বুধবার ৮১ বছরে পা দিলেন বলিউডের ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যান’ অমিতাভ বচ্চন। জন্মদিন উপলক্ষে চিরাচরিত প্রথাও ভাঙলেন নিজের হাতে। প্রতি সপ্তাহে রবিবার নিয়মমাফিক নিজের অনুরাগীদের দেখা দিতে ‘জলসা’র বাইরে হাজির হন বিগ বি। অনুরাগীদের লক্ষ করে হাত নেড়ে, নমস্কার জানিয়ে ভালবাসা কুড়িয়ে আবার ভিতরে চলে যান। ‘জলসা’র দরজাও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু জন্মদিন উপলক্ষে সে নিয়ম ভাঙলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা।
মঙ্গলবার রাত থেকে অমিতাভকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ‘জলসা’র বাইরে ভিড় জমাতে শুরু করেন তাঁর অনুরাগীরা। নিয়ম ভেঙে অনুরাগীদের জন্য সপ্তাহের মাঝেই ‘জলসা’র বাইরে দেখা দিলেন অমিতাভ।
উঁচু পাদানিতে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে জোড়হাতে, হাত নেড়ে অনুরাগীদের ধন্যবাদ জানালেন তিনি। ক্ষণিকের এই মুহূর্তে ছবিশিকারিদের ক্যামেরায় ধরা দিল বচ্চন পরিবারের তিন নারীও।
‘জলসা’র ভিতর থেকে উঁকিঝুঁকি মারতে দেখা গেল ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন, তাঁর কন্যা আরাধ্যা এবং অমিতাভের নাতনি নব্যা নভেলি নন্দাকে। নিজেদের ফোন ক্যামেরায় অমিতাভের ছবি এবং ভিডিয়োও বন্দি করলেন তাঁরা।
চলতি বছরেই ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র ১৫তম পর্বের সম্প্রচার শুরু হয়। এই পর্বের সঞ্চালনার দায়িত্বে রয়েছেন অমিতাভ। শোয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশ্নোত্তর পর্বের ফাঁকে ফাঁকে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নিতে দেখা গিয়েছে অমিতাভকে। স্ত্রী জয়া বচ্চনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক থেকে শুরু করে নিজের জীবনের ভুল সিদ্ধান্তের কথাও জানালেন অভিনেতা। এমনকি কলকাতা শহরের সঙ্গে যে অভিনেতার সম্পর্ক ছিল তা-ও জানান অমিতাভ।
অমিতাভ জানান, জয়া নাকি কঠোর প্রকৃতির। কিন্তু কঠিন স্বভাবের পাশাপাশি জয়ার মন নরমও। অমিতাভ বলেন, ‘‘জয়া বেশির ভাগ সময় আমার সঙ্গে কঠিন ভাবে থাকে। বাচ্চাদের সঙ্গে থাকার সময় ওর মতো নরম মানুষ আর দুটো দেখা যায় না।’’
বলি অভিনেত্রী ওয়াহিদা রহমান সম্পর্কে একটি গোপন কথাও ভাগ করেন অমিতাভ। ওয়াহিদার কাছে এক বিশেষ ধরনের কমপ্যাক্ট থাকত যা দিয়ে সব সময় মেকআপ করতেন অভিনেত্রী।
বলিউডে এমন একাধিক তারকা ছিলেন যাঁরা নিজেদের সঙ্গে চার জন লোক রাখতেন। তাঁদের কাজ ছিল তারকাদের সামনে আয়না ধরার। এমনটাই জানিয়েছেন অমিতাভ।
অমিতাভ বলেন, ‘‘তারকাদের একসঙ্গে অনেক কিছু লক্ষ করতে হত। মেকআপ থেকে শুরু করে বেশভূষা সব কিছু মিলিয়ে তাঁদের কেমন দেখতে লাগছে তা আয়নায় ভাল ভাবে দেখতেন অনেকে। কিন্তু আমি তাঁদের নাম উল্লেখ করতে চাই না। মানুষ বিশেষে স্বভাবও ভিন্ন হয়।’’
বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভুল করেছিলেন অমিতাভ। অভিনেতা বলেন, ‘‘ভুল বিষয় বেছে আমি নাজেহাল হয়ে গিয়েছিলাম। একদম সোজা ছিল না। কোনও রকমে তিন বছর কাটিয়েছিলাম আমি।’’
অমিতাভ আরও বলেন, ‘‘তিন বছর কাটানোর পর শেষ দু’মাস খালি না বুঝে মুখস্থ করে গিয়েছিলাম। প্রথম বার ভৌতবিজ্ঞানে ফেল করলাম। পরে আবার পরীক্ষা দিয়ে পাশ করি।’’
সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরকে নিয়েও মন্তব্য করেন অমিতাভ। অভিনেতা বলেন, ‘‘আমার বাবা বার বার বলতেন যে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলি সব সময় ঢাক পিটিয়ে বলে তাদের কাছে কত ভাল ভাল জিনিস রয়েছে। কিন্তু দু’টি জিনিস তাদের কাছে নেই তা আমি হলফ করে বলতে পারি। সেগুলি শুধুমাত্র ভারতেই রয়েছে। লতা মঙ্গেশকর এবং তাজ মহল।’’
অমিতাভ তাঁর বাবা হরিবংশ রাই বচ্চন প্রসঙ্গে জানান, জীবনের শেষ সময়ে পৌঁছেও প্রতি সন্ধ্যায় নিয়ম করে একটি সিনেমা দেখতেন তাঁর বাবা। অভিনেতা বলেন, ‘‘এমন অনেক ছবি রয়েছে যা তিন থেকে চার বারও দেখত বাবা।’’
কী কী সবজি খেতে অমিতাভ পছন্দ করেন না তা-ও অনুষ্ঠানে জানান অভিনেতা। তিনি বলেন, ‘‘কাঁঠাল, লাউ, উচ্ছে, করলা খেতে পছন্দ করি না আমি। এগুলো আবার কোনও খাওয়ার জিনিস হল নাকি?’’
