Cricket

চলো নিয়ম-মতে

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৩-১ ফলাফলে সিরিজ় হার। টিম ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক রিপোর্ট কার্ড হাতে পেয়ে এ বার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) দশ দফা নিয়ম চাপিয়েছে খেলোয়াড়দের উপর।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:৫০
Share:

পরীক্ষায় খারাপ ফল করার পরমুহূর্ত থেকে ছেলেমেয়েদের উপর নানা রকম বিধিনিষেধ চাপানোর কুখ্যাতি আছে বাঙালি তথা ভারতীয় বাবা-মায়েদের। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের রকমসকম দেখে মনে হচ্ছে তারাও অনেকটা সেই পথেই হাঁটছে। ২০২৪-২৫ মরসুমে দেশের জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দলটির পারফরম্যান্স বেশ খারাপ, ঘরের মাঠে তিন বা তার বেশি ম্যাচ আছে এমন টেস্ট সিরিজ়ে দল হোয়াইটওয়াশড হচ্ছে, এমন ঘটনা ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এই প্রথম ঘটল, নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে। বর্ডার-গাওস্কর ট্রফিতে যে দল গৌরবের নজির গড়ছিল, সেখানেও কালিমাচিহ্ন— অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৩-১ ফলাফলে সিরিজ় হার। টিম ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক রিপোর্ট কার্ড হাতে পেয়ে এ বার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) দশ দফা নিয়ম চাপিয়েছে খেলোয়াড়দের উপর।

Advertisement

বিসিসিআই কড়া ভাষায় জানিয়েছে এই সব নিয়মবিধির তস্য ক্ষুদ্র অনুপুঙ্খও। যত সিনিয়র বা তারকাই হোক, খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে বা বোর্ডের চুক্তিতে থাকতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতেই হবে, ম্যাচ ও প্র্যাকটিস সেশনগুলিতে যেতে-আসতে হবে গোটা টিমের সঙ্গে, প্র্যাকটিস আগে হয়ে গেলে বা ম্যাচ আগে শেষ হলেও একা ফিরে আসা যাবে না। সিরিজ় বা সফর চলাকালীন খেলোয়াড়রা কোনও ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন-শুট বা এনডোর্সমেন্ট করতে পারবেন না, কিন্তু বিসিসিআই-এর সব বিজ্ঞাপন-শুট ও অনুষ্ঠানে যোগদান বাধ্যতামূলক। হোম ও অ্যাওয়ে সিরিজ়ে অল্প বা বেশি দিনের সাপেক্ষে বেঁধে দেওয়া হবে খেলোয়াড়দের ক্রিকেট কিট ও অন্য লটবহরের মাপ, কোনও সফরে বা সিরিজ়ে ব্যক্তিগত ও সাপোর্ট স্টাফের সংখ্যাও হবে নিয়ন্ত্রিত। এমনকি সিরিজ় বা সফর চলাকালীন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসা, বা তাঁদের সঙ্গে সময় কাটানোর বিষয়টিও বেঁধে দেওয়া হয়েছে নিয়মে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই অন্যথা হলে অনুমতি নিতে হবে, পরিস্থিতিবিশেষে হেড কোচ, নির্বাচন কমিটির প্রধান-সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

তার পরেও নিয়মভঙ্গ হলে পড়তে হবে শাস্তির মুখে। শাস্তি এ ক্ষেত্রে— আইপিএল খেলায় নিষেধাজ্ঞা, বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়ের চুক্তিতে কাটছাঁট, ম্যাচ ফি-তে হাত। অর্থাৎ স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ক্রিকেটাররা উপরের নিয়মগুলি না মানলে তাঁদেরই আর্থিক ক্ষতি: কে না জানে, বিসিসিআই বিশ্ব ক্রিকেটে সবচেয়ে অর্থবান বোর্ড, আর আইপিএল সোনার খনি। ক্রিকেটাররা নিশ্চিত ভাবেই হাতের লক্ষ্মী ঠেলতে চাইবেন না, তার চেয়ে নিয়ম মেনে চলা সুবিধার। ভাল না খেললে টাকা পাবে না, এই সোজা কথাটি আধুনিক যুগের ও বাজারেরও গোড়ার কথা, ভারতীয় ক্রিকেটের বর্তমান কর্পোরেটতন্ত্রেরও। কিন্তু সেটিই সব কি না, সে প্রশ্নটি থেকেই যায়। আর্থিক লাভক্ষতির চুলচেরা হিসাবের বাইরেও আছে এমন বিষয়, বোর্ডের নিয়মবিধি যা তুলে ধরেছে। এর মধ্যে রোহিত শর্মা-রবীন্দ্র জাডেজা প্রমুখ সিনিয়র বা শুভমন গিলের মতো উঠতি তারকা ক্রিকেটারদের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে দেখা গিয়েছে— এত দিন যে ছবিটি ছিল অনিয়মিত, প্রায়-বিরল। কিন্তু এ-ই তো হওয়া উচিত সর্বজনমান্য নিয়ম: ঘরোয়া ক্রিকেটই তো তরুণ প্রতিভাকে এগিয়ে দেবে জাতীয় দলে, ফর্ম-হারানো সিনিয়রকে দেবে আত্মবিশ্বাস, ম্যাচ ফিটনেস। সহজ জিনিসগুলিকে নিয়মের নিগড়ে বেঁধে বাধ্যতামূলক করলেই সাফল্য আসবে কি?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement