চাটুজ্জেও নিয়মিত আসেন। ভাগ্য ভাল থাকলে তাঁর সঙ্গেও দেখা হয়ে যেতে পারে। যাক, আমরা বোধহয় হরিমোহনের বাড়ির সামনে এসে পড়েছি। ওই দেখো সে দাঁড়িয়ে আছে।”
ডাকার আগেই হরিমোহন ওদের দু’জনকে দেখতে পেল। হরিমোহন দু’জনেরই বন্ধু। আজ তার ঠাকুরদার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে এই দুই বন্ধুকে সে নেমন্তন্ন করেছে। শশিকান্ত ও হরপার্বতীকে দেখে হরিমোহন এগিয়ে এল ও তাদের বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেল।
শ্রাদ্ধবাসরে অনেক লোকের সমাগম। হরিমোহনের বাবা বসেছেন কাজে। আত্মীয়-স্বজন, অতিথি-অভ্যাগতরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন নানা দিকে। শশিকান্ত ও হরপার্বতী একটি সবুজ রঙের গালিচায় অনেকের সঙ্গে বসে পড়ল। শশিকান্তর কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছিল বসে থাকতে। আজ তার একার নেমন্তন্ন থাকলে, সে কখনওই আসত না। নেহাত, হরপার্বতীও নিমন্ত্রিত, তাই এসেছে। তা ছাড়া, শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে আসতে তার ভালও লাগে না।
ক্রমশ