Budget 2025

আশাভঙ্গ

যে ভঙ্গিতে ভারতে আর্থিক বৈষম্য বেড়েছে, তাতে স্পষ্ট যে, এই সরকারের আমলে উচ্চবিত্তদের স্বার্থরক্ষা নিয়ে উদ্বেগের বিন্দুমাত্র কারণ নেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:২০
Share:

আর্থিক সামর্থ্য অনুসারে গোটা দেশকে মোটামুটি তিনটি ভাগে ভেঙে ফেলা যায়— প্রথম ভাগটি সংখ্যায় ক্ষুদ্র, ক্ষমতায় প্রবল উচ্চবিত্ত শ্রেণি; দ্বিতীয় ভাগে ঢুকে পড়েন দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ, যাঁরা দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত; এবং এই দুইয়ের মধ্যবর্তী তৃতীয় ভাগ, বিভিন্ন মাপের মধ্যবিত্ত। বাজেট এলে সরকারকে ভাবতে হয় যে, কোন ভাগের জন্য কী করণীয়। অর্থাৎ, কী করলে পরের বার ভোট চাইতে যেতে অসুবিধা হবে না। দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্তকে সন্তুষ্ট করার পন্থাটি এখন ভারতীয় রাজনীতিতে সর্বজনীন— প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তর। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানটি দ্বৈত— বিরোধীরা গরিব মানুষের জন্য আর্থিক সুবিধার ব্যবস্থা করলে তিনি তাকে ‘রেউড়ি’ বলেন, কিন্তু তাঁর দল ‘লাডলী বহনা’ প্রকল্প তৈরি করলে আপত্তি করেন না। অনুমান, তিনি বুঝে নিয়েছেন, রাজনীতি এখন অনন্যোপায়। অন্য দিকে, উচ্চবিত্তদের জন্য সরকারের করণীয় সামান্যই— বিত্ত কর যেন না চাপে, শীর্ষ আয়বন্ধনীতে করের হার যেন সহনীয় হয়, সরকার এগুলো নিশ্চিত করলেই বিত্তবানরা খুশি। গত দশ বছরে সরকার এই চাহিদার অন্যথা করেছে, এমন অভিযোগ শোনা যায়নি। যে ভঙ্গিতে ভারতে আর্থিক বৈষম্য বেড়েছে, তাতে স্পষ্ট যে, এই সরকারের আমলে উচ্চবিত্তদের স্বার্থরক্ষা নিয়ে উদ্বেগের বিন্দুমাত্র কারণ নেই।

Advertisement

পড়ে থাকল যে মধ্যবিত্ত শ্রেণি, রাজনীতির প্রধান বিড়ম্বনা তাকে নিয়েই। ‘মধ্যবিত্ত’ নামক পরিসরটির বিভিন্ন প্রান্তে থাকা মানুষের আর্থিক অবস্থা পৃথক, প্রয়োজনও পৃথক— কিন্তু, তাঁদের মিল অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষায়। মনে পড়তে পারে, প্রাক্‌-২০১৪ নরেন্দ্র মোদী বারংবার নব্য মধ্যবিত্ত শ্রেণির উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা বলতেন। এই শ্রেণি সরকারের আর্থিক সাহায্যের অপেক্ষায় থাকতে রাজি নয়; আবার তার এমন বিত্তের জোরও নেই যে, বাজার যেমনই থাকুক তার সমস্যা হবে না। মধ্যবিত্তের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ হতে পারে একমাত্র অর্থব্যবস্থার সুস্বাস্থ্য বজায় থাকলে। গতকাল প্রকাশিত আর্থিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, সেখানেই বিস্তর গন্ডগোল। আর্থিক বৃদ্ধির হারের গতিভঙ্গ স্পষ্ট— বৃদ্ধির হার নেমে এসেছে সাড়ে ছয় শতাংশে। এই হার কমতে পারে, এমন পূর্বাভাস দিয়েছিল যে সব সমীক্ষা, সেগুলিতে প্রত্যাশিত বৃদ্ধির হারের চেয়েও প্রকৃত বৃদ্ধির হার কম। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বৃদ্ধির হারের পূর্বাভাস ৬.৬%; আশঙ্কা যে, সেই হারেও পৌঁছনো কঠিন হবে। অন্য দিকে, বৈশ্বিক স্তরে মূল্যস্ফীতির হার কমে এলেও ভারতে তা এখনও যথেষ্ট সহনীয় স্তরে পৌঁছয়নি। ফলে, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মুদ্রানীতি অবিলম্বে শিথিল হবে, সে আশা ক্ষীণ— সরকারের চাপে ব্যাঙ্ক যদি সে পথে হাঁটেও, ফল ইতিবাচক না হওয়ারই আশঙ্কা। অর্থাৎ, মধ্যবিত্তের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের মতো পরিস্থিতি এই মুহূর্তে নির্মলা সীতারামনের হাতে নেই।

বাজারে চাহিদার অভাব; এবং তার পিছনে রয়েছে কর্মসংস্থানে ঘাটতি। বিশেষত মধ্যবিত্ত যে ধরনের চাকরি খোঁজে, ভারতের বাজারে তার অভাব প্রকট। এই সমস্যাটি অদূর ভবিষ্যতে এক ভিন্নতর স্তরে পৌঁছতে চলেছে। কারণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজের বাজারটিকে ক্রমে পাল্টে দিচ্ছে। ভারতের অগ্রগণ্য পেশামুখী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষা সমাপ্ত করেও বসে থাকতে হচ্ছে, এমন বহু নিদর্শন ২০২৪ সালে মিলেছে। বিভিন্ন পেশা অদূর ভবিষ্যতে সম্পূর্ণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দখলে চলে যেতে পারে, তেমন পূর্বাভাস মিলছে। এই অবস্থায় লড়াই করার একমাত্র অস্ত্র শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার। জাতীয় শিক্ষা নীতি যে পথে হেঁটেছে, তাতে সেই সংস্কারের সম্ভাবনা দূর অস্ত। তার চেয়েও উদ্বেগের কথা, শিক্ষা খাতে খরচ করার ভাবনা গত এগারো বছরে এই সরকার দেখাতে পারেনি। নির্মলা সীতারামন আজ সেই প্রথা ভেঙে খুব ব্যতিক্রমী পথে হাঁটবেন, এমন আশা করার সাহস ক’জনেরই বা হবে?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement