আস্ত একটা ঝরনা কী ভাবে পাথুরে গর্তের খাঁজে ‘গায়েব’ হয়ে যায়? কোথায় যায় সে ঝরনার জল? এ নিয়ে বছরের পর বছর ধরে জমাট বেঁধেছে রহস্য। যে রহস্যের সমাধান আজও অধরা তাবড় বিশেষজ্ঞদের।
আমেরিকার মিনেসোটায় একটি সরকারি পার্কের ভিতর দিয়ে বয়ে চলেছে ব্রুল নদী। সে নদীর ঝরনা পরিচিত ডেভিলস কেটল নামে। তবে পার্কের ভিতর একটি পাথরের গর্তে পড়ার পর সে ঝরনার জলের আর হদিশ পাওয়া যায় না।
ডেভিলস কেটলের জল কোথায় যায়? তা জানতে ঝরনায় লাঠি, পিংপং বল অথবা জিপিএস যন্ত্র ফেলে দেখেছেন কৌতূহলীরা। তবে সেগুলি আর অন্য কোথাও ভেসে ওঠেনি।
জনশ্রুতি রয়েছে যে ওই ঝরনায় আস্ত একটি গাড়িও ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তবে সেটিও গায়েব হয়ে গিয়েছে। ঝরনার জলের সঙ্গে বয়ে গিয়ে ওই গাড়িটি অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে, এমনও হয়নি।
এই প্রাকৃতিক রহস্য সমাধানে মরিয়া হয়েছেন অনেকে। তবে তা রহস্যই থেকে গিয়েছে। মিনেসোটার বন্দরশহর ডুলুথ থেকে প্রায় ১২৮ মাইল উত্তরে বইছে ব্রুল নদী।
নদীপথে পড়েছে জাজ সি আর ম্যাগনি স্টেট পার্ক। এক সময় ওই পার্কের ভিতর দিয়ে বয়ে গিয়েছ ব্রুল নদী। পার্কের ভিতরে অনেক দূর যাওয়ার পর এক সময় নদীটি দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে। এর পর তা গ্র্যানাইট পাথরের মতো কঠিন আগ্নেয়শিলার আশপাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে।
ব্রুল নদীর পূর্ব দিকের অংশটি ৫০ ফুট গভীর একটি ঝরনায় পরিণত হয়ে আরও নীচে নেমেছে। এবং পশ্চিম দিকের অংশটি ঝরনার আকার নিয়ে একটি পাথুরে গর্তে প্রায় ১০ ফুট তলিয়ে গিয়েছে। বা বলা ভাল, ‘গায়েব’ হয়ে যায়।
ডেভিলস কেটল দেখতে বহু উৎসাহীই পার্কে ছুটে গিয়েছেন। ঝরনাটি কোথায় গিয়ে মেশে, তার ঠিকানা আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে দাবি। যেন এর কোনও শেষ নেই। অথচ ঝরনার জল গর্ত থেকে উপচেও পড়ছে না। ডেভিলস কেটলের জল ক্রমশ নীচের দিকে বয়ে চলে যাচ্ছে। কোথায়? তা কেউ জানেন না।
ডেভিলস কেটল নিয়ে জল্পনার অভাব নেই বলে জানিয়েছেন পার্কের ম্যানেজার পিটার মট। অনেকের দাবি, ওই ঝরনার জল নীচের স্তর থেকে বয়ে গিয়ে একটি আলাদা জায়গা দিয়ে বার হয়ে সুপিরিয়র হ্রদে মিশেছে। অথবা তা মাটির নীচে অন্য কোনও জলপথের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে।
মট বলেন, ‘‘আমি তো এমনও শুনেছি যে ডেভিলস কেটলের জল দু’ভাগ হয়ে গিয়ে আর একটি ঝরনার সঙ্গে মিশেছে এবং তার কিছু অংশ কানাডায় বইছে। এমনকি, অনেকে বলেছেন যে তা উল্টো দিকে বয়ে গিয়ে মিসিসিপি নদীতে বইছে।’’
হ্রদ, নদী বা সমুদ্রের গতিপথ, জলপ্রবাহ-সহ একাধিক বিষয়ের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাকারী বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, ডেভিলস কেটলের রহস্যভেদ করে ফেলেছেন তাঁরা।
ওই বিশেষজ্ঞদের দাবি, ডেভিলস কেটলের উপরে এবং নীচে, দু’স্তরেই একই পরিমাণ জলধারা বইছে। ঝরনার জল নীচের স্তরের জলপ্রবাহের সঙ্গেই মিশেছে বলেও দাবি তাঁদের।
নিজেদের তত্ত্ব প্রমাণে ডেভিলস কেটলের জলে একটি পরীক্ষা করার পরিকল্পনাও করেছেন মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিশেষজ্ঞ।
ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডেভিলস কেটলের গর্তের জলে ফ্লুরোসেন্ট রঙের ‘ডাই’ ফেলে দেওয়া হবে। এর পর তা কোথায় ভেসে ওঠে, সেটি দেখার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তবে এই পরীক্ষায় রহস্যভেদ হবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নন অনেকে।
ডেভিলস কেটলের রহস্যভেদ হোক, এমনটা কি সকলেই চান? বোধ হয় না! এমনই এক জনের মন্তব্য, ‘‘রহস্যের সমাধান হয়ে গেলে লোকজন আর ডেভিলস কেটল দেখে অবাক হয়ে দাঁড়াবেন না। তা সত্ত্বেও বলব, এ জায়গাটার আকর্ষণ কমার নয়। ডেভিলস কেটল সত্যিই অসাধারণ সুন্দর!’’