রামভূমে জমজমাট উৎসবের অপেক্ষায় গোটা পৃথিবী। প্রতি দিনই শোনা যাচ্ছে প্রস্তুতির নতুন নতুন খবর। কোথাও ৭০০০ কেজি হালুয়া প্রসাদ তৈরি হচ্ছে তো কোথাও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সমস্ত মাংস বিক্রির দোকান।
সম্প্রতি তেমনই একটি খবর নিয়ে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। খবরটি দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নিজেই।
দিন কয়েক আগে উত্তরপ্রদেশের একটি স্থানীয় অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ। সেখানেই কথায় কথায় তিনি জানান রামমন্দির চত্বরে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থার কথা।
মন্দিরে যাঁরা যাবেন তাঁদের অধিকাংশই নিরামিষ খাবার খুঁজবেন। অথচ অযোধ্যায় রাস্তার ধারের বিভিন্ন খাওয়ার দোকান ছাড়া খাঁটি নিরামিষ খাবারের রেস্তরাঁ নেই তেমন।
যোগী জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই অযোধ্যায় খাঁটি নিরামিষ খাবারের একটি বড় রেস্তরাঁ এবং হোটেল খুলতে চলেছে মুম্বইয়ের একটি শিল্পগোষ্ঠী।
সেই রেস্তরাঁ এবং তদসংলগ্ন হোটেলে শুধুই পাওয়া যাবে সাত্ত্বিক ভাবে তৈরি নিরামিষ খাবারদাবার। মাছ, মাংস, ডিম তো থাকবেই না। এমনকি, পেঁয়াজ-রসুনও ব্যবহার হবে না ওই হোটেল এবং রেস্তরাঁর খাবারে।
যোগী জানিয়েছেন, রামমন্দিরের কাছেই ওই হোটেল-রেস্তরাঁটি হবে ‘সেভেন স্টার’ মান সম্পন্ন। বিলাসবহুল পরিষেবার মানদণ্ডে যাকে উচ্চমান বলেই ধরা হয়। অযোধ্যার পবিত্র ভ্রমণভূমির আবহের সঙ্গে মিলিয়ে সপ্তর্ষিমণ্ডলও বলা যেতে পারে একে।
সে ক্ষেত্রে যোগীর কথা বাস্তব রূপ পেলে অযোধ্যার ওই রেস্তরাঁ হবে বিশ্বের প্রথম ‘সেভেন স্টার’ মানদণ্ডের খাঁটি নিরামিষ হোটেল এবং রেস্তরাঁ।
যোগী জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই মুম্বইয়ের একটি নির্মাণ সংস্থা ‘দ্য হাউস অব অভিনন্দন লোঢা’-র সঙ্গে এ ব্যাপারে কথাবার্তা এগিয়েছে।
রামমন্দিরকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই অযোধ্যায় নানা রকম কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। নতুন বিমানবন্দর থেকে শুরু করে হেলিকপ্টার রাইড, বিশেষ ট্রেন— সমস্ত কিছুর ব্যবস্থা হচ্ছে অযোধ্যা ভ্রমণের জন্য। এর পাশাপাশি অযোধ্যার পর্যটনকেও ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি শুরু করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী জানিয়েছেন, অযোধ্যায় ২৫টি হোটেল বানানোর প্রকল্প ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে সরকারের টেবিলে।
এখনও পর্যন্ত দেশে এমন কোনও বিলাসবহুল হোটেল নেই যাঁরা অতিথিদের সম্পূর্ণ ভাবে নিরামিষ খাবার পরিবেশন করেন। অযোধ্যায় ওই ২৫টি হোটেলের প্রস্তাবনা নিয়ে সরকার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে সেগুলি নিরামিষ খাবার পরিবেশনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলেই।
তবে সরকারের টেবিলে এই ২৫টি হোটেলের প্রস্তাব জমা পড়লেও স্থানীয় রিপোর্ট বলছে অযোধ্যায় ইতিমধ্যেই ছোট-বড় মিলিয়ে ১১০টি হোটেল সংস্থা জমি কিনে ফেলেছে।
সাড়ে ১৪ কোটি টাকা দিয়ে অযোধ্যায় সরযূর তীরে জমি কিনেছেন স্বয়ং অমিতাভ বচ্চন!
এর মধ্যেই জোরকদমে চলছে আগামী সোমবারের প্রস্তুতি। অযোধ্যার রামমন্দিরে যখন প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে, তখন প্রসাদ হিসাবে কী দেওয়া হবে অতিথিদের, তা জানতে মুখিয়ে আছে গোটা দেশ।
অনুষ্ঠানে মান্যগণ্য অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তাঁদের আপ্যায়নে আর কী কী ব্যবস্থা থাকবে সে দিকেও থাকবে নজর।
তবে সে তো একটি দিনের খাবার। সারা বছর অযোধ্যায় যাঁরা আসবেন তাঁদের জন্য কী ব্যবস্থা থাকবে, আপাতত সেই ব্যাপারে ভাবতে শুরু করেছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন।
এমনিতে অযোধ্যার রাস্তার ধারের নানা খাবার বিখ্যাত। বিশেষ করে অযোধ্যার চাট যাঁরা খেয়েছেন তাঁরা বলেন, বেনারসের থেকে তা কোনও অংশে কম নয়।
এ ছাড়া ‘রাম লল্লা’র জন্মস্থানের আলু টিক্কি, কচুরি, সিঙাড়ারও বিপুল জনপ্রিয়তা।
জিলিপি, রাবড়ি, দই বড়া তো রয়েছেই। পাশাপাশি এখানকার লাড্ডু নাকি মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়।
রাস্তার ধারের দোকানে নিরামিষ থালি, বা নিরামিষ বিরিয়ানিও মেলে।
যা মেলে না, তা হল কাঁটা চামচ, কাচের প্লেটে, সাজানো-গোছানো আবহে গুছিয়ে বসে এই সব খাবার খাওয়ার সুযোগ। মুখ্যমন্ত্রী যোগীর দাবি, তিনি এ বার সেই অভাবও পূরণ করতে চলেছেন।