এআর রহমান। মিউজ়িক ইন্ডাস্ট্রিতে সুরকার হিসাবে বহু দিন ধরেই প্রথম সারিতে নাম লিখিয়েছেন তিনি। সুর, তাল, লয়— সব কিছুই যেন তাঁর নখদর্পণে। কিন্তু তাঁর পরিচয় সম্পর্কে অবগত ছিলেন না বলে রহমানের সঙ্গে কাজের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এক খ্যাতনামী গায়িকা।
‘‘এআর রহমান আবার কে?’’ সুরকারের নাম শুনে এমনটাই মন্তব্য করেছিলেন অলকা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কুমার শানুও। দু’জন মিলেই নাকি রহমানের ছবিতে গান গাওয়ার প্রস্তাব খারিজ করে দেন।
তথ্যচিত্র এবং ধারাবাহিকের সুরকার হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন রহমান। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে জিঙ্গলের সুরও দিতেন তিনি। বড় পর্দায় কাজ করবেন বলে বলিউডের পরিবর্তে দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকেই বেছে নিয়েছিলেন রহমান।
১৯৯২ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় তামিল ভাষার ছবি ‘রোজা’। মণিরত্নম পরিচালিত এই ছবির গানগুলিতে সুর দিয়েছিলেন রহমান। ছবিমুক্তির প্রায় দু’বছর আগেই গানগুলি নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি।
কখনও এসপি বালা সুব্রহ্মণ্যম, কখনও কেএস চিত্রা, কখনও হরিহরণ, কখনও বা মিনমিনির কণ্ঠে শোনা গিয়েছে ‘রোজা’ ছবির হিন্দি গানগুলি। কিন্তু এই ছবির গানগুলির জন্য রহমানের প্রথম পছন্দ ছিলেন বলিপাড়ার দুই গায়ক।
পুরুষকণ্ঠে রহমান পছন্দ করেছিলেন কুমার শানুকে। মহিলাকণ্ঠ হিসাবে সুরকারের প্রথম পছন্দ ছিলেন অলকা যাজ্ঞিক।
কিন্তু অলকা এবং শানু কেউই তখন রহমানকে চিনতেন না। যে হেতু ইন্ডাস্ট্রিতে রহমানের পরিচিতি ছিল না, তাই তাঁর সঙ্গে কাজ করতে ভরসা পাচ্ছিলেন না দু’জনে।
এক সাক্ষাৎকারে অলকা জানিয়েছেন, এআর রহমানকে চিনতেন না বলে কুমার শানুর সঙ্গে পরামর্শ করার পর রহমানের প্রস্তাব নাকচ করে দেন দু’জনে।
অলকা বলেন, ‘‘আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না। শেষে কুমার শানুর সঙ্গে কথা বলি। ও আমাকে একই কথা বলে। আমরা কেউ রহমানকে চিনতাম না। তাই রহমানের সঙ্গে কাজ করিনি।’’
অলকা জানান যে, রহমানের প্রস্তাব পাওয়ার পর তিনি শানুকে ফোন করেন। সত্যিই তিনি রহমানের ছবিতে গান গাওয়ার প্রস্তাব পেয়েছেন কি না, সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে নিশ্চিত হন গায়িকা।
শানু আদৌ রহমানের সঙ্গে কাজ করতে চান কি না তা জিজ্ঞাসা করেন অলকা। শানু তাঁর উত্তরে বলেন, ‘‘হ্যাঁ, আমাকে তো জানানো হয়েছে যে, ছবির সমস্ত গানই আমাকে দিয়ে গাওয়ানো হবে। কিন্তু কে যাবে ওখানে? আমি তো যাব না। কে এআর রহমান?’’
শানুর উত্তর শুনে অলকাও একমত হন তাঁর সঙ্গে। অলকা বলেন, ‘‘আমিও ওঁর নাম শুনিনি। এআর রহমান আবার কে? কে জানে ওঁর পরিচয়?’’ তার পর নাকি দু’জনেই আলোচনা করে রহমানকে মানা করে দেন।
অলকা জানিয়েছেন যে, রহমানের প্রস্তাব খারিজ করে তিনি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। সাক্ষাৎকারে অলকা বলেন, ‘‘রহমানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া আমার জীবনের মস্ত বড় ভুল। ‘রোজা’ ছবির গানের অ্যালবাম মুক্তি পাওয়ার পর আমি যখন গানগুলি শুনি, তখন আমার দেওয়ালে মাথা ঠুকতে ইচ্ছা করছিল।’’
রহমানের সঙ্গে কাজ করতে পারেননি বলে অলকার এখনও অনুশোচনা বোধ হয় বলে জানান গায়িকা। দুঃখপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘রেডিয়োতে আমি প্রথম ‘রোজা’ ছবির গান শুনি। রহমানের সুর দুর্দান্ত। গানগুলি শোনার পর বার বার মনে হয়েছে যে, আমি কাজ করতেই পারতাম।’’
পরে অবশ্য ‘তাল’ ছবির জন্য রহমানের সুরে দু’টি গান গেয়েছিলেন অলকা। কিন্তু রহমান নাকি বার বার অলকাকে তাঁদের পুরনো স্মৃতি মনে করিয়ে দিতেন।
অলকা বলেন, ‘‘রহমানের সঙ্গে প্রথম দেখা হতেই আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, আমি ‘রোজা’ ছবিতে গান গাইনি। এই ঘটনা আমি কোনও দিনও ভুলতে পারব না।’’