নিজেকে বলি অভিনেতা দিলীপ কুমারের মস্ত বড় অনুরাগী বলে দাবি করেন অমিতাভ। দিলীপের অভিনয় দক্ষতার প্রশংসা করতে গিয়ে অমিতাভ বলেন, ‘‘যদি কেউ কোনও দিন ভারতের ফিল্মজগৎ নিয়ে ইতিহাস লেখেন তা হলে তা দুই পর্বে বিভক্ত থাকবে— দিলীপ কুমার পূর্ববর্তী এবং দিলীপ কুমার পরবর্তী অংশ। তিনি এক জন শিল্পী বটে!’’
অমিতাভ জানান, কর্মসূত্রে কলকাতায় গিয়েও কাজ করেছেন তিনি। ৫০০ টাকা পারিশ্রমিকও পেতেন তিনি। কিন্তু তিনি বাংলা ভাষা জানতেন না বলে কথোপকথনের সময় অসুবিধাও হত অভিনেতার।
অমিতাভ যেন সহকর্মীদের সঙ্গে সহজে মিশতে পারেন সে কারণে তাঁকে বাংলা ভাষা শেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন অফিসের সহকর্মীরা। প্রশিক্ষণের জন্য এক জায়গায় ভর্তিও হয়ে যান তিনি। কিন্তু বাংলা ভাষা রপ্ত করা তাঁর আসল উদ্দেশ্য ছিল না।
অমিতাভ জানান, তিনি বাংলা ভাষা শেখার জন্য বিশেষ কোর্সে ভর্তি হওয়ার কারণে তাঁকে অফিস থেকে ৩ হাজার টাকা করে দেওয়া হত। সেই টাকার লোভেই নাকি বাংলা ভাষার কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। অমিতাভ জানান, শেষ পর্যন্ত তিনি বাংলা ভাষা তো শেখেনইনি, বরং ৩ হাজার টাকা খরচ করে ফেলেছিলেন।
১৯৮২ সালে ‘কুলি’ ছবির শুটিংয়ের সময় আঘাত পান অমিতাভ। অভিনেতার দাবি, তিনি গুরুতর চোট পেয়েছিলেন। অনুরাগীদের প্রার্থনা এবং ভালবাসার জোরেই তিনি সেই চোট সারিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
১৯৮১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ইয়ারানা’ ছবিতে ‘সারা জ়মানা’ গানের দৃশ্যে অমিতাভের পরনে একটি বাল্ব জ্যাকেট ছিল। অভিনেতা জানান, তাঁর অনুরোধেই এই ধরনের পোশাক বানিয়েছিলেন পোশাকশিল্পী। তিনিই এমন চমকদার পোশাক পরে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন।
অমিতাভ আরও জানান, ‘সারা জ়মানা’ গানের শুটিং কলকাতার একটি মঞ্চে হয়েছিল। শুটিং দেখার জন্য স্টেডিয়ামের ভিতর প্রায় ৫০ হাজার লোক ভিড় করেছিলেন। অমিতাভ বলেন, ‘‘স্টেডিয়ামের ভিতরে ১২ হাজার লোক ধরত। কিন্তু ৫০ হাজার লোকের জমায়েত হয়েছিল। স্টেডিয়ামের বাইরে আরও ৫০ হাজার লোক অপেক্ষা করছিলেন।’’
পুত্র অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে বন্ধুর মতো সম্পর্ক রয়েছে অমিতাভের। অভিনেতা জানান, সব রকম বিষয় নিয়েই অভিষেকের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন তিনি। অমিতাভ বলেন, ‘‘আমাদের দু’জনের মধ্যে কেউ কোনও সমস্যায় পড়লে তা আলোচনা করে সমাধান বার করে ফেলি।’’
অমিতাভ জানান, তিনি প্রতি জন্মে অমিতাভ বচ্চন হয়ে জন্মাতে চান। অভিনেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘প্রতি জন্মে আমি আমার বাবা-মায়ের সন্তান হয়েই জন্মাতে চাই। তাই প্রতি জন্মে আমি অমিতাভ বচ্চন হয়ে জন্মাতে চাই।’’