গত সপ্তাহেই টুইটারের মালিকানা পেয়েছেন ইলন মাস্ক। ৪৪০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে টুইটারের মালিকানা পেয়েছেন ইলন। তবে এটিই একমাত্র নয়। আমেরিকার এই ধনকুবেরের হাতে রয়েছে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করা একাধিক সংস্থা।
‘টেসলা’, ‘স্পেসএক্স’, ‘নিউরালিঙ্ক’ থেকে শুরু করে ‘দ্য বোরিং কোম্পানি’। ৫১ বছরের ইলনের রয়েছে মোট আটটি সংস্থার মালিকানা। আর এই আট সংস্থার আয়েই ইলন বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।
ইলন এই আটটি সংস্থার বেশির ভাগেরই প্রতিষ্ঠাতা অথবা সহ-প্রতিষ্ঠাতা৷ এই সংস্থাগুলি কী কাজ করে তা নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহলের ইয়ত্তা নেই।
টেসলা: ইলনের প্রাথমিক খ্যাতি এসেছিল এই সংস্থা থেকেই। ধনকুবের ইলন টেসলার সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও। ইলনের এই কোম্পানি অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক গাড়ি, এই সব গাড়ির ব্যাটারি এবং সৌরশক্তি চালিত বিভিন্ন যন্ত্র তৈরি করে। এই সব বৈদ্যুতিক গাড়ির নকশাও তৈরি করে টেসলা।
প্রাথমিক ভাবে ইলন টেসলার পরিচালনা পর্ষদের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, বিনিয়োগকারী এবং সদস্য হিসেবে ‘টেসলা’তে যোগ দেন। ২০০৮ সাল থেকে তিনি এই সংস্থার সিইও হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রাথমিক ভাবে ইলন পরিচালনা পর্ষদের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, বিনিয়োগকারী এবং সদস্য হিসেবে ‘টেসলা’তে যোগ দেন। ২০০৮ সাল থেকে তিনি এই সংস্থার সিইও হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০১৬ সালে টেসলা আমেরিকার সব থকে বড় সৌরশক্তি নিয়ে কাজ করা কোম্পানি সোলার সিটি কিনে নেয় এবং সৌরশক্তি চালিত যন্ত্রাংশ তৈরির সব থেকে বড় সংস্থা হয়ে ওঠে।
স্পেসএক্স: স্পেসএক্স হল আমেরিকার একটি বেসরকারি মহাকাশযান প্রস্তুতকারক এবং গবেষণা সংস্থা। এই সংস্থার প্রধান দফতর রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ায়।
২০০২ সালে ইলন এই সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। মহাকাশযান তৈরি করা এবং তা নিয়ে গবেষণা করার পাশাপাশি মহাকাশ উৎক্ষেপণ এবং মহাকাশে উপগ্রহ-ভিত্তিক যোগাযোগ স্থাপনের জন্যও এই সংস্থার নাম রয়েছে৷
ইলন স্পেসএক্স-এর সিইও। ২০০৮ সালে স্পেসএক্স-এর তৈরি ফ্যালকন-১ ব্যক্তিগত ভাবে তৈরি করা তরল জ্বালানিতে চলা রকেট ছিল যা পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছেছিল। এর পর থেকে পৃথিবীর কক্ষপথে একাধিক বার রকেট পাঠিয়েছে স্পেসএক্স। এমনকি, অন্যান্য গ্রহের পরিবেশকে মানুষের বসবাসযোগ্য তৈরি করা এবং সেই গ্রহগুলিতে শহর তৈরি করার জন্যও অনেক দিন ধরে গবেষণা চালাচ্ছে ইলনের এই সংস্থা। স্পেসএক্সের তরফে শনির বলয়েও মানুষের বাসযোগ্য শহর তৈরির পরিকল্পনা চলছে বলেও জল্পনা উঠেছিল।
স্পেসএক্সের অধীনে ‘স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট’ রয়েছে। এটি উপগ্রহের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদান করে।
নিউরালিঙ্ক: ইলন নিউরালিঙ্ক নামক এক সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা। এই সংস্থা একটি ‘নিউরোটেকনোলজি’ কোম্পানি। যা মানুষের মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্র তৈরি করছে এবং প্রয়োজনীয় গবেষণা চালাচ্ছে।
২০১৬ সালে ইলন, ম্যাক্স হোডাক এবং পল মেরোলা সান ফ্রান্সিসকো-ভিত্তিক এই সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। নিউরালিংক এখন এমন যন্ত্র তৈরি করে যা মানুষের মস্তিষ্ককে কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত করে। এর ফলে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে।
দ্য বোরিং কোম্পানি: ২০১৬ সালে ইলন ‘দ্য বোরিং কোম্পানি’ নামে এক সংস্থা তৈরি করেন। অবকাঠামো এবং টানেল নির্মাণকারী আমেরিকার এই সংস্থা দ্রুত এবং কম খরচে টানেল তৈরি করে। কেবল মাত্র বৈদ্যুতিক গাড়ি চলাচলের জন্য টানেলগুলি তৈরি করে এই সংস্থা। এই সংস্থার মূল লক্ষ্য, শহুরে যানজট উপশম করা এবং কম সময়ের মধ্যে যাতে দূরের রাস্তা তাড়াতাড়ি পেরিয়ে যাওয়া নিশ্চিত করা।
টেসলার ওয়েবসাইট অনুসারে, ‘দ্য বোরিং কোম্পানি’ হথর্নে প্রায় ২ কিমি দীর্ঘ একটি পরীক্ষামূলক টানেল তৈরি করেছে এবং বর্তমানে লাস ভেগাসেও তাঁরা একটি টানেল তৈরির কাজ চালাচ্ছে।
ওপেনএআই: ২০১৫ সালে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্সি (এআই) নিয়ে গবেষণা করার জন্য ‘ওপেনএআই’ নামে একটি পরীক্ষাগার তৈরি করেন ইলন। এই পরীক্ষাগারের লক্ষ্য, গবেষণার মাধ্যমে এমন একটি এআই তৈরি করা যা সমগ্র মানবজাতির উন্নতির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। সান ফ্রান্সিসকোতে এই পরীক্ষাগারটি তৈরি করেন ইলন।
২০১৯ সালে সালে, মাইক্রোসফটে্র কাছ থেকে ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছিল ‘ওপেনএআই’। বর্তমানে, ৩৭ বছর বয়সি স্যাম অল্টম্যান ‘ওপেনএআই’-এর সিইও।
জিপ-২: ১৯৯৫ সালে ভাই কিম্বল মাস্কের সঙ্গে যৌথ ভাবে জিপ-২ সংস্থা তৈরি করেন ইলন। এটি একটি অনলাইন পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ছিল। অনলাইনে মানচিত্র এবং দিকনির্দেশনা দেওয়া প্রথম দিকের সংস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম।
১৯৯৯ সালে আমেরিকার তথ্য প্রযুক্তি সস্থা ‘কমপ্যাক কম্পিউটার কর্পোরেশন’-এর কাছে ৩০ কোটি ডলারের বিনিময়ে ‘জিপ-২’ বিক্রি করে দেন ইলন।
এক্সডটকম: ১৯৯৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় হ্যারিস ফ্রিকার, ক্রিস্টোফার পেইন এবং এড হো-কে সঙ্গে নিয়ে ‘এক্সডটকম’ শুরু করেন ইলন। এটি ছিল একটি অনলাইন ব্যাঙ্ক। ২০০০ সালে সফটওয়্যার সংস্থা কনফিনিটির সঙ্গে এক হয়ে যায় ‘এক্সডটকম’। জন্ম হয় ‘পে প্যাল’-এর।
কনফিনিটির টাকা আদানপ্রদানের প্রক্রিয়া আরও সহজ ছিল বলে এই সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল ইলন। ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে ম্যাক্স লেভচিন, পিটার থিয়েল এবং লুক নোসেক কনফিনিটি তৈরি করেন। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২০০২ সালে পেপ্যালের আইপিও তৈরি হওয়ার পর পরই ‘ইবে’ সংস্থা ১৫০ কোটি ডলারে ‘পে প্যাল’ কিনে নেয়। ২০১৫ সালে ‘পে প্যাল’ একটি স্বাধীন কোম্পানিতে পরিণত হয়।