ব্যবসায়ী পরিবারে তাঁর বেড়ে ওঠা। বাবা ছিলেন বিত্তবান শিল্পপতি। তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করে বণিক মহলে পা রাখেন তিনি। সফলও হন। আবার ব্যর্থতার অন্ধকারও গ্রাস করেছিল তাঁকে। কথায় আছে, উত্থান-পতন নিয়েই জীবনের পথচলা। অনিল অম্বানীর জীবনটা যেন তেমনই।
বিখ্যাত ব্যবসায়ী ধীরুভাই অম্বানীর কনিষ্ঠ পুত্র অনিল। দাদা মুকেশ অম্বানীও বণিক মহলে আলাদা ছাপ রেখেছেন। এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি মুকেশ।
তবে একটা সময় ব্যবসায়িক সাফল্যে দাদাকেও ছাপিয়ে গিয়েছিলেন অনিল। মুকেশ অম্বানীর থেকেও বেশি সম্পত্তির মালিক ছিলেন ধীরুভাইয়ের কনিষ্ঠ পুত্র।
এখন মুকেশ অম্বানীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭.৬ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। অথচ একদা সম্পত্তির নিরিখে দাদাকে টপকে গিয়েছিলেন অনিল। রিলায়্যান্স সংস্থার অর্ধেক মালিকানা ছিল অনিলের হাতে।
বিশ্বের প্রথম ১০ জন বিত্তবানের তালিকায় ছ’নম্বরে ছিলেন অনিল। সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি।
২০০৮ সালে অনিলের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকা। সেই সময় টাকার অঙ্কে মুকেশকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন অনিল।
২০০২ সালে প্রয়াত হন ধীরুভাই। তার পরই দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ তুঙ্গে ওঠে। সেই সময় দুই ভাইয়ের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে।
শেষে হস্তক্ষেপ করেন ধীরুভাই-পত্নী কোকিলাবেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক ব্যবসা ভাগ করেন। অম্বানী পরিবারে ফাটল ধরে।
তবে সেই সময়ও মুকেশ অম্বানীর থেকে বিত্তবান ছিলেন অনিল। শুধু তা-ই নয়, সেই সময় অনিলের বিলাসবহুল জীবনযাপনও নজরকাড়া ছিল।
সাফল্য আর ব্যর্থতা নিয়েই জীবন। অনিলের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। নানা বিতর্ক তো ছিলই, সেই সঙ্গে একের পর এক বিনিয়োগে মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন অনিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সংস্থায় ১৬ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন অনিল। কিন্তু সফল হননি। এর জেরে বিপুল দেনার দায়ে পড়ে ধনকুবেরের সংস্থা।
একের পর এক বিনিয়োগে ব্যর্থতার সঙ্গে সঙ্গে অনিলের ঘাড়ে বাড়ছিল দেনার বোঝা। যা মেটাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে।
চিনের ব্যাঙ্ক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল অনিলের সংস্থা রিলায়্যান্স কমিউনিকেশনস লিমিটেড। অভিযোগ, ঋণ শোধ করে দেবেন বলে ব্যক্তিগত ভাবে গ্যারান্টি দিয়েছিলেন অনিল। প্রথম দিকে কয়েক দফায় ঋণের কিস্তিও জমা দিয়েছিল তাঁর সংস্থা। কিন্তু আচমকাই তা বন্ধ হয়ে যায়।
ঋণের ভারে এক সময় দেউলিয়া হয়ে যান অনিল। এক সময় যিনি কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক ছিলেন, সেই তাঁরই পকেট ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল।
২০২০ সালে অনিলকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়। শোনা যায়, আইনি মামলায় লড়ার টাকা জোগাড় করতে বাড়ির গয়নাও বিক্রি করতে হয়েছিল তাঁকে।