Miyazaki Mango

আমেই লুকিয়ে ‘তারুণ্যের চাবিকাঠি’! দু’লাখি আম এ বার মালদহে, কেন এত দাম? আর কী গুণ আছে?

এই আমের এক একটির ওজন কম করেও ৩৫০ গ্রাম। এমন এক জোড়া আমের একটি বাক্সের দর উঠতে পারে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। টকটকে লাল রং, তাতে হালকা বেগুনি আভা। জাপানে দামি উপহার হিসাবে দেওয়া হয় এই আম।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:১৫
Share:
০১ ২৬

এই আমের আর এক নাম ‘সূর্যের ডিম’! এর দামে আম-আদমির হাত পুড়বে না! প্রায় দু’লক্ষ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া সেই আম অবশ্য এ বার হাত বাড়ালেই পাওয়া যাবে। বাংলার আম-ক্ষেত্র মালদহে চাষ শুরু হচ্ছে এই মহামূল্যবান আমের। কিন্তু এই আমের দাম এত বেশি কেন? বিশেষ কী আছে এতে?

০২ ২৬

আমের নাম মিয়াজ়াকি। জাপানি প্রজাতির এই আমের এক একটির ওজন কম করেও ৩৫০ গ্রাম। এমন এক জোড়া আমের একটি বাক্সের দর উঠতে পারে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত।

Advertisement
০৩ ২৬

এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে দামি আমের প্রজাতি এই মিয়াজ়াকিই। মহার্ঘ্য পাথর চুনির সঙ্গে তুলনা করা হয় এই আমের।

০৪ ২৬

তবে এই নাম শুধু দামের জন্য নয়। মিয়াজ়াকিকে দেখতেও বড়সড় চুনির মতোই। টকটকে লাল রং, তাতে হালকা বেগুনি আভা। জাপানে দামি উপহার হিসাবে দেওয়া হয় এই আম।

০৫ ২৬

জাপানিরা এই আমকে আদর করে ডাকেন ‘তাইও-নো-তোমাগো’। যার আক্ষরিক অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ‘সূর্য কিরণের ডিম’। টকটকে লাল ডিম্বাকৃতি মিয়াজ়াকি আমকে এক ঝলক দেখলে মনে হতেই পারে জাপানিদের দেওয়া আদুরে নামে এক চিলতে ভুল নেই।

০৬ ২৬

১৯৭০-১৯৮০ সালের মাঝামাঝি জাপানে মিয়াজাকির ফলন শুরু। ক্রমে এই আমের ফলন ছড়ায় কয়েকটি দেশে। এমনকি, এ দেশেও এ আমের প্রবেশ ঘটেছে বছর দু’য়েক আগে। তবে সেই অর্থে চাষ শুরু হয়নি।

০৭ ২৬

হিমসাগর, চৌষা, দশেরী, ল্যাংড়া, আলফানসো আম বিদেশে একচেটিয়া রফতানি করে ভারত। ভারতের জাতীয় ফল হল আম। সে দেশে বিশ্ববিখ্যাত আম মিলবে না— এ কি হতে পারে!

০৮ ২৬

বছর দু’য়েক আগে মধ্যপ্রদেশের এক দম্পতির বাগানে দু’টি মিয়াজ়াকি গাছের খোঁজ মেলে।

০৯ ২৬

জবলপুরের ওই দম্পতি রানি এবং সঙ্কল্প পরিহার এক সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বছর আগে সাধারণ আম গাছ ভেবেই দু’টি চারা পুঁতেছিলেন বাগানে। অবশ্য এই আমের নাম যে মিয়াজ়াকি এবং তা যে বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম, সে ব্যাপারে বছরখানেক আগেও কোনও ধারণা ছিল না তাঁদের।

১০ ২৬

সঙ্কল্প এক বার চেন্নাই গিয়েছিলেন নিজের বাগানের জন্য গাছের চারা কিনতে। ট্রেনে এক সহযাত্রী তাঁকে গাছ দু’টি বিনামূল্যেই দেন এবং বলেন, ‘‘এদের নিজের সন্তানের মতো যত্ন কোরো।’’

১১ ২৬

পরে গাছের ফল আর তার অদ্ভুত রং দেখে বিস্মিত হন দু’জনেই। মধ্যপ্রদেশের ওই দম্পতি জানিয়েছিলেন, মাঝেমধ্যেই আম কিনতে প্রস্তাব আসত তাঁদের কাছে। কেউ কেউ এমনও বলত, ‘‘যত অর্থ চান তত দেব। শুধু একটা আম আমাদের বিক্রি করুন।’’ এক গয়নার ব্যবসায়ীই নাকি একবার এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার পরেই খোঁজ খবর নিয়ে মিয়াজ়াকি আমের কথা জানতে পারেন পরিহার দম্পতি।

১২ ২৬

মধ্যপ্রদেশের ওই জোড়া আমগাছের মালিক সিদ্ধান্ত নেন, আম কাউকে বিক্রি করবেন না বরং আমের বীজ থেকে গাছের সংখ্যা আরও বাড়াবেন। বছর দেড়েক আগে এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই ইচ্ছার কথাই বলেছিলেন তিনি।

১৩ ২৬

পরে মধ্যপ্রদেশের কৃষি দফতরের তরফেও যোগাযোগ করা হয়েছিল ওই দম্পতির সঙ্গে। মধ্যপ্রদেশের কৃষি দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা আর এস কাটারা গাছ পরীক্ষা করে বলেছিলেন এই আম সত্যিই মিয়াজ়াকি কি না তা পরখ করতে দেখতে হবে। যদিও শেষ পর্যন্ত সরকারি ভাবে মধ্যপ্রদেশে মিয়াজ়াকি আম চাষের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

১৪ ২৬

সেই সময় জবলপুরের জওহরলাল নেহরু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ও এই আম নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিল। মধ্যপ্রদেশের কৃষি দফতরের প্রাক্তন অধিকর্তা জিএস কৌশল বলেছিলেন, মিয়াজ়াকি আম ফলনের অনুকূল আবহাওয়া ভারতে আছে। তাই এই আম ভারতে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে আপাতত আম চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালদহ।

১৫ ২৬

মালদহ জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মালদহের ইংরেজবাজার ব্লকে মিয়াজ়াকির বাগান তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। তার জন্যে ইতিমধ্যেই জাপান থেকে চারাগাছ নিয়ে আসার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই মালদহে সেই চারাগাছগুলি পৌঁছবে।

১৬ ২৬

মালদহে এই আম চাষের বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছেন ইংরেজবাজার ব্লক কৃষি দফতরের আধিকারিক সেফাউর রহমান। তবে আপাতত একটি বেসরকারি সংস্থার সহায়তাতেই জাপান থেকে মিয়াজ়াকি আম গাছের চারা নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

১৭ ২৬

সেফাউরের কথায়, ‘‘মোট ৫০টি চারা আসছে। ভারতীয় মুদ্রায় এক একটি গাছের দাম পড়ছে প্রায় এক হাজার টাকা করে। এই গাছ থেকেই কলম তৈরি করে পরবর্তীকালে আরও চারা তৈরি করা হবে। মালদহে বাড়বে মিয়াজ়াকি আমের চাষ।’’

১৮ ২৬

মিয়াজ়াকি আমের মাত্রাছাড়া দাম প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আমের অতিরিক্ত দামের কারণ এর কম ফলন। জাপান ছাড়া ফিলিপিন্স এবং তাইল্যান্ডে এই আমের চাষ হয়। তবে ভারতে এই আম চাষের অনুকূল আবহাওয়া রয়েছে।

১৯ ২৬

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়াজ়াকি আম চাষের জন্য দরকার প্রচুর রোদ, উষ্ণ আবহাওয়া আর নির্দিষ্ট পরিমাণ বৃষ্টি। ভারতে এমন রোদ এবং উষ্ণ আবহাওয়ার কমতি নেই। তবে এই আমের জন্য শুধু অনুকূল আবহাওয়া নয়। প্রয়োজন বিস্তর পরিশ্রমও। আমের বিপুল দামের সেটাও অন্যতম কারণ।

২০ ২৬

মিয়াজ়াকি আম ফলানোর জন্য দরকার রোদের তাপের সমতা। অর্থাৎ রোদের তাপ যাতে প্রতিটি আমের চারপাশে সমান ভাবে পড়ে তার ব্যবস্থা করতে হয় এই আম চাষে। ফলে জাল দিয়ে মুড়ে রাখতে হয় আমগুলিকে। দরকার পরে অন্যান্য পরিচর্যারও।

২১ ২৬

মিয়াজ়াকি আমের মিষ্টি স্বাদের আরও একটি কারণ এর স্বাদ। আমবিশারদদের মতে, মিয়াজ়াকি আমের মিষ্টত্ব অন্য আমের তূলনায় ১৫ শতাংশ বেশি।

২২ ২৬

আমাদের শরীরে প্রতিদিন খাবার, জল, বাতাসের মাধ্যমে যে দূষণ প্রবেশ করে, তা শুধরনোর জন্য জরুরি ডিটক্সিফিকেশন। যা আসলে শরীরকে দূষণের বিষমুক্ত করার প্রক্রিয়া। আর এই বিষমুক্তির জন্য জরুরি অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট। সাধারণ তাজা শাক-সবজি ফলমূলে এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। তবে মিয়াজ়াকি আমে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পরিমাণ অন্যান্য যেকোনও আমের থেকে অনেক বেশি।

২৩ ২৬

এই অ্যান্টি অক্সিডেন্টের অনেক গুণ। আমাদের তারুণ্য বজায় রাখে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। ক্যানসার প্রতিরোধেও সাহায্য করে।

২৪ ২৬

আর কী আছে মিয়াজ়াকিতে? বিটা ক্যারোটিন এবং ফলিক অ্যাসিডে ঠাসা এই আম। যা দৃষ্টিশক্তির জন্য ভাল। বিশেষজ্ঞদের মতে তা এই উপাদানগুলি ক্যানসারেরও ঝুঁকি কমায়। কমায় কোলেস্টেরল। এমনকি, ত্বকের জন্যও উপকারী।

২৫ ২৬

সাধারণত, এপ্রিল থেকে অগস্ট মাসে ফলন হয় এই আমের। এক একটি আম ৮৬০০ টাকা থেকে শুরু। জোড়া আমের একটি বাক্সের দর ২০২১ সালেও উঠেছিল ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। তার আগে ২০১৬ সালে নিলামে দু’টি মিয়াজাকি আম বিক্রি হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ টাকায়।

২৬ ২৬

এহেন ক্যানসার তফাতে রাখা আর তারুণ্যকে ধরে রাখার মতো সর্বগুণসম্পন্ন আম হাতের নাগালে চলে এলে কি বাংলার লক্ষ্মীলাভ হবে না! আপাতত সেই আশাতেই হিমসাগরের খাসমহল মন দিচ্ছে মিয়াজ়াকি চাষে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement