গ্রিস উপকূলে আথেন্সের কাছে উদ্ধার হল প্রাচীন গুপ্তধন। সন্ধান মিলল জলের তলায় ডুবে যাওয়া ভবনেরও। আর তা নিয়ে গ্রিস জুড়ে হইচই পড়ে গিয়েছে। গুপ্তধন এবং সমুদ্রের তলায় ডুবে থাকা ভবন নজর কেড়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ইতিহাসবিদদেরও।
সম্প্রতি, আথেন্সের কাছে সালামিস নামে একটি দ্বীপে অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন গ্রিসের সংস্কৃতি মন্ত্রকের ১২ জন প্রত্নতত্ত্ববিদ। উদ্দেশ্য ছিল, দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় খননকার্য চালিয়ে ঐতিহাসিক নিদর্শন খুঁজে বার করা।
সেই অভিযান চলাকালীনই প্রত্নতাত্ত্বিকরা সালামিস দ্বীপের একটি জায়গায় সমুদ্রের নীচে খননকার্য চালাচ্ছিলেন। তখনই তাঁরা সমুদ্রের তলায় আংশিক ভাবে নিমজ্জিত একটি বিশাল বাড়ির সন্ধান পান। খুঁজে পাওয়া দিয়েছে সেই ভবনে দীর্ঘ দিন ধরে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধনেরও।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রত্নতাত্ত্বিকেরা যে ভবনটি খুঁজে পেয়েছেন, তাতে এক সময়ে বহু মানুষ বসবাস করত বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২২ সাল থেকেই সালামিস দ্বীপে খোঁজ চালাচ্ছিলেন গ্রিসের সংস্কৃতি মন্ত্রকের গবেষকরা। খোঁজ চালাতে চালাতে সালামিসের পূর্ব তীরে ডুবুরিদের দল ওই প্রাচীন ভবনের অবশিষ্টাংশের খোঁজ পান।
প্রাথমিক ভাবে, প্রত্নতাত্ত্বিকেরা সালামিস শহরের চারপাশে সমুদ্রের নীচে একটি প্রাচীরের ভগ্নাংশ আবিষ্কার করেন। মনে করা হয়েছিল, গ্রিসের প্রাচীন এই শহরকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করতে এক সময় তা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, সেই প্রাচীর সমুদ্রগর্ভে চলে গিয়েছে। আবার ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, ওই প্রাচীরটি কোনও প্রাচীন দুর্গের অংশ ছিল।
পরবর্তী কালে আরও খোঁজ চালিয়ে ওই বিশাল ভবনটি খুঁজে পান প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। প্রাচীন গ্রিসে এই ধরনের ভবনকে ‘স্টোয়া’ বলা হত। এই ধরনের ভবনগুলি সমুদ্রের তীরে তৈরি করা হত।
স্টোয়ার ছাদ মূলত খোলা এবং বিস্তৃত থাকত। সমুদ্রের ধারে এই ধরনের ভবনের ছাদগুলিতে বাজার বসত। বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাবেশের জন্যও ব্যবহৃত হত ভবনগুলি।
ইতিহাসের বুকে সালামিস দ্বীপ ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। ৪৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিক-পার্সিয়ানদের মধ্যে যুদ্ধ বাধে এই সালামিস দ্বীপেই, যা ইতিহাসে ‘সালামিসের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। সেই যুদ্ধে জয় পেয়েছিল গ্রিস।
গ্রিসের সংস্কৃতি মন্ত্রকের মতে, সে দেশের প্রাচীন শহরের বিন্যাস এবং আবাসিক সংগঠন বোঝার জন্য স্টোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। সালামিসে যে স্টোয়া ভবনটির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে, সেটির দৈর্ঘ্য ১০৫ ফুট এবং প্রস্থ ২০ ফুট। সেই ভবনের মধ্যে সাতটি কক্ষের অবশিষ্টাংশ রয়েছে।
কক্ষগুলির প্রত্যেকটিতে এখনও প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। এই কক্ষগুলির এক একটির ক্ষেত্রফল ১৫ বর্গফুটেরও বেশি। এখানকারই একটি কক্ষ থেকে উদ্ধার হয়েছে গুপ্তধন।
এই গুপ্তধনের মধ্যে রয়েছে প্রায় দু’ডজন ব্রোঞ্জের মুদ্রা, ফুলদানি, মার্বেল টুকরো এবং সিরামিক টুকরা। মার্বেল শিল্পকর্মের মধ্যে দু’টি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।
একটি হল দু-তিনটি শ্লোক লেখা আংশিক শিলা। অন্যটিতে একটি দাড়িওয়ালা মানুষের মূর্তি খোদাই করা রয়েছে। তবে দু’টি মার্বেল পাথরই দীর্ঘ দিন ধরে জলের তলায় থাকার কারণে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত।
ওই প্রাচীন ডুবে যাওয়া ভবন কোন সময়ে তৈরি হয়েছিল এবং কারা সেই বাড়ি তৈরি করেছিল, তা নিয়ে গ্রিস জুড়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
আংশিক ভাবে নিমজ্জিত ওই ভবন এবং উদ্ধার হওয়া সেই গুপ্তধন খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীর বলে মনে করছেন ইতিহাসবিদদের একাংশ। তবে তা নিয়ে আরও পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। ওই ভবনের পাশাপাশি কোনও শহর উদ্ধার হয় কি না, তা নিয়েও গবেষণা চলছে।
সমুদ্রের জলে আংশিক নিমজ্জিত ওই ভবন এবং গুপ্তধনের ছবি প্রকাশ্যে এনেছে গ্রিসের সংস্কৃতি মন্ত্রক। সেই ছবিগুলি ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।