Indo France Military Drills

৪০ যুদ্ধবিমানের রণসজ্জা, ‘গল’ পরমাণু রণতরীর সঙ্গে এ বার সমুদ্রে দাপাবেন ভারতীয় নৌযোদ্ধারা!

ভারতীয় জলযোদ্ধাদের সঙ্গে মহড়া চালাবে ফরাসি পরমাণু বিমানবাহী রণতরী ‘চার্লস দে গল’। তুলা নৌসেনা ছাউনি থেকে ইতিমধ্যেই তা রওনা হয়ে গিয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:২৯
Share:
০১ ১৮

ভারত মহাসাগরে মেগা সামরিক মহড়া। ফরাসি পরমাণু বিমানবাহী রণতরীর সঙ্গে যুদ্ধাভ্যাসে গা ঘামাবেন এ দেশের নৌযোদ্ধারা। মহড়ায় অংশ নেবে ডুবোজাহাজ থেকে শুরু করে ‘ডেস্ট্রয়ার’ ও ‘ফ্রিগেট’ ক্যাটেগরির যুদ্ধপোত। আর এই ঘটনাকে ‘গল’ দেশটির সঙ্গে নয়াদিল্লির অটুট বন্ধন হিসাবেই দেখছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা।

০২ ১৮

ফ্রান্সের ‘শার্লে দে গল’। পরমাণু শক্তিচালিত এই বিমানবাহী রণতরীকেই এ বার ভারত মহাসাগরে রওনা করিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাকরঁ। উদ্দেশ্য, প্রথমে ভারতীয় নৌসেনার সঙ্গে সামরিক মহড়া। দ্বিতীয় পর্যায়ে আমেরিকা এবং জাপানি নৌসেনার সঙ্গেও যুদ্ধাভ্যাস চালাবে সুবিশাল এই ফরাসি যুদ্ধপোত।

Advertisement
০৩ ১৮

চলতি বছরের ২৮ নভেম্বর দক্ষিণ ফ্রান্সের তুলো নৌবন্দর থেকে নোঙর তুলে যাত্রা শুরু করে ‘শার্লে দে গল’। বিমানবাহী রণতরীটির সঙ্গে ভারতে আসছে তিনটি ফ্রিগেট, যাদের ‘আকাশ প্রতিরক্ষা’র (এয়ার ডিফেন্স) কাজে ব্যবহার করে ফরাসি নৌসেনা। এ ছাড়া ‘শার্লে দে গল’-এর নিরাপত্তায় রয়েছে একটি ডুবোজাহাজও।

০৪ ১৮

পরমাণু শক্তিচালিত ‘স্ট্রাইক গ্রুপের’ ফরাসি রণতরীটিতে রয়েছে ৪০টি যুদ্ধবিমান। এটি লম্বায় ২৬০ মিটার। তিনটি ফ্রিগেট, ডুবোজাহাজ-সহ ‘শার্লে দে গল’-এ মোতায়েন রয়েছেন তিন হাজার ফরাসি নাবিক-সৈনিক। তাঁদের নেতৃত্বে রয়েছেন পোড়খাওয়া নৌসেনাপতি রিয়ার অ্যাডমিরাল জ্যাক ম্যালার্ড।

০৫ ১৮

ভারত মহাসাগরে এ দেশের নৌসেনার দু’টি বিমানবাহী রণতরী— ‘আইএনএস বিক্রান্ত’ এবং ‘আইএনএস বিক্রমাদিত্য’-এর সঙ্গে যুদ্ধের মহড়া দেবে ‘শার্লে দে গল’। ফলে ফরাসি নৌযুদ্ধ পদ্ধতি সম্পর্কে পরিচিত হবেন ভারতীয় জলযোদ্ধারা। এর পর আমেরিকা এবং জাপানের সঙ্গে যুদ্ধাভ্যাসের জন্য ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় পাড়ি দেবে ‘শার্লে দে গল’।

০৬ ১৮

তুলো থেকে যাত্রা শুরুর আগে এই ধরনের সামরিক মহড়ার প্রয়োজনীয়তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন রিয়ার অ্যাডমিরাল ম্যালার্ড। তাঁর কথায়, ‘‘বিশ্ব জুড়ে শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে এগুলির খুবই প্রয়োজন রয়েছে। এর মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত হওয়ার এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।’’

০৭ ১৮

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের দাবি, গত কয়েক বছরে ফ্রান্স ও ভারতের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্কের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। সম্প্রতি প্যারিসকে ‘অদৃশ্য’ ডুবোজাহাজ নির্মাণের ‘পাম্পজেট প্রপালসান’ প্রযুক্তি নয়াদিল্লির হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলতে শোনা গিয়েছে। ডিজ়েল ও পরমাণু শক্তিচালিত দু’ধরনের ডুবোজাহাজেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফরাসি নৌবাহিনী।

০৮ ১৮

আগামী দিনে ডুবোজাহাজের সংখ্যা বাড়াতে ‘প্রজেক্ট ৬৬’ এবং ‘প্রজেক্ট ৭৭’ নামের দু’টি প্রকল্প শুরু করবে ভারত। ইতিমধ্যেই প্রাথমিক স্তরে তার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে নয়াদিল্লি। সূত্রের খবর, এই দুই প্রকল্পে মূলত ডিজ়েলচালিত ডুবোজাহাজ নির্মাণ করা হবে। আর সেগুলিতে থাকবে পাম্পজেট প্রপালসান প্রযুক্তি।

০৯ ১৮

বর্তমানে ‘ব্যারাকুডা’ শ্রেণির ডুবোজাহাজে বিশেষ এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ফরাসি নৌসেনা। ফলে সমুদ্রের নীচে তাঁদের ডুবোজাহাজের হদিস পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পাম্পজেট প্রপালসান প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়টি অবশ্য এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এই নিয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে মাকরঁ সরকার।

১০ ১৮

চলতি বছরের অক্টোবরে ফ্রান্স সফরে যান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত ডোভাল। তাঁর সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাকরঁ। সম্প্রতি নয়াদিল্লিকে একাধিক উন্নত হাতিয়ার বিক্রি ও তার ১০০ শতাংশ প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্যারিস। ফলে ডোভালের ওই সফর ঘিরে তুঙ্গে ওঠে জল্পনা।

১১ ১৮

প্রেসিডেন্ট মাকরঁ ছাড়াও ফরাসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুর সঙ্গেও বৈঠক করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডোভাল। ভারতীয় নৌসেনার জন্য ২৬টি ‘রাফাল মেরিন’ (রাফাল-এম) যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা রয়েছে নয়াদিল্লির। লেকর্নুর সঙ্গে এই বিষয়ে ডোভালের কথা হয়েছে বলে সূত্র মারফত মিলেছে খবর।

১২ ১৮

এ বছরের মাঝামাঝি রাফাল-এমের নির্মাণকারী সংস্থা ‘দাসো অ্যাভিয়েশন’ যুদ্ধবিমানগুলির চূড়ান্ত দামের তালিকা জমা করে। নয়াদিল্লির সঙ্গে এই প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে মরিয়া প্যারিস। আর তাই হামলাকারী বিমানগুলির দরে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে বলেও খবর প্রকাশ্যে এসেছে।

১৩ ১৮

এ বছরের মে মাসে নয়াদিল্লি সফর করে ফ্রান্সের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। সূত্রের খবর, ওই সময়েই রাফাল-এমের দাম নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়। ফলে ডোভালের এ বারের সফরে চুক্তির চূড়ান্ত নীল নকশা তৈরি হয়েছে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

১৪ ১৮

ফরাসি সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ২৬টির মধ্যে ২২টি এক আসন ও চারটি দুই আসনের রাফাল-এম যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি সেরে ফেলতে আগ্রহী নয়াদিল্লি। দুই আসনের যুদ্ধবিমানগুলিকে প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করবে ভারতীয় নৌসেনা।

১৫ ১৮

রাফাল-এম চলে এলে তা যে বিমানবাহী রণতরী ‘আইএনএস বিক্রান্ত’-এ মোতায়েন করা হবে, তা এক রকম স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ওই যুদ্ধপোতে রাশিয়ার তৈরি মিগ ২৯কে যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে ভারতীয় নৌসেনা। রাফাল হাতে পেলে পুরনো দিনের এই যুদ্ধবিমানগুলিকে অবসরে পাঠাবে নয়াদিল্লি।

১৬ ১৮

এ ছাড়া তিনটি ‘স্করপিয়ন’ শ্রেণির ডুবোজাহাজ তৈরি নিয়েও ফ্রান্সের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এগুলি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা মাজগাঁও ডকইয়ার্ডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি করবে ‘ফ্রেঞ্চ নেভাল গ্রুপ’ নামের সংস্থা। সূত্রের খবর, ডুবোজাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে যন্ত্রাংশের একটা বড় অংশ দেশীয় সংস্থাগুলি থেকে নেওয়ার শর্ত দিয়েছে নয়াদিল্লি। আর ফরাসি সংস্থাটির নকশায় ‘নিঃশব্দ ঘাতক’ ওই জলযানটিকে তৈরি করতে চাইছে ভারতীয় নৌসেনা।

১৭ ১৮

পাশাপাশি, পরমাণু ডুবোজাহাজ (নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন), জলের নীচের ড্রোন এবং যুদ্ধবিমানের ১১০ কিলো নিউটন থ্রাস্টের ইঞ্জিন নিয়েও নয়াদিল্লির সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে আগ্রহী ফরাসি প্রশাসন। বিশ্ব জুড়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়েও ভারতের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে পশ্চিম ইউরোপের গল দেশ।

১৮ ১৮

এই পরিস্থিতিতে ফরাসি পরমাণু বিমানবাহী রণতরীর সঙ্গে ভারতীয় নৌসেনার মহড়াকে ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞেরা। এতে এক দিকে চিন এবং পাকিস্তানের উপর চাপ তৈরি করা যাবে, অন্য দিকে ফ্রান্সের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার রাস্তা অনেক বেশি সহজ হবে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement