সমন পাঠানো হয়েছে অভিনেতা রণবীর কপূরকে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর কাছে তিনি দু’সপ্তাহ সময় চেয়ে নিয়েছেন। এর পর সমন গিয়েছে অভিনেত্রী শ্রদ্ধা কপূরের কাছেও। মহাদেব বেটিং অ্যাপের মাধ্যমে টাকা নয়ছয়ের ঘটনায় এই সমন পাঠানো হয়। কী এই অ্যাপ? কী ভাবেই বা টাকা নয়ছয় হয়েছে?
রণবীর, শ্রদ্ধার পাশাপাশি সমন পাঠানো হয়েছে কৌতুকশিল্পী কপিল শর্মা, অভিনেত্রী হিনা খানকে। তাঁদেরও এই কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে ইডি।
এ ছাড়াও ইডির নজরে রয়েছেন অন্তত ১৫-২০ জন বলিউড তারকা। সেই তালিকায় নাম রয়েছে গায়ক আতিফ আসলাম, রাহত ফতেহ আলি খান, বিশাল দাদলানি, সুখবিন্দর সিংহ, নেহা কক্করের। রয়েছেন টাইগার শ্রফ, এলি আব্রাম, সানি লিওনি, ভাগ্যশ্রী, পুলকিত সম্রাট, কৃতি খরবান্দা, নুসরত ভারুচার মতো অভিনেতার নামও। ইডির স্ক্যানারে রয়েছেন কৌতুকাভিনেতা ভারতী সিংহ, কৃষ্ণা অভিষেকও।
ইডি সূত্রের খবর, মহাদেব অ্যাপের প্রচারকের সঙ্গে তারকাদের সমীকরণ নিয়ে প্রশ্ন করতে চায় ইডি। অনলাইন গেমিংকাণ্ডে গড়াপেটা সম্পর্কে তাঁরা ওয়াকিবহাল কি না, সেই তথ্য অনুসন্ধান করতে চায় তদন্তকারী সংস্থা।
গত কয়েক মাস ধরে মহাদেব অনলাইন বুক নামে অনলাইন লটারি সংস্থার কারচুপি নিয়ে তদন্ত করছে ইডি। এই কারচুপির নেপথ্যে রয়েছেন সৌরভ চন্দ্রকর এবং রবি উপ্পল। গোটা দুনিয়ায় সক্রিয় তাঁদের এই অনলাইন বেটিং চক্র।
সংস্থার সদর দফতর রয়েছে দুবাইয়ে। সেখানে বসেই সারা দুনিয়ায় কাজ চলে। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কাতেও রয়েছে সংস্থার জাল। সেখানে বসেও গ্রাহকেরা অনলাইনে বেটিং করেন।
সৌরভ এবং রবির বিরুদ্ধে জামিনঅযোগ্য পরোয়ানা এবং লুকআউট নোটিস জারি করেছে ইডি। তাঁরা দু’জনেই ছত্তীসগঢ়ের বাসিন্দা। এক সময় দু’জনেই ছিলেন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের।
ছত্তীসগঢ়ের ভিলাইয়ের নেহরু নগরে ফলের রসের দোকান ছিল সৌরভের। সেই রস বিক্রি করে কোনও মতে চলত সংসার।
রবির ছিল টায়ারের দোকান। দোকান যে খুব ভাল চলত, তেমন নয়। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত।
রবি এবং সৌরভ, দু’জনেরই অনলাইন বেটিংয়ের নেশা ছিল। যেটুকু রোজগার করতেন, তার বেশির ভাগটা দিয়েই করতেন বেটিং।
দু’জনেই এর পর পাড়ি দেন দুবাইয়ে। সেখানে এক শেখ এবং পাকিস্তানের এক নাগরিকের সঙ্গে দেখা করেন। এর পর তাঁরা চার জন মিলে তৈরি করেন অনলাইন বেটিং সংস্থা।
এই মহাদেব অনলাইন বেটিং অ্যাপ আসলে কী? এই অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকেরা বিভিন্ন খেলা নিয়ে বেটিং করতে পারেন। যেমন ক্রিকেট, ফুটবল, পোকার, ব্যাডমিন্টন, টেনিস, তাস।
অ্যাপটি কাজ করে চার থেকে পাঁচটি সমাজমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে। ইডির একটি সূত্র জানিয়েছে, এই অ্যাপের খেলার নিয়ম এতটাই গোলমেলে যে, টাকা বিনিয়োগ করলে ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। তাই পুরোটাই যায় কর্ণধারদের পকেটে।
ইডি তদন্তে নেমে জেনেছে, ভারতে বেটিংয়ের জন্য চার হাজার প্যানেল অপারেটর নিয়োগ করেছিলেন সৌরভ এবং রবি। প্রত্যেক প্যানেলে থাকেন ২০০ জন গ্রাহক। তাঁরা বেট লড়েন।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অনলাইন বেটিং অ্যাপের মাধ্যমে প্রতি দিন ২০০ কোটি টাকা আয় করতেন সৌরভেরা।
গত সেপ্টেম্বর মাসে দুবাইয়ে বিলাসবহুল ভাবে বিয়ে সারেন সৌরভ। সেই বিয়েতে যোগ দিয়েছিলেন বলিউডের তাবড় অভিনেতারা। টাকা দিয়ে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে খবর।
বিয়েতে এতটাই খরচ করেছিলেন সৌরভ যে, নড়েচড়ে বসেছিল ইডি। তার পরেই তদন্তে নামে তারা। তদন্তে নেমে ইডি জানতে পারে, ওই বিয়েতে যোগ দেওয়ার জন্য তারকাদের প্রায় ৪০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন অনলাইন বেটিং সংস্থার মালিক সৌরভ। তারকাদের নাচগান করার জন্যেও দেওয়া হয়েছিল বিপুল অঙ্কের টাকা।
দুবাইয়ের একটি বিলাসবহুল হোটেলে বসেছিল বিয়ের আসর। ডেকরেটর, বিয়েতে নাচের জন্য শিল্পীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মুম্বই থেকে।
নাগপুর থেকে আত্মীয়দের ব্যক্তিগত বিমানে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দুবাইয়ে। বিয়ের খরচের টাকা নগদে মেটানো হয়েছিল দফায় দফায়। হাওয়ালার মাধ্যমে।
আর এই বিয়েতে যোগ দিয়েই ইডির নজরে তারকারা। সে কারণেই সমন পাঠানো হয়েছে রণবীরদের। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তাঁরা কী বলেন, এখন সেটাই দেখার।