থোয়াইটস হিমবাহ। পৃথিবীর এই বিশালাকার হিমবাহের অপর নাম ‘ডুমস্ডে’ হিমবাহ। অর্থাৎ এই হিমবাহ গলতে শুরু করলে না কি বুঝে নিতে হবে, পৃথিবীর ধ্বংসের দিনও নিকটে এসেছে। এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘‘অপ্রত্যাশিত ভাবে এই হিমবাহ গলতে শুরু করেছে।’’
থোয়াইটস হিমবাহ আন্টার্কটিকায় অবস্থিত। মারফি পর্বতমালা থেকে প্রায় ২৯ কিলোমিটার দূরে। এই হিমবাহের আকৃতি এতটাই বিশাল যে তা আমেরিকার ফ্লোরিডা রাজ্যের সমান।
বিশাল আকারের জন্য এই হিমবাহ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তাই হিমবাহটি গলতে শুরু হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসতেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই হিমবাহটি সময়ের তুলনায় অনেক দ্রুত গলছে। আর সেই কারণেও বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে।
‘ব্রিটিশ আন্টার্কটিক সার্ভে (বিএএস)’-এর গবেষকদের দু’টি গবেষণায় এবং ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই হিমবাহের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলি গলতে শুরু করেছে।
কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। বিশালাকার এই হিমবাহের বরফ যদি সম্পূর্ণরূপে গলে যায়, তা হলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ বিশ্বের বহু শহরের রাস্তা জলের তলায় চলে যেতে পারে।
শুধু তা-ই নয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, থোয়াইটস হিমবাহ গলে গেলে পশ্চিম আন্টার্কটিকার জমে থাকা বরফের একটি বড় অংশ গলে যাবে। যার ফলে বিপর্যয়ের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
থোয়াইটস হিমবাহ গলে গেলে সমুদ্রের স্তর ১০ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। যে কারণে বহু শহর, দ্বীপ এবং অনেক উপকূলীয় অঞ্চল ