পশ্চিম এশিয়ায় পৌঁছে গিয়েছে আমেরিকার পাঠানো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপকারী ডুবোজাহাজ। আমেরিকার সেনাবাহিনীকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তেমনটাই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকার সেনা রবিবার জানিয়েছে, ডুবোজাহাজটি ইতিমধ্যেই পশ্চিম এশিয়ায় পৌঁছে গিয়েছে। প্রতিবেদনে এ-ও বলা হয়েছে যে, আমেরিকার এই পদক্ষেপ আঞ্চলিক শত্রুতায় ‘প্রতিরোধের বার্তা’।
আমেরিকার সেনাকর্তারা ডুবোজাহাজটির নাম না জানালেও জানিয়েছেন যে, এটি একটি ‘ওহায়ো’ ডুবোজাহাজ। ‘ওহায়ো’ আমেরিকার নৌবাহিনীর হাতে থাকা ডুবোজাহাজের একটি বিশেষ শ্রেণি। এটি এখনও পর্যন্ত আমেরিকার তৈরি করা সব থেকে বড় ডুবোজাহাজ। এটি পারমাণবিক অস্ত্রবহনেও সক্ষম।
ডুবোজাহাজটি রবিবার পর্যন্ত কায়রোর উত্তর-পূর্বে সুয়েজ খালে অবস্থান করছিল বলে খবর। সেই সময় ডুবোজাহাজটির একটি ছবিও প্রকাশ্যে এসেছিল।
পারমাণবিক এই ডুবোজাহাজগুলি অত্যন্ত গোপনে কাজ করে। শত্রুপক্ষকে নিজেদের উপস্থিতি টের পেতে না দিয়েই নিজেদের কাজ হাসিল করতে সিদ্ধহস্ত এগুলি।
তবে আমেরিকার ডুবোজাহাজ পশ্চিম এশিয়ায় ঘোরাফেরা করায় অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ, জটিল পরিস্থিতি ছাড়া আমেরিকা নিজেদের ‘ব্যালিস্টিক’ এবং ‘গাইডেড’ ক্ষেপণাস্ত্রযুক্ত ডুবোজাহাজকে আসরে নামায় না।
তা হলে কেন পশ্চিম এশিয়ায় পরমাণবিক ডুবোজাহাজ পাঠাল আমেরিকা?
মনে করা হচ্ছে, ইরান এবং সহযোগী দেশগুলিতে স্পষ্ট বার্তা দিতেই এই পদক্ষেপ করেছে আমেরিকা। আমেরিকা চাইছে না যে, ইজ়রায়েল-হামাস সংঘাতের মাঝে অন্য কেউ নাক গলাক। আর সেই কারণেই আমেরিকা পশ্চিম এশিয়ায় ডুবোজাহাজ পাঠিয়েছে বলে জল্পনা।
ডুবোজাহাজ ছাড়া আমেরিকার সেনা পশ্চিম এশিয়ায় আরও কিছু অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়েছে বলেও খবর।
সম্প্রতি যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পশ্চিম এশিয়া সফরে গিয়ে আরব দেশগুলির প্রতিবাদের মুখে পড়েন আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। অবিলম্বে তাঁর কাছে যুদ্ধবিরতির দাবি তুলেছে জর্ডন, মিশর, কাতার-সহ একাধিক দেশ।
ঘটনাচক্রে ব্লিঙ্কেন যখন পশ্চিম এশিয়ার একাধিক দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন, তখনই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপকারী ‘পাহারাদার’ পশ্চিম এশিয়ায় পাঠিয়েছে আমেরিকা।
ব্লিঙ্কেনের সফরের আগেই আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন, ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টক জানিয়েছিলেন, আমেরিকা ছোটবড় যে কোনও রাষ্ট্রকে ইজ়রায়েল-হামাস সংঘাতের ‘আগুনে ঘি ঢালতে’ দেবে না।
ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালাচ্ছে লেবাননের জঙ্গিগোষ্ঠী হিজ়বুল্লা। ইজ়রায়েলের উত্তর সীমান্তে হামলা চালাচ্ছে তারা।
হামাসকে সমর্থনের বার্তা দিয়েছে ইরানও। এহেন পরিস্থিতিতে ইরান এবং লেবাননের মতো তৃতীয় পক্ষকে ল়ড়াই থেকে ‘সরিয়ে’ রাখতে চাইছে আমেরিকা। আর তাই তড়িঘড়ি পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার ডুবোজাহাজ পাঠানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
‘ওহায়ো’ শ্রেণির ডুবোজাহাজের মধ্যে রয়েছে ১৪টি ‘ব্যালিস্টিক মিসাইল’ ডুবোজাহাজ এবং চারটি ‘গাইডেড মিসাইল’ ডুবোজাহাজ। তারই একটিকে পশ্চিম এশিয়ায় পাঠানো হয়েছে।
ডুবোজাহাজগুলির মধ্যে চারটি ডুবোজাহাজে পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরিবর্তে ‘টমাহক ক্রুজ’ ক্ষেপণাস্ত্র বসানো হয়েছে।
এই ‘গাইডেড মিসাইল’ ডুবোজাহাজ একসঙ্গে ১৫৪টি ‘টমাহক ক্রুজ’ ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে। এক একটি ‘টমাহক ক্রুজ’ ক্ষেপণাস্ত্রে থাকে প্রায় ৫০০ কেজির উচ্চ বিস্ফোরক।
২০১১ সালে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় আমেরিকার নৌসেনা প্রথম ‘গাইডেড মিসাইল’ ডুবোজাহাজ ব্যবহার করেছিল।