চলতি বছরের ২৭ অক্টোবর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘টুয়েলফ্থ ফেল’ ছবিটি। বিধু বিনোদ চোপড়া পরিচালিত এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন বিক্রান্ত মাসে। বাঙালি অভিনেতা প্রিয়াংশু চট্টোপাধ্যায়কে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে। নায়িকার ভূমিকায় ছিল নতুন মুখ। বিক্রান্তের বিপরীতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন মেধা শঙ্কর। অল্প সময়ের মধ্যেই দর্শকের কাছে প্রশংসা কুড়োতে শুরু করে এই ছবি। সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই ছবির চিত্রনাট্য নির্মাণ করা হয়েছে। বাস্তবের মনোজ-শ্রদ্ধার প্রেমকাহিনিও কোনও অংশে বলিউডের ছবি থেকে কম নয়।
‘টুয়েলফ্থ ফেল’ ছবিতে মনোজকুমার শর্মার চরিত্রে অভিনয় করেন বিক্রান্ত। বাস্তবে আইপিএস অফিসার পদে কর্মরত রয়েছেন মনোজ।
বিক্রান্তের বিপরীতে ‘টুয়েলফ্থ ফেল’ ছবিতে অভিনয় করেছেন মেধা। শ্রদ্ধা জোশীর চরিত্রটি বড় পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। বাস্তব জীবনে শ্রদ্ধা এক জন আইআরএস অফিসার।
বাস্তবে মনোজ এবং শ্রদ্ধার প্রেমকাহিনি শুনে বলিউডি রোম্যান্টিক ছবির কথা মনে উঁকি দিতে বাধ্য।
সম্প্রতি লল্লনটপকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মনোজ তাঁর সঙ্গে শ্রদ্ধার সম্পর্ক নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। মনোজ জানান, শ্রদ্ধার নাম শুনেই তিনি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। যে দিন প্রথম দেখা হয় সে দিনই বুঝেছিলেন শ্রদ্ধার মধ্যে কোনও একটি বিশেষত্ব রয়েছে। সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানান মনোজ।
ভালবাসা ছাড়া এক মুহূর্তও বাঁচা যায় না, এমনটাই মনে করেন মনোজ। যখন তিনি শ্রদ্ধার প্রেমে পড়েছিলেন তখন থেকেই নিজেকে শ্রদ্ধার আদর্শ জীবনসঙ্গী হিসাবে গড়া শুরু করেছিলেন বলে জানান মনোজ।
দিল্লির মুখার্জিনগরের একটি ইউপিএসসি কোচিং সেন্টারে শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় মনোজের। হিন্দি সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ ছিল শ্রদ্ধার। সে কথা কোচিং সেন্টারের এক শিক্ষককে জানানোর পর তিনি শ্রদ্ধাকে মনোজের সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দেন।
সাক্ষাৎকারে মনোজ জানান, আলাপচারিতার সময় যখন শ্রদ্ধা নিজের পরিচয় দিচ্ছিলেন তখনই নাকি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন মনোজ। দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব বাড়তে থাকে। শ্রদ্ধাকে ধীরে ধীরে ভালবেসে ফেলেন মনোজ।
মনোজ জানান, তাঁর কাছ থেকে প্রেমের প্রস্তাব পাওয়ার পর তা ফিরিয়ে দেন শ্রদ্ধা। মনোজ বলেন, ‘‘আমার প্রস্তাব শুনে শ্রদ্ধা চমকে উঠেছিল। আমায় জিজ্ঞাসা করেছিল আমি হঠাৎ পাগল হয়ে গেলাম কি না।’’
শ্রদ্ধা মানা করে দেওয়ার পর মনোজ বন্ধুত্বের পথ বেছে নেন। মনোজ বলেন, ‘‘আমি মনে করেছিলাম যত দিন শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছি, তত দিন ওর কাছে নিজের ভালটুকু রাখার চেষ্টা করে যাব। কোনও দিন হয় তো ওর বিয়ে হয়ে যাবে। তত দিন অন্তত সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাই।’’
শ্রদ্ধার মন জয় করার জন্য চা বানানো শিখেছিলেন মনোজ। তিনি বলেন, ‘‘শ্রদ্ধা পাহাড়ি এলাকার মেয়ে। পাহাড়ের বাসিন্দারা ঘুম থেকে উঠে চা পান করেন। ঘুমোতে যাওয়ার আগেও চা পান করেন। তাই ওর জন্য আমি ভাল করে চা বানানো শিখেছিলাম।’’
সাক্ষাৎকারে মনোজ জানান, কোচিং সেন্টার থেকে অনেকটাই দূরে থাকতেন শ্রদ্ধা। প্রতি দিন তাঁর জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে যেতেন মনোজ। দুটো রুটি, আচার এবং শ্রদ্ধার প্রিয় একটি তেলেভাজাও নিয়ে যেতেন মনোজ।
তবে শ্রদ্ধার জন্য কখনও মূল লক্ষ্য থেকে সরে যাননি মনোজ। বরং তাঁকে পড়াশোনার সময় সাহায্য করতেন শ্রদ্ধা।
মনোজ সাক্ষাৎকারে জানান, তাঁর লেখার মান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতেন শ্রদ্ধা। এমনকি পড়ার জন্য মনোজকে নোটসও তৈরি করে দিতেন তিনি।
মনোজের দাবি, পড়াশোনা করার সময় যথেষ্ট কড়া থাকতেন শ্রদ্ধা। তিনি বলেন, ‘‘আমার বন্ধুরা শ্রদ্ধাকে ভয় পেত খুব। ওরা জানত শ্রদ্ধা কখন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে। তার আগেই ওরা পালিয়ে যেত।’’
মনোজ এবং শ্রদ্ধা দু’জনেই ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন। ২০০৫ সালে সাত পাকে বাঁধা পড়েন দু’জনে।
মনোজ এবং শ্রদ্ধার প্রেমকাহিনি মনোজের সহপাঠী অনুরাগ পাঠককে এতটাই মুগ্ধ করেছিল যে তা নিয়ে একটি উপন্যাস লিখে ফেলেন তিনি। এই উপন্যাসের উপর ভিত্তি করেই ‘টুয়েলফ্থ ফেল’ ছবির চিত্রনাট্য নির্মাণ করা হয়েছে।