রাতের শহরে আমোদ-প্রমোদের আদর্শ জায়গা ‘নাইট ক্লাব’। সুরাপান থেকে নাচগান— সবই হয় নাইট ক্লাবগুলিতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রতিটি নাইট ক্লাবে আলাদা করে রাখা হয় ‘বাউন্সার’। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে এই বাউন্সাররাই মারপিট করেছেন, এমন অভিযোগও রয়েছে।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে গুরগাঁওয়ের এক নামকরা নাইট ক্লাবে বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছিলেন বনবিভাগের এক কর্মী। অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে তাঁদের ক্লাব থেকে বার করে দেন বাউন্সাররা।
গুরগাঁওয়ের অন্য একটি নাইট ক্লাবের ম্যানেজার-সহ ছ’জন বাউন্সারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ, নাইট ক্লাবে আসা গ্রাহকদের মারধর করে ক্লাবের বাইরে বার করে দেন তাঁরা।
পরে পুলিশি তদন্তে জানা যায়, তাঁদের মধ্যে থাকা দু’জন বাউন্সারের নাম ইতিমধ্যেই পুলিশের খাতায় রয়েছে। পুরনো অপরাধী তাঁরা।
গুরগাঁও শহরে প্রায়শই এই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। কখনও কোনও যুগলের সঙ্গে, আবার কখনও সেনাকর্মীর সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছেন শহরের খ্যাতনামা নাইট ক্লাবগুলির বাউন্সারেরা।
ক্লাবের ম্যানেজার এই প্রসঙ্গে জানান, কাজে নেওয়ার আগে বাউন্সারদের কোনও কঠিন প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় না।
তাঁদের একটি মাত্র বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়— কেউ যতই অশালীন আচরণ করুন, বাউন্সাররা যেন কখনও রাগের বশে কোনও কাজ করে না বসেন।
বার অথবা নাইট ক্লাবে এই বাউন্সাররা কাজ পান কী ভাবে? সাধারণত, ক্লাব অথবা নাইট ক্লাব থেকে সরাসরি বাউন্সার পদের জন্য খোঁজ করা হয়। আবার, আলাদা কিছু সংস্থাও রয়েছে, যেখান থেকে বাউন্সারের খোঁজ পাওয়া যায়।
প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না ঠিকই, কিন্তু এই পদে চাকরি করতে হলে শারীরিক গঠনের দিকে নজর দেওয়া দরকার।
ভারী ওজনের, লম্বা-চওড়া তো হতেই হবে, তাঁদের উচ্চতা কোনও মতেই ৫ ফুট ১১ ইঞ্চির কম হলে চলবে না।
সারা সপ্তাহে বার বা নাইট ক্লাবে বাউন্সার সংখ্যা দু’-তিন জন থাকলেও সপ্তাহান্তে ভিড় বাড়ার কারণে কমপক্ষে নয় থেকে দশ জন বাউন্সারের প্রয়োজন হয়। নাইট ক্লাব বা বারের আয়তন অনুসারে অবশ্য এই সংখ্যা নির্ধারিত হয়।
সন্ধ্যা একটু গড়িয়ে গেলে তাঁদের কাজ শুরু হয়। মাঝরাতে যত ক্ষণ পর্যন্ত বার বা নাইট ক্লাব বন্ধ না হচ্ছে, তত ক্ষণ উপস্থিত থাকতে হয় বাউন্সারদের।
সারা দিনে কয়েক ঘণ্টা কাজ করে তাঁরা প্রতি মাসে ১৮ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা বেতন পান।
আবার সপ্তাহান্তে নাইট ক্লাবে ভিড় থাকলে এজেন্সি থেকে আলাদা করে বাউন্সারদের আনা হয়। সেই ক্ষেত্রে সপ্তাহান্তে তাঁরা দুই থেকে তিন হাজার টাকা বেতন পান।
বাউন্সারদের অনেকেই অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। অনেকে ওয়েটলিফটিং করেন, অনেকে আবার কুস্তিগিরও। কেউ কেউ আবার জিমে প্রশিক্ষকের পেশায় কর্মরত থাকেন।
নাইট ক্লাবে কখনও পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে গেলে তা কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তা শেখানোর জন্য মাঝেমধ্যে নামজাদা নাইট ক্লাবের ম্যানেজারেরা প্রাক্তন সেনাকর্মীদের সাহায্যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থাও করে থাকেন।
তাঁরা কোনও অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না, তা জানার জন্য ক্রিমিনাল রেকর্ডও দেখা হয়।
তাঁদের কাছে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র আছে কি না, তা-ও দেখা হয়।