টাটা সন্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রির পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। মহারাষ্ট্রের পালঘরের কাছে গত ৪ সেপ্টেম্বর গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। আর সেই সঙ্গে উঠে এসেছিল দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর মৃত্যুর পরিসংখ্যান।
শুক্রবার ভোরে দেশের জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক ঋষভ পন্থের গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। গুরুতর জখম হয়েছেন তিনি। দিল্লি-দেহরাদূন হাইওয়েতে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক এ যাত্রায় বেঁচে গেলেও পথদুর্ঘটনার ভয়াবহ ছবিটাকে আবার প্রকাশ্যে আনল।
পথদুর্ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক একটি তথ্য প্রকাশ করেছে। ২০২১ সালে পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু এবং আহতের একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে তারা। সেই পরিসংখ্যান চমকে ওঠার মতো।
মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে পথদুর্ঘটনা হয়েছে ৪ লক্ষ ১২ হাজার ৪৩২টি। এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৯৭২ জনের।
২০২১ সালে পথদুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন, ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪৪৮ জন। যেখানে ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ৫৪ হাজার।
সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় হার বেড়েছে ১২.৬ শতাংশ। ওই সময়ে মৃত্যুর হার বেড়েছে ১৬.৯ শতাংশ। আহতের হার বেড়েছে ১০.৩৯ শতাংশ।
২০২১ সালে যত পথদুর্ঘটনা, তার মধ্যে ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৩২৫টি হয়েছে জাতীয় সড়ক এবং এক্সপ্রেসওয়েতে। রাজ্য সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৯৬ হাজার ৩৮২। এ ছাড়া অন্যান্য সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ২২৫।
মন্ত্রকের বার্ষিক তথ্য বলছে, জাতীয় সড়কে ওই বছরে মৃত্যু হয়েছে ৫৬ হাজার ৭ জনের। রাজ্য সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা ৩৭ হাজার ৯৬৩ এবং অন্যান্য রাস্তায় এই সংখ্যাটা ৬০ হাজার ২।
কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু এবং আহতের সংখ্যা ১৮-৪৫ বছর বয়সের মধ্যে।
কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের তথ্য বলছে, বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য পথদুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১ লক্ষ ৭ হাজার ২৩৬। মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৩১৪ জনের।
মন্ত্রকের বার্ষিক তথ্য বলছে, লেন ভেঙে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ১২২ জনের। এবং ট্র্যাফিক সিগন্যাল অমান্য করায় মৃত্যু হয়েছে ৬৭৯ জনের।
গাড়ি চালানোর সময় ফোন করতে গিয়ে পথদুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাটাও খুব একটা কম নয়। এক বছরে ২ হাজার ৯৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব সময়েই এ বিষয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে সতর্কবার্তা দেওয়া থাকে। কিন্তু তার পরেও সেই সতর্কবার্তা উপেক্ষিত হচ্ছে, আর দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন গাড়িচালক, পথচারীরা।
হেলমেট না পরে গাড়ি চালানোর জন্য ৩২ হাজার ৮৭৭ জন বাইকচালক এবং ১৩ হাজার ৭১৬ জন বাইক আরোহীর মৃত্যু হয়েছে।
গাড়ি চালানোর সময় সিটবেল্ট না বাঁধার কারণে মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৪৩৮ জন চালকের। অন্য দিকে, এই একই কারণের জন্য মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ৯৫৯ যাত্রীর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, গোটা বিশ্বের সড়ক দুর্ঘটনায় যে ১০ জনের মৃত্যু হয়, তার মধ্যে এক জন ভারতের।