ছবি বাজারে খুব একটা চলেনি। জুটেছে সমালোচকদের সমালোচনা। তবে কিছু চরিত্র দর্শকদের মনে দাগ কেটে গিয়েছে। ‘আদিপুরুষ’-এ তেমনই এক চরিত্র হল কুম্ভকর্ণের। ওই চরিত্রে পর্দায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন লাভি পাজনি। চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবের পাজনির নাকি খুব একটা অমিল নেই।
রামায়ণে লেখা রয়েছে, বছরে ছ’মাস ঘুমোতেন কুম্বকর্ণ। বাকি ছ’মাস জাগতেন। যখন জাগতেন, তাঁর খাবার জোগাতে হিমশিম খেয়ে যেতেন লঙ্কার লোকজন। কুম্বকর্ণের চরিত্রে অভিনয় করা লাভিরও নাকি তেমনই খোরাক।
লাভি আদতে পঞ্জাবের পটীয়ালার বাসিন্দা। ‘আদিপুরুষ’ তাঁর প্রথম ছবি নয়। সিনেমায় হাতেখড়ি আরও আগে।
২০১৭ সালে এসএস রাজামৌলির ছবি ‘বাহুবলী ২: দ্য কনক্লুশন’ ছবি দিয়ে হাতেখড়ি লাভির। ওই ছবিতে কালকেয়র সঙ্গীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তিনি।
কালকেয়র সঙ্গীর চরিত্রের জন্য অভিনেতা খুঁজছিলেন রাজামৌলি। তখন লাভির কিছু ছবি পরিচালকের কাছে পাঠিয়েছিলেন তাঁর এক বন্ধু। দেখেই পছন্দ হয়ে যায় রাজামৌলির। কালকেয়র সেনার ভূমিকায় তাঁকে মনোনীত করেন পরিচালক।
কালকেয়র সঙ্গীর চরিত্রে লাভিকে দেখে দর্শকেরা বেশ ভয়ই পেয়েছিলেন। গায়ে ছাই লেপা। মাথায় জটা। কালো দাঁত। ভয়ঙ্কর চেহারায় ধরা দিয়েছিলেন লাভি।
একটি সাক্ষাৎকারে লাভি জানিয়েছিলেন, ওই মেকআপ করতে তাঁর পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগত। আর মেকআপ তুলতে প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
লাভি ২০২১ সালে আরও দু’টি ছবিতে অভিনয় করেন— ‘মোসাগাল্লু’ এবং ‘রাধে’। যদিও ছোট একটি চরিত্রে। ‘আদিপুরুষ’ লাভির চতুর্থ ছবি।
‘আদিপুরুষ’ ছবির দ্বিতীয় ধাপে দেখা গিয়েছে লাভিকে। যুদ্ধক্ষেত্রে কিছু ক্ষণ দেখা গিয়েছে তাঁকে। ছবির সেই অংশগুলি দর্শকদের মন টেনেছে। মূলত, শরীরের জন্যই এই চরিত্রে ডাক পান লাভি।
এই শরীরে জন্য কম কসরত করেন না লাভি। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল বলে, মাসে লাখ লাখ টাকা খরচ করেন লাভি। যেমন খান, তেমনই কসরত করেন।
লাভি ছিলেন ক্রীড়াবিদ। ডিসকাস ছুড়তেন তিনি। অল্প বয়স থেকে সেই মতো তৈরি করেছেন শরীর। পাশাপাশি পঞ্জাবের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থিয়েটারে স্নাতকোত্তরও পাশ করেছেন।
লাভির উচ্চতা ৬ ফুট ১০ ইঞ্চি। ওজন ১৪০ কেজি। একটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে লাভি জানিয়েছেন, কুম্ভকর্ণ চরিত্রের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন তিনি।
ওই সংবাদমাধ্যমেই লাভি জানিয়েছেন, কুম্ভকর্ণ চরিত্রের জন্য ছয় থেকে সাত কেজি ওজন বাড়িয়েছেন তিনি।
লাভি রোজ কী খান জানেন? শুনলে চোখ কপালে উঠতে পারে। দিনে ২০টি রুটি খান তিনি। সঙ্গে ২৫টি ডিম, এক কেজি চিকেনও থাকে ডায়েটে। এখানেই শেষ নয়। এ সবের সঙ্গে রোজ দেড় লিটার দুধও খান পর্দার কুম্ভকর্ণ।
‘আদিপুরুষ’ ছবির সংলাপ নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। হনুমানের মুখে যে ধরনের সংলাপ বসানো হয়েছিল, অনেকেই দাবি করেছেন তা হিন্দু ধর্মের প্রতি ‘অবমাননাকর’। এই নিয়ে ছবির কলাকুশলীরা যদিও সে ভাবে মুখ খোলেননি।
একমাত্র লাভিই মুখ খুলেছিলেন। সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেকের মতো এই সংলাপ নিয়ে আমারও আপত্তি রয়েছে। কারণ আমি এক জন হিন্দু।’’
প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে তিনি সেই ছবিতে অভিনয় করলেন কেন? জবাবে লাভি বলেন, ‘‘পরিচালক যা বলবেন, সেটাই আপনাকে করতে হবে। কারণ আপনার সঙ্গে সে রকমই চুক্তি হয়েছে। আর পুরো ছবির শুটিং একসঙ্গে হয় না। আংশিক ভাবে হয়। তাই কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয় যে, পর্দায় কী হবে। এই পরিস্থিতিতে পরিচালকের নির্দেশই মানতে হয়।’’