মুকেশ অম্বানী, রতন টাটা এবং গৌতম আদানির মতো ভারতের প্রথম সারির শিল্পপতিরা সম্পত্তির নিরিখে এগিয়ে রয়েছেন। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির অধিকারী হয়ে তাঁরা বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকায় নামও লিখিয়ে ফেলেছেন। তবে ভারতের প্রথম কোটিপতি টাটা-অম্বানীদের মতো তাবড় শিল্পপতিদেরও টেক্কা দিয়েছেন।
ইতিহাসের পাতা উল্টে অনেকে দাবি করেন, চেঙ্গিজ় খান পৃথিবীর সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ধনী শাসক। কিন্তু ভারতের এমন এক রাজা ছিলেন, যাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১৯ লক্ষ কোটি টাকা। এই বিত্তশালী ব্যক্তি আর কেউ নন, হায়দরাবাদের শেষ নিজ়াম মির ওসমান আলি খান।
১৮৮৬ সালের ৬ এপ্রিল জন্ম নিজ়াম ওসমানের। বিশ্বের সর্বকালের সেরা ধনীদের তালিকায় ওসমানের স্থান চার নম্বরে। স্বাধীনতার পরেও তিনি জীবিত ছিলেন।
১৯১১ সালে ২৫ বছর বয়সে হায়দরাবাদের সিংহাসনে বসেছিলেন ওসমান। ৩৭ বছর রাজত্ব করেছিলেন তিনি। তাঁর সম্পত্তির অধিকাংশ গোলকোন্ডার হিরের খনি থেকে আসত। ওসমানের কাছেও বহু দামি দামি ধনরত্ন ছিল বলে দাবি ইতিহাসবিদদের।
ইতিহাসবিদদের একাংশের দাবি, ওসমানের কাছে ১৮৫ ক্যারাট ওজনের ‘জ্যাকব’ হিরে ছিল। কাগজ চাপা দেওয়ার জন্য ‘পেপারওয়েট’ হিসাবে এই হিরেই ব্যবহার করতেন তিনি।
তা ছাড়া ওসমানের কাছে ছিল ‘হোপ’, ‘দারয়া-এ-নুর’, ‘নুর-উল-আইন’, ‘প্রিন্সি’, ‘রিজেন্ট’, ‘উইটেল্সব্যাচ’-এর মতো দামি হিরে। শোনা যায়, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে বিয়ে উপলক্ষে প্রচুর ধনরত্ন উপহার দিয়েছিলেন ওসমান। তার মধ্যে ছিল বিশেষ ধরনের মুকুট এবং গলার হার।
নিজস্ব মুদ্রা তৈরির জন্য আলাদা মিন্ট ছিল ওসমানের। যাতায়াতের সুবিধার জন্য ব্যক্তিগত একটি বিমানও ছিল তাঁর।
নানা ধরনের বিলাসবহুল গাড়ি সংগ্রহে রাখার শখ ছিল ওসমানের। ইতিহাসবিদদের দাবি, ৫০টি রোলস রয়েস ছিল তাঁর সংগ্রহে।
ইতিহাসবিদদের একাংশ জানান, ১০০০ কোটি টাকা মূল্যের হিরে, ১০০০ কোটি টাকার সোনার পাশাপাশি ৪২০০ কোটি টাকার অন্যান্য ধনরত্ন ছিল ওসমানের সংগ্রহে।
নিজ়াম ওসমানের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২৩০ বিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় আজকের হিসাবে প্রায় ১৯ লক্ষ কোটি টাকা)। ২০১৮ সালে এক বেসরকারি সংস্থার গবেষণার নিরিখে তিনিই বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তকমা পেয়েছিলেন।
‘নাইট গ্র্যান্ড কমান্ডার অফ স্টার অফ ইন্ডিয়া’ উপাধিতেও ভূষিত হয়েছিলেন ওসমান। হায়দরাবাদ হাই কোর্ট-সহ সেই শহরের একাধিক ভবনের উন্নয়নের জন্য তাঁর কৃতিত্বই স্বীকার করা হয়।
ব্রিটিশদের সঙ্গে নাকি ভাল সম্পর্ক ছিল ওসমানের। ওসমানের রাজত্ব চলাকালীন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের অস্ত্র এবং অর্থ পাঠিয়ে সাহায্য করেছিলেন ওসমান। এমনটাই ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়।
ধনরত্নের প্রাচুর্য থাকলেও ঘরদোর নাকি নোংরা করে রাখতেন ওসমান। ইতিহাসবিদদের অনেকেই বলেন, বছরে মাত্র এক বার নিজের শোয়ার ঘর পরিষ্কার করতেন নিজ়াম।
ওসমানের প্রাসাদে কোনও অতিথি এলে নাকি এলাহি আয়োজন থেকে দূরে থাকতেন নিজ়াম। ইতিহাসবিদদের একাংশের দাবি, অতিথিদের শুধুমাত্র বিস্কুট দিয়েই আপ্যায়ন সারতেন ওসমান।
১৯৬৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন নিজ়াম ওসমান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। হায়দরাবাদের শেষ নিজ়াম ছিলেন তিনিই।