মহারাষ্ট্রের আহমদনগর জেলার মলসেজ ঘাটে প্রায় ৪,৬৭০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত হরিশচন্দ্রগড়ের প্রাচীন পার্বত্য দুর্গ একটি ঐতিহাসিক ভান্ডার।
মৎস্যপুরাণ, অগ্নিপুরাণ, স্কন্দপুরাণের মতো প্রাচীন ধর্মগ্রন্থেও এই পবিত্র স্থানের উল্লেখ রয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, ষষ্ঠ শতকে কালাচুরি রাজবংশ এই দুর্গটি তৈরি করে। তবে হরিশচন্দ্রগড় দুর্গের গুহাগুলি একাদশ শতকে খোদাই করা হয়েছিল বলেই মনে করা হয়।
মহাঋষি চাংদেব এই দুর্গের মন্দিরে গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন বলেও মনে করা হয়। চর্তুদশ শতকের বিখ্যাত পাণ্ডুলিপি ‘তত্ত্বসার’-এ এর উল্লেখ পাওয়া যায়। ষষ্ঠদশ শতকে এই দুর্গ মোগলদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে অষ্টাদশ শতকে মরাঠারা এই দুর্গ পুর্নদখল করেন।
মনে করা হয় এই দুর্গে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেকগুলি গুহা রয়েছে। তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।
তবে এই সমস্ত গুহাগুলির মধ্যে সব থেকে যে গুহাটি মানুষকে আকৃষ্ট করে, তা হল রহস্যময় কেদারেশ্বর গুহা।
কেদারেশ্বর গুহার কাছে আছে হরিশচন্দ্রগড় মন্দির। মন্দিরের পূর্ব দিকে রয়েছে সপ্ততীর্থ পুষ্করিণী। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই পুকুরের জলে অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তোলার আশ্চর্য ক্ষমতা আছে।
খোলা আকাশের নীচে থাকলেও গরমকালেও এই পুকুরের জল থাকে বরফের মতো ঠান্ডা।
কেদারেশ্বর গুহা হরিশচন্দ্রেশ্বর মন্দিরের ডান দিকে অবস্থিত। এই গুহাটিতেও বরফ-ঠান্ডা জলের মাঝখানে রয়েছে পাঁচ ফুট লম্বা শিবলিঙ্গ। জল প্রায় কোমর সমান উঁচু। অতি ঠান্ডা জলের জন্য শিবলিঙ্গের কাছে যাওয়াও বেশ কঠিন।
কেদারেশ্বর গুহায় খোদাই করা রয়েছে বহু ভাস্কর্য। বর্ষাকালে এই গুহার কাছে যাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ে। গুহার সামনের রাস্তা দিয়ে জলের প্রবল স্রোত বয়ে যায়।
গুহার আরও এক আশ্চর্যের বিষয় হল, এই মন্দিরের চার দেওয়াল কোনও ছিদ্র না থাকলেও এই দেওয়ালগুলি দিয়ে জল গুহার ভিতরে ঢোকে।
গুহার শিবলিঙ্গের উপরে রয়েছে একটি বিশাল শিলা। চার কোণে রয়েছে চারটি স্তম্ভ। তবে গুহা দাঁড়িয়ে একটিমাত্র স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে। বাকি তিন স্তম্ভই নীচের দিকে ভাঙা।
স্থানীয়দের দৃঢ় বিশ্বাস এই চার স্তম্ভ চারটি যুগের প্রতিনিধিত্ব করে। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর এবং কলি। তিন যুগের শেষে নিজে থেকেই ভেঙে গিয়েছে এক একটি স্তম্ভ।
মনে করা হয় কলিযুগের ভার বহন করছে টিকে থাকা স্তম্ভটি। কলিযুগের ধ্বংস হলে নিজে থেকেই ভেঙে পড়বে এই স্তম্ভটিও। ধ্বংস হবে পৃথিবীর।