চাইলেই নাকি ঈশ্বর হওয়া যায়! এমন ভাবতেন মিশরের রাজারা। পুনর্জন্মে বিশ্বাসী ফারাওরা একদিকে বেঁচে ফেরার কথা ভেবে যেমন পিরামিড বানাতেন। তেমনই সূর্যমন্দিরও বানাতেন। তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, সূর্যমন্দির বানালেই ঈশ্বর হওয়া যাবে।
পুণ্যের ভাগ পেতে চাইতেন সকলেই। তাই এক প্রজন্মের তৈরি করা মন্দির আড়েবহরে বাড়িয়ে তুলতেন পরের ফারাওরা। বছরের পর বছর তৈরি হত সূর্যদেবের মন্দির।
মিশরের ইতিহাস বলছে, এমন অন্তত ছ’টি সূর্যদেবের মন্দির ছিল মিশরে। তবে তার মধ্যে চারটির খোঁজ আজ অবধি পাওয়া যায়নি। ১২৩ বছর আগে প্রথমটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। দ্বিতীয়টির খোঁজ মিলেছে দিন কয়েক আগে।
কায়রো থেকে ১২ মাইল দক্ষিণে গেলে আবু গুরাবের সূর্য মন্দির। সদ্য আবিষ্কৃত মন্দিরটি চাপা পড়েছিল আবু গুরাবের ন্যুসের সূর্যমন্দিরের নীচে।
কিছুদিন আগে সেখানে খননকাজ চালাচ্ছিল পোলিশ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট ফর মেডিটেরানিয়ান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল কালচার। মিশরতত্ত্বের অধ্যাপক মাসিমিলানো নুজলো নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ওই অভিযানের। নুজলো জানিয়েছেন, আপাতত পুরনো সূর্যমন্দিরটির সামান্য অংশই প্রকাশ্যে এসেছে। তবে যেটুকু এসেছে, তা মিশরের ইতিহাসের একটি নতুন দিক খুলে দিতে পারে।
মিশরে পিরামিড থেকে শুরু করে বিভিন্ন আরাধ্য দেবতার মন্দির অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাথর দিয়েই তৈরি করা হয়। তবে পুরনো সূর্যমন্দিরটি তৈরি করতে পাথর নয়, মাটির ইঁট ব্যবহার করা হয়েছিল।
খননকাজ চালানোর পর প্রত্নতাত্ত্বিকরা বেশ কিছু পাথরের স্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তরও পেয়েছেন। যা থেকে অনুমান মন্দিরটিকে ভেঙে তার উপর বানানো হয়েছিল নতুন মন্দিরটি। পাথরের স্তম্ভগুলি ভাঙা হয় সেই সময়েই।
পুরনো মন্দিরটি পরীক্ষা করে প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন, অন্তত সাড়ে চার হাজার বছর আগে তৈরি হয়েছিল মন্দিরটি। সেই সময়ের কিছু বেশ সুরাপাত্রও পাওয়া গিয়েছে মন্দিরের ভিতরে। পোড়া মাটির তৈরি ওই সুরাপাত্রের কোনও কোনওটির ভিতর মাটিও ভরা ছিল। নুজলো জানিয়েছেন, সেগুলি সূর্যদেবের পুজোর কোনও রীতি রেওয়াজেরও হতে পারে।
মিশরের রাজা ন্যুসেরের তৈরি সূর্যমন্দির পরিচিত ন্যুসের সূর্যমন্দির নামে। ন্যুসের ছিলেন মিশরের পঞ্চম সাম্রাজ্যের ষষ্ঠ ফারাও। এই সাম্রাজ্যের ফারাওরা আড়াই হাজার খ্রিস্ট পূর্বাব্দে রাজত্ব করেছিলেন মিশরে। ন্যুসেরের রাজত্বকাল ছিল ২৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২৩৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত।
ঐতিহাসিকরা বলেছেন পুরনো সূর্যমন্দিরটি তৈরি করা হয় ন্যুসেরের সময়ের অন্তত দুই প্রজন্ম আগে। সম্ভবত পঞ্চম সাম্রাজ্যের তৃতীয় বা চতুর্থ রাজার আমলে। হয়তে সেই ফারাওয়েক ঈশ্বর হওয়ার সাধ হয়েছিল শেষ বয়সে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা তাড়াহুড়ো করেই সূর্যমন্দিরটি বানিয়েছিলেন তিনি। তাই পাথরের বদলে ব্যবহার করেছিলেন সহজ বহনযোগ্য মাটির ইট।
সূর্যমন্দির থেকে এ ছাড়াও আরও অনেককিছু জানা যাবে বলে অনুমান নুজলোর। তিনি বলেছেন, সেই সময়ে মিশরীয়রা কী ভাবে জীবন যাপন করতেন, কী খেতেন, কী পান করতেন এ সবও জানা যাবে ওই মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ থেকে। এখন শুধু মন্দিরটির খননকাজ সম্পূর্ণ হওয়ার অপেক্ষা।