ইরান এবং পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের আবহে কার সামরিক ভান্ডার কত শক্তিশালী, কার ভান্ডারে কত ঘাতক অস্ত্র আছে, তা নিয়ে তুল্যমুল্য বিচার এবং চর্চা চলছে বিভিন্ন মহলে। তবে ইরানের অস্ত্রভান্ডার পাকিস্তানের তুলনায় যে অনেকটাই শক্তিশালী তা বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
সম্প্রতি পাকিস্তানের বালুচিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। সেই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে প্রায় যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়েছে। হামলার শিকার হয়ে পাল্টা হামলা করতে ছাড়েনি পাকিস্তানও। ইরানের সিস্তান বালুচিস্তান প্রদেশে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তারা।
হামলা এবং পাল্টা হামলার কারণ হিসাবে দুই দেশই ব্যাখ্যা দিয়েছে, জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতেই এই সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। দু’পক্ষেরই দাবি, হামলায় মৃত্যু হয়েছে সাধারণ নাগরিকের। ইরান এবং পাকিস্তানের হামলা-পাল্টা হামলার আবহে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল ধরে।
পাক হামলাকে মোটেও ভাল চোখে দেখেনি ইরান। তাদের বিদেশ মন্ত্রক তেহরানে পাকিস্তানের সবচেয়ে ‘প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ’ কূটনীতিককে তলব করে এবং তাঁর কাছ থেকে পাক হামলার কৈফিয়তও চায়। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী জলিল আব্বাস জিলানি এবং ইরানের বিদেশমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের মধ্যে ফোনে কথা হওয়ার পর উভয় দেশেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে।
কিন্তু দুই দেশের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ লেগে গেলে পাকিস্তান কি ইরানের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারত? সাময়িক সংঘাতের আবহে এই প্রশ্নই বিভিন্ন মহলে ঘুরপাক খেতে শুরু করেছিল। এই আবহে আমেরিকার সেন্ট্রাল কমান্ডের জেনারেল কেনেথ ম্যাকেঞ্জির একটি তথ্য ফের আলোচনার বৃত্তে চলে এসেছে।
কেনেথ ম্যাকেঞ্জি ২০২২ সালে দাবি করেছিলেন, ইরানের কাছে তিন হাজারের বেশি ‘ব্যালিস্টিক মিসাইল’ রয়েছে। যা পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি। শুধু তাই-ই নয়, তাদের অস্ত্রভান্ডারে এত রকমের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে যা পাকিস্তানকে ধরাশায়ী করার পক্ষে যথেষ্ট।
ম্যাকেঞ্জি জানিয়েছেন, আকাশপথে ইরান থেকে পাকিস্তানের দূরত্ব ১৫০০ কিলেোমিটার। তাঁর দাবি, ইরান যদি মনে করে তাদের পশ্চিম প্রান্ত থেকে করাচি বিমানবন্দর যে কোনও মুহূর্তে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। শুধু তাই-ই নয়, ইরান যদি সীমান্ত থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে তা হলে পেশোয়ার, ইসলামাবাদ, লাহোর, করাচি এবং কোয়েটার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি একেবারে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।
ইরানের সামরিক অস্ত্রভান্ডারে যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলি রয়েছে সেগুলি কতটা শক্তিশালী? পাল্লাই বা কত? বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডারের অন্যতম সদস্য ‘শাহাব-৩’। এটি মাঝারি পাল্লার। উত্তর কোরিয়ার ‘নোডোং-১’ ক্ষেপণাস্ত্রের অনুকরণে তৈরি। এই ক্ষেপণাস্ত্র ১০০০ থেকে সর্বাধিক ২০০০ কিলোমিটার দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ‘ক্লাস্টার মিউনিশন’ পদ্ধতি যোগ করা হয়েছে। ফলে একসঙ্গে পাঁচ জায়গায় হামলা চালাতে পারে ‘শাহাব-৩’।
ইরানের আরও একটি মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হল ‘গদর’। ১৮০০ থেকে ২০০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে এই ক্ষেপণাস্ত্র। এটি অত্যন্ত দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র। ঘণ্টায় ১১ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে পারে এটি।
ইরানের মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের তালিকায় রয়েছে ‘এমাদ’। এটি ১৭০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম। এই ক্ষেপণাস্ত্রের বিশেষত্ব হল ‘ম্যানুভারেবল রিএন্ট্রি ভেহিকল’ প্রযুক্তি। অর্থাৎ যার মাধ্যমে প্রয়োজনে ক্ষেপণাস্ত্রের দিশাও বদলানো যায়। ২০১৬ থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে ইরান।
আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্র হল ‘খোররমশহর’। ২০ টনের এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ২০০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। ঘণ্টায় ৯,৮৭৮ থেকে ১৭,২৮৭ কিলোমিটার বেগে লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করতে পারে। অর্থাৎ পাকিস্তানের যে কোনও জায়গাকে কয়েক সেকেন্ডে গুঁড়িয়ে দিতে পারে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডারের তালিকায় রয়েছে ‘ফাতাহ’। ১৪০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে এটি। ঘণ্টায় সাড়ে ১৮ হাজার কিলোমিটার গতিতে হামলা চালাতে পারে। রাডারেও ধরা পড়বে না এই ক্ষেপণাস্ত্র।
‘খেইবার শেকান’ এবং ‘শেজ্জিল’ও ইরানের সামরিক ভান্ডারের দুই শক্তিশালী হাতিয়ার। ঘণ্টায় ৬ হাজার কিলোমিটার বেগে হামলা করতে পারে ‘খেইবার শেকান’। যে কোনও মুহূর্তে যে কোনও দিকে লক্ষ্য ঘোরানো যায় এর। ‘সেজ্জিল’ও শক্তির দিকে কম যায় না। ঘণ্টায় সাড়ে ১৭ হাজার কিলোমিটার গতিতে ২৫০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এটি। সর্বাধিক দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে ৪৫০০ কিলোমিটার।