প্রশান্ত মহাসাগরে চিনের ‘আধিপত্য’ রুখতে এ বার নয়া কৌশল নিতে চলেছে আমেরিকা। বেজিংয়ের সম্ভাব্য সামরিক আক্রমণ প্রতিহত করতে আস্ত একটি দেওয়াল তৈরি করতে চলেছে তারা।
তবে এই দেওয়াল সাধারণ কোনও ইট-কাঠ-পাথরের দেওয়াল নয়। এটি ‘ক্ষেপণাস্ত্রর দেওয়াল’। আসলে প্রশান্ত মহাসাগর ধরে দূরপাল্লা এবং মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বসানোর পরিকল্পনা করেছে পেন্টাগন।
এই সামরিক কৌশল নিয়ে আসলে এক ঢিলে অনেকগুলি পাখি মারতে চাইছে আমেরিকা। এর নেপথ্যে এক দিকে যেমন প্রশান্ত মহাসাগরে নিজেদের সামরিক প্রভাব বৃদ্ধি করার উদ্যোগ রয়েছে, তেমনই রয়েছে বন্ধু দেশগুলিকে নিরাপত্তা জোগানোর অঙ্গীকার।
বন্ধু দেশগুলির মধ্যে রয়েছে স্বশাসিত তাইওয়ান, যাকে আবার চিন নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলেই দাবি করে এসেছে। চিন বরাবর অভিযোগ করে এসেছে যে, তাইওয়ানকে চিনের বিরুদ্ধে উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে আমেরিকা।
প্রশান্ত মহাসাগরে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা নিয়ে আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় কম্যান্ডের কম্যান্ডার জেনারেল চার্লস ফ্লিন জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এই ক্ষেপণাস্ত্র সংক্রান্ত মহড়া শুরু হয়ে যাবে।
সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালের মধ্যেই ওই অঞ্চলে আমেরিকা ক্ষেপণাস্ত্রের সারি দাঁড় করিয়ে দেবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তবে ঠিক কোথায় এবং কবে তা হবে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু জানাননি আমেরিকার ওই সেনাকর্তা।
কেন আমেরিকার এই সামরিক তৎপরতা? ব্যাখ্যা দিয়ে ফ্লিন দাবি করেন যে, চিনের আগ্রাসী মনোভাব গোটা অঞ্চলের ভারসাম্য নষ্ট করছে।
এর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক অবরোধ করা, এশিয়ায় আমেরিকার মিত্রদেশগুলিকে কোণঠাসা করার চেষ্টার অভিযোগ তুলেও চিনকে আক্রমণ করেন তিনি।
‘এশিয়া টাইমস’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, আমেরিকার এই সামরিক কৌশলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চলেছে জাপান, ফিলিপিন্স এবং দক্ষিণ কোরিয়া।
দেশগুলির মধ্যে জাপান বহু বার প্রকাশ্যেই চিনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। তাই আমেরিকা যদি জাপান উপকূলের কোথাও এই ‘ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়াল’ তৈরি করে, তবে বিশেষ অবাক হওয়ার থাকবে না। এমনটাই মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
তবে খানিক অবাক করার বিষয় এই যে, এই ব্যাপারে সরাসরি আমেরিকার পাশে দাঁড়াতে নারাজ তাইল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলি।
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের প্রভাব রুখতে আমেরিকা, জাপান এবং ভারতের সঙ্গে চতুর্দেশীয় অক্ষ কোয়াডে রয়েছে অস্ট্রেলিয়াও। তবে সরাসরি আমেরিকার ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়াল গাঁথার প্রক্রিয়ায় নিজেদের জড়াতে চাইছে না অস্ট্রেলিয়া।
সম্প্রতি চিন সফরে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী। তার পর চিন প্রশ্নে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থানে খানিক বদল এসেছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। সরাসরি বেজিংকে চটানোর মতো কাজ করতে চাইছে না ‘ক্যাঙারুদের দেশ’।
অন্য দিকে, তাইল্যান্ডও চিনের মন জুগিয়ে চলতে চাইছে। ফিলিপিন্সও আমেরিকাকে কতটা সঙ্গত করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, সম্প্রতি অর্থনৈতিক ভাবে ফিলিপিন্সকে ‘জব্দ’ করেছে শি জিনপিংয়ের দেশ। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না তারা।
‘এশিয়া টাইমস’-এর প্রতিবেদনে এ-ও বলা হয়েছে যে, উত্তর কোরিয়াকে চিনের বাজার দখল করতে দিতে চায় না আমেরিকার দীর্ঘ দিনের রণকৌশলগত সঙ্গী দক্ষিণ কোরিয়া। চিনের বাজারকে নিজেদের কব্জায় রাখতে সরাসরি আমেরিকার এই অভিযানে পা না-ও মেলাতে পারে সিওল।
এই পরিস্থিতিতে চিনকে রুখতে আমেরিকা কী ভাবে ‘ক্ষেপণাস্ত্র পাঁচিল’-এর ইট গাঁথবে, আর চিনের রক্তচক্ষু এড়িয়ে কারা ওয়াশিংটনকে ‘ইট’ এগিয়ে দেবে, সেটাই এখন দেখার।