মগজ এবং শরীরের সব কলকব্জাকে চালনা করতে গেলে আমাদের ৭-৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের দরকার। সারা দিনের কাজের ধকল সামলে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
এর থেকে কম ঘুম হলে শরীরে আসে ক্লান্তি। মানসিক স্বাস্থ্য ও শরীরের নানা সমস্যা তৈরি হয়। শরীরে প্রদাহের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে কয়েক গুণ। তা ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যার নেপথ্যেও রয়েছে কম ঘুমের পরিমাণ।
মোবাইলের আসক্তি আমাদের ঘুমের গড় সময় অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। তাই সারা দিনে এখন অনেকেই ৫-৬ ঘণ্টা ঘুমে কাজ চালিয়ে নিতে অভ্যস্ত।
তা বলে দিনে মাত্র আধ ঘণ্টা ঘুম! শুনলে অবিশ্বাস্য মনে হলেও জাপানের বাসিন্দা ডাইসুকে হোরি সারা দিনে ৩০ মিনিটের ঘুমেই কাজ চালিয়ে নেন। অন্তত এমনটাই দাবি তাঁর।
ডাইসুকে হোরি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র ৩০ মিনিট ঘুমান। তা-ও এক দিন বা দু’ দিন নয়, দীর্ঘ ১২ বছর ধরেই নাকি এই রুটিনে অভ্যস্ত তিনি।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, এত কম সময় ঘুমিয়েও তাঁর নাকি শারীরিক কোনও সমস্যাই হয়নি। দিব্যি নীরোগ, সুস্থ রয়েছেন এই জাপানি ব্যবসায়ী।
৪০ বছরের ডাইসুকে হোরি দাবি করেছেন যে তিনি তার জীবনকে দ্বিগুণ উপভোগ করার জন্য ঘুমের মাত্রা কমিয়ে দিয়েছেন। কম ঘুমিয়ে অনেক বেশি কাজ করতে চান জাপানের এই বাসিন্দা।
তাঁর মতে, জীবনের এক-চতুর্থাংশ যদি ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিতে হয়, তা হলে বাকি কাজ করার সময় মিলবে কী ভাবে?
আট ঘণ্টা বাদ দিয়ে দিনে-রাতে ১৬ ঘণ্টায় এত কিছু কাজ করা সম্ভব নয় বলে ঘুমের সময়ে কাটছাঁট করেছেন। মাত্র ৩০-৪৫ মিনিটের ঘুম দিয়েই নাকি তাঁর চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, হোরি ধীরে ধীরে তাঁর মস্তিষ্ক এবং শরীরকে ন্যূনতম ঘুমে অভ্যস্ত করিয়েছেন। তবে সবটা এক দিনে সম্ভব হয়নি। ক্রমাগত প্রচেষ্টা, অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই অল্প অল্প করে তিনি ঘুমের সময় কমিয়ে এনেছেন বলে জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
হোরি মনে করেন যে, কাজের লক্ষ্য স্থির রাখার জন্য লম্বা ঘুমের চেয়ে ভাল ঘুম বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর দাবি, এই অতি অল্প পরিমাণ ঘুমের কারণে তাঁর কাজে মনঃসংযোগ ভাল হয়।
শুধু নিজের জন্য নয়, জাপানিদের মধ্যেও কম ঘুমের কার্যকারিতা নিয়ে প্রচার চালাতে শুরু করেছেন হোরি। ২০১৬ সালে, হোরি ‘জাপান শর্ট স্লিপারস ট্রেনিং অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠা করেন।
এই সংস্থার মাধ্যমে দু’হাজারেরও বেশি জাপানিকে কম ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়েছেন হোরি।
এই সংস্থায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে অনেকেই তাঁদের ঘুম আট ঘণ্টা থেকে কমিয়ে মাত্র ৯০ মিনিট করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে। এই প্রচেষ্টা ক্রমাগত চার বছর ধরে অনুশীলন করেছেন বলেও সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন তাঁরা।
ওই জাপানি ব্যক্তি সত্যিই এত কম ঘুমোন কি না, তা যাচাই করতে সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা টানা তিন দিন ধরে তাঁর উপর নজর রাখেন।
তাঁরা জানিয়েছেন, হোরি এক বার মাত্র ২৬ মিনিটের জন্য ঘুমিয়েছিলেন এবং কারও ডাকাডাকি ছাড়াই তিনি ঘুম থেকে উঠে পড়েন।
জেগে উঠে প্রাতরাশের পরে তিনি নিজের কাজে যোগ দিয়েছিলেন। সারা দিনের কাজের পরেও তিনি খুব একটা ক্লান্ত বোধ করেননি। কাজ শেষ করে শরীরচর্চাও করতে গিয়েছিলেন তিনি।
ঘুম পেলে কী করেন হোরি? জবাবে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে কফি খেলে কিংবা খেলাধূলা করলে ঘুম-ঘুম ও আচ্ছন্ন ভাব কেটে যায়।
হোরি একা নন, থাই নক নামের ভিয়েতনামের ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ দাবি করেছিলেন, ১৯৬২ সালে প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে ৬০ বছর ধরে তিনি ঘুমোননি।