বলিউডে নিজের কেরিয়ারের সাফল্যের সিঁড়ি চড়তে শুরু করেছিলেন অভিনেতা জ্যাকি শ্রফের সঙ্গে। সঙ্গীত নিয়ে এগোবেন বলে চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু গায়ক হিসাবে নিজের প্রচার করতে না পারায় মনোহর উধাসের দুই ভাই বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
১৯৪৩ সালের ১৩ মে গুজরাতের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম মনোহরের। গায়কের বাবা পেশায় ছিলেন সরকারি কর্মী। মা সংসার সামলাতে ব্যস্ত থাকতেন। ছোটবেলা থেকেই গানবাজনার প্রতি আগ্রহ ছিল মনোহরের।
বলিউড সঙ্গীত জগতের নামকরা গায়ক পঙ্কজ এবং নির্মল উধাসের বড় দাদা মনোহর। তাঁর বাবা-মা সবসময় চাইতেন পুত্রেরা পড়াশোনায় মনোযোগ দিক। কিন্তু মনোহর ধীরে ধীরে গানবাজনার দিকে ঝুঁকতে থাকেন।
প্রতি দিন স্কুল যাওয়ার পথে কুন্দনলাল সহগলের গান শুনতে পেতেন মনোহর। গান শুনে তাঁর এত ভাল লেগেছিল যে, বাবার কাছে রেকর্ড কেনার বায়নাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁদের বাড়িতে গান শোনার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। তাই প্রতিবেশীর বাড়ি গিয়ে গ্রামোফোনে রেকর্ড বাজিয়ে শুনতেন তিনি।
মনোহরের মন পড়াশোনা থেকে যেন সরে না যায়, সেই কারণে তাঁর বাবা-মা অনবরত চাপ দিতে থাকতেন। শেষ পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করে মুম্বইয়ে গিয়ে চাকরির খোঁজ করতে শুরু করেন মনোহর।
মুম্বইয়ে যাওয়ার পর একটি টেক্সটাইল কারখানায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরিতে যোগ দেন মনোহর। মুম্বইয়ে থাকতেন মনোহরের এক জামাইবাবু। গুজরাতি ভাষায় ছবি বানাতেন তিনি।
মনোহর তাঁর জামাইবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করলে একটি গুজরাতি ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগও পান তিনি। সেই ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কল্যাণজি-আনন্দজি। মনোহরের গান শোনার পর তাঁর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন কল্যাণজি-আনন্দজি।
১৯৬৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বিশ্বাস’ ছবির জন্য কল্যাণজি-আনন্দজির দৌলতে গান গেয়েছিলেন মনোহর। এই ছবির প্রতিটি গান মুকেশচাঁদ মাথুরকে দিয়ে গাওয়ানো হয়েছিল। শুধুমাত্র একটি গান রেকর্ড করা বাকি ছিল। সেই সময় মুকেশ মুম্বইয়ের বাইরে ছিলেন।
কোনও উপায় না দেখে মনোহরকে দিয়ে গানের স্যাম্পল রেকর্ডিং করান কল্যাণজি-আনন্দজি। তার পর সেই রেকর্ডিং শোনান মুকেশচাঁদকে। মনোহরের কণ্ঠে গান শোনার পর মুগ্ধ হয়ে যান মুকেশচাঁদ। তিনি জানান যে, তাঁর আর আলাদা করে গান গাওয়ার প্রয়োজন নেই। ছবিতে যেন মনোহরের গানই ব্যবহার করা হয়।
‘বিশ্বাস’ ছবিতে গান গাওয়ার পর ধীরে ধীরে পরিচিতি গড়ে উঠতে থাকে মনোহরের। ‘হিরো’ এবং ‘রাম লক্ষ্মণ’ সিনেমার মাধ্যমে সেই সময় বলিপাড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেন জ্যাকি শ্রফ। একের পর এক ছবিতে জ্যাকির গানে কণ্ঠ দিতেন মনোহর এবং প্রতিটি গানই সুপারহিট হত।
তার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি মনোহরকে। হিন্দি ছবির পাশাপাশি গুজরাতি, পঞ্জাবি, বাংলা ছাড়াও অন্যান্য ভাষার ছবিতে ৩০০টিরও বেশি গান গেয়েছেন তিনি।
১৯৮৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যাকশন ড্রামা ঘরানার ‘জানবাজ়’ ছবির প্রযোজনা এবং পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ফিরোজ খান। তিনি চাননি যে, তাঁর ছবিতে মনোহর কোনও গান করুন। কিন্তু পরে মনোহরের জনপ্রিয়তা দেখার পর তাঁকেই গান গাওয়ার প্রস্তাব দেন ফিরোজ়।
সিনেমায় গান গাওয়ার পাশাপাশি বিদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করতে যেতেন মনোহর। এমনকি ৪০টি ভজনের অ্যালবামও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তবে প্রচারের অভাবে ধীরে ধীরে বলিজগত থেকে সরে যেতে থাকেন।
মনোহরের জায়গা দখল করে নিতে থাকেন তাঁর ভাই পঙ্কজ। গান হিট হওয়ার পাশাপাশি প্রচারের দিকেও নজর দিয়েছিলেন পঙ্কজ। তাই দাদা গানের জগতে আগে এলেও পঙ্কজ কেরিয়ারের দিক থেকে অনেক দূর এগিয়ে যান।
বর্তমানে সঙ্গীতজগত থেকে দূরেই রয়েছেন মনোহর। দুই কন্যাসন্তানের বাবা এখন স্ত্রী এবং কন্যাদের নিয়েই দিন কাটান। কখনও কখনও বিদেশে অনুষ্ঠান করতেও যান তিনি। তবে গায়ক হিসাবে জনপ্রিয়তা আর ফিরে পাননি মনোহর।