রাজৈশ্বর্যের অধীশ্বর তিনি! ঘরে আছে কুবেরের ধন! শুধু তা-ই নয়, সম্পত্তির নিরিখে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করায় ফের খবরের শিরোনামে চলে এসেছেন ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি’র দেশের এই নামী শিল্পপতি। মজার ব্যাপার হল, ভারতের দুই ধনীতম ব্যক্তির থেকে অনেক বেশি সম্পদ রয়েছে তাঁর সিন্দুকে।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের শিল্পপতি ইলন মাস্ক। ব্যাটারিচালিত গাড়ি টেসলা থেকে শুরু করে ইন্টারনেট পরিষেবা সংস্থা স্টারলিঙ্ক। কিংবা জনপ্রিয় সমাজমাধ্যম এক্স হ্যান্ডলের (সাবেক টুইটার) কর্ণধার হিসাবে দুনিয়ার প্রায় প্রত্যেকেই চেনেন তাঁকে। রাজনৈতিক মহলে আবার আমেরিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে আলাদা পরিচিতি রয়েছে তাঁর।
জনপ্রিয় সংবাদ সংস্থা ‘ব্লুমবার্গ’-এর বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্স রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি হলেন মাস্ক। তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি ডলার ছাপিয়ে গিয়েছে। সম্পত্তি বাড়তে বাড়তে ওই স্তরে পৌঁছে যাওয়ায় নতুন রেকর্ড গড়েছেন টেসলা-কর্তা। ইতিহাসের সর্বাধিক ধনী ব্যক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছেন তিনি।
ঐতিহাসিক ভাবে এত দিন পর্যন্ত বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তির তকমা ছিল মালির রাজা মানসা মুসার দখলে। ৪১.৫ হাজার কোটি ডলারের সম্পত্তি ছিল তাঁর। ১৩১২ থেকে ১৩৩৭ সাল পর্যন্ত আফ্রিকার দেশটির একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন তিনি। ২১ শতকে সম্পত্তির নিরিখে এ বার মুসাকে ছাপিয়ে গেলেন মাস্ক।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ার্স ইনডেক্সের তথ্যে বলা হয়েছে, বর্তমানে টেসলা এবং স্টারলিঙ্ক কর্তার হাতে থাকা মোট সম্পদের টাকার অঙ্ক ৪৪.২ হাজার কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালে ইলনের সম্পত্তি বেড়েছে ২১.৩ হাজার কোটি ডলার। এই সংখ্যা ভারতের দুই ধনকুবের মুকেশ অম্বানী এবং গৌতম আদানির মোট সম্পত্তির থেকেও অনেক বেশি।
বর্তমানে এশিয়া তথা ভারতের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হলেন রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের চেয়ারম্যান মুকেশ অম্বানী। ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৯,৫৯০ হাজার কোটি ডলার। ২০২৪ সাল রিলায়্যান্সের জন্য মোটেই ভাল ছিল না। সংস্থার শেয়ার ওঠানামা করায় সব মিলিয়ে ৪৮ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার লোকসান হয়েছে মুকেশ অম্বানীর।
অন্য দিকে গত বছর (পড়ুন ২০২৪) মোটা অঙ্কের ক্ষতির মুখ দেখতে হয়েছে গৌতম আদানিকেও। সব মিলিয়ে তাঁর লোকসানের পরিমাণ ২৫৪ কোটি ডলার বলে দাবি করেছে ব্লুমবার্গ। পাশাপাশি আদানির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৮,১৮০ কোটি বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, অম্বানী এবং আদানির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১৭ হাজার ৭৭০ কোটি ডলার। অন্য দিকে, এ বছর ২১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বেড়েছে মাস্কের সম্পত্তি। অর্থাৎ, এই দিক থেকে দুই ভারতীয় ধনকুবেরের থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছেন টেসলা-কর্তা।
ধনকুবেরদের সম্পত্তির বিষয়টি শতাংশের দিক থেকে দেখলে মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো তথ্য মিলবে। এশিয়া তথা ভারতের ধনীতম ব্যক্তি মুকেশ অম্বানীর থেকে ৩৬০ শতাংশ বেশি সম্পদের মালিক মাস্ক। আর আদানির তুলনায় তাঁর সম্পত্তির অঙ্ক ৫৬৫ শতাংশ বেশি।
বিশ্বের দ্বিতীয় ধনীতম ব্যক্তি হলেন শিল্পপতি জ়েফ বেজ়োস। ২৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের সম্পত্তি রয়েছে তাঁর। বর্তমানে জ়েফের থেকে দ্বিগুণ সম্পত্তি রয়েছে মাস্কের সিন্দুকে। আর্থিক বিশেষজ্ঞদের কথায়, এর ফলে টেসলা-কর্তা বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
গত বছরের (পড়ুন ২০২৪) নভেম্বরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খোলাখুলি ভাবে সমর্থন করেন মাস্ক। রিপাবলিকান প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে বিপুল টাকা খরচ করেন তিনি। ভোটে ট্রাম্প জিততেই তাঁর সমস্ত সংস্থার শেয়ারের দর হু হু করে বাড়তে শুরু করে। এতেই বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তিদের তালিকায় এক নম্বর স্থানটি চলে আসে তাঁর দখলে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সংস্থাগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর থেকে সবচেয়ে বেড়েছে মাস্কের ব্যাটারিচালিত গাড়ি টেসলার শেয়ারের দর। সংস্থাটির বাজারি মূলধনের অঙ্ক ১.৩৬ লক্ষ কোটি ডলারে পৌঁছে গিয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্টারলিঙ্ক।
অন্য দিকে বিশ্বের ধনকুবেরদের তালিকা প্রকাশ করেছে জনপ্রিয় সংবাদ সংস্থা ফোর্বস। সেখানে বলা হয়েছে, মুকেশ অম্বানীর কাছে রয়েছে ৯৮৭০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় এটি প্রায় ৮.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা। দুনিয়ার ধনকুবেরদের তালিকায় ১৮ নম্বর স্থানে রয়েছেন রিলায়্যান্স কর্তা।
ফোর্বসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অম্বানীর থেকে আরও কিছুটা নীচে রয়েছেন গৌতম আদানি। তাঁর হাতে রয়েছে ৬৪৯০ কোটি ডলারের সম্পত্তি। ভারতীয় টাকায় এর অঙ্ক আনুমানিক ৫.৫ লক্ষ কোটি টাকা বলে ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।
গত বছরের (পড়ুন ২০২৪) নভেম্বরে শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে আমেরিকার একটি আদালতে মামলা দায়ের হয়। বাজারের থেকে বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ সরবরাহের বরাত পেতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সরকারি কর্তাদের তিনি এবং তাঁর সংস্থার পদস্থ কর্তারা ঘুষ দিয়েছেন বলে সেখানে অভিযোগ ওঠে।
পাশাপাশি, ঘুষের কথা গোপন করে আমেরিকার ব্যাঙ্ক এবং স্টকে লগ্নিকারীদের থেকে আদানির সংস্থা প্রকল্পের জন্য কোটি কোটি টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ দায়ের হয়। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে প্রতারণার কথা বলায় আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলির শেয়ারের দর পড়ে যায়। ফলে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন গুজরাতের এই শিল্পপতি। যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
টেসলা-কর্তার বিরুদ্ধে আবার জার্মানির নির্বাচনে নাক গলানোর অভিযোগ উঠেছে। জার্মানির অতি দক্ষিণপন্থী দল এএফডি-র প্রতি প্রকাশ্যেই সমর্থন জানিয়েছেন মাস্ক। সম্প্রতি একটি জার্মান দৈনিকে এএফডি-কে সমর্থন করে একটি প্রবন্ধও লিখেছেন তিনি। এতেই ক্ষুব্ধ জার্মান সরকার।
এই অভিযোগের প্রভাব অবশ্য মাস্কের সম্পত্তির উপর পড়েনি। তাঁর কোনও সংস্থার শেয়ারের দর না কমায় যথেষ্টই খোশমেজাজে রয়েছেন তিনি। ভারতে সরাসরি ইন্টারনেট পরিষেবা ‘স্টারলিঙ্ক’-এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে আগ্রহী আমেরিকার এই ধনকুবের শিল্পপতি। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি নয়াদিল্লি।