লেবাননে ইজ়রায়েলের হামলার এক দিন পরেই প্রতিশোধ নিয়েছে হিজ়বুল্লা। সে দেশের প্রশাসনিক রাজধানী তেল আভিভকে লক্ষ্য করে পর পর রকেট বর্ষণ করেছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী।
সে সব রকেটের কয়েকটি নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে আকাশপথেই ঠেকাতে পেরেছে ইজ়রায়েল। কিন্তু অনেক রকেট আছড়ে পড়েছে তেল আভিভের মাটিতে। একাধিক ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে গিয়েছে বলে খবর।
ইজ়রায়েলের সেনাবাহিনীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রবিবার লেবাননের দিক থেকে অন্তত ২৪০টি রকেট ছোড়া হয়েছে তেল আভিভকে লক্ষ্য করে।
তবে এর মধ্যেই এমন এক দাবি ইজ়রায়েল করেছে, যা নিয়ে হইচই প়ড়ে গিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। কিন্তু কী সেই দাবি?
ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের মতে, ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে ইজ়রায়েলি অস্ত্র দিয়েই হামলা চালাচ্ছে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজ়বুল্লা!
ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সেনাকর্তারা দাবি করেছেন, হিজ়বুল্লা তাদের বিরুদ্ধে যে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে তা এক সময়ে ইজ়রায়েলের হাতে ছিল। যুদ্ধের সময় তা কোনও ভাবে হিজ়বুল্লা হাতিয়ে নিয়েছিল। তার উপরেই ‘রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং’ বা বিশেষ কারিকুরি করে ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইজ়রায়েলের দাবি, ২০০৬ সালে লেবাননে হিজ়বুল্লার সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালীন তাদের ওই ‘স্পাইক অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক’ ক্ষেপণাস্ত্রগুলি বাজেয়াপ্ত করেছিল ওই সশস্ত্র গোষ্ঠী। এর পর সেগুলি ক্লোনিংয়ের জন্য বন্ধু এবং প্রধান সমর্থক ইরানের কাছে পাঠিয়েছিল তারা।
ইরানে এই ক্ষেপণাস্ত্রের নকশা এবং কার্যকারিতাকে আরও পোক্ত করা হয়। যে বিশেষ প্রযুক্তিতে ক্ষেপণাস্ত্রগুলি তৈরি করা হয়েছিল তা হাতিয়ে উন্নত করা হয় সেগুলিকে।
সেই ঘটনার ১৮ বছর পর নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের রূপে পুরনো সেই ক্ষেপণাস্ত্রই ইজ়রায়েলের সামরিক ঘাঁটি, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপর নিক্ষেপ করছে হিজ়বুল্লা।
ক্ষেপণাস্ত্রগুলি এত নির্ভুল ভাবে লক্ষ্যস্তুতে আঘাত হানছে যে, তা ইজ়রায়েলি বাহিনীকে যথেষ্ট চাপের মুখে রেখেছে বলেও খবর। উল্লেখ্য, ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পাল্লা ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং লক্ষ্যবস্তুকে ‘ট্র্যাক’ এবং ‘লক’ করার জন্য উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে সেগুলিতে।
ইরান এবং তার মদনপুষ্ট বাহিনীদের শত্রু দেশের ক্ষেপণাস্ত্র ‘ক্লোন’ করে এবং সেগুলিকে অত্যাধুনিক বানিয়ে পাল্টা হামলা চালানোর ঘটনা নতুন নয়। এর আগে আমেরিকার ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রের নকশা এবং প্রযুক্তিও নকল করতে দেখা গিয়েছিল ইরানকে।
বর্তমানে হিজ়বুল্লার অস্ত্রভান্ডারের অন্যতম শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র আলমাস। তবে সেই ক্ষেপণাস্ত্রের বেশ কয়েকটি বাজেয়াপ্ত করেছে ইজ়রায়েল। সেগুলি পরীক্ষা করেই ওই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে তাদের। সংবাদমাধ্যমে তেমনটাই জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সে দেশের এক সেনাকর্তা।
আরবি এবং ফার্সি ভাষায় আলমাস কথার অর্থ হিরে। এটি এমন একটি নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র, যা ড্রোন, হেলিকপ্টার এবং টিউব থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়।
হিজ়বুল্লা যে ইজ়রায়েলি অস্ত্র ক্লোন করে ইজ়রায়েলের উপরই প্রয়োগ করছে, তা মনে করছেন পশ্চিমি দেশগুলির প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা এবং অস্ত্র বিশেষজ্ঞেরাও।
পশ্চিম এশিয়ার অস্ত্র বিশ্লেষক মহম্মদ আল-বাশার দাবি, আলমাস ক্ষেপণাস্ত্র হল অন্যের অস্ত্রের উপর কারিকুরি করে ইরানের তৈরি অস্ত্রের উদাহরণ।
এই ক্ষেপণাস্ত্র আঞ্চলিক শক্তির গতিবিধিকে মৌলিক ভাবে পরিবর্তন করছে বলেও বাশা জানিয়েছেন। বাশা আরও বলেছেন, ‘‘এক সময়ের পুরনো ক্ষেপণাস্ত্রগুলি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সাজিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে।’’
উল্লেখ্য, শনিবারই লেবাননের রাজধানী বেরুটে হিজ়বুল্লার ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল ইজ়রায়েল। তাতে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল বলে খবর। হিজ়বুল্লার তরফে সে দিনই প্রতিশোধের বার্তা দেওয়া হয়।
রবিবারই পাল্টা হামলার পথে হাঁটে তারা। তেল আভিভে হামলার দায় স্বীকার করে নিয়ে হিজ়বুল্লা জানিয়েছে, ইজ়রায়েলি শহর এবং তার আশপাশের সেনাঘাঁটি ছিল তাদের লক্ষ্য।
ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) রবিবারের হামলা প্রসঙ্গে জানিয়েছে, তেল আভিভ এবং তার আশপাশে বেশ কয়েকটি বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। কিছু বাড়িতে আগুন লেগে গিয়েছে। অনেক সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন। তবে কারও আঘাত তেমন গুরুতর নয় বলে জানিয়েছে ইজ়রায়েলি সেনা। সেই আবহে নয়া দাবি করলেন ইজ়রায়েলের সেনাকর্তারা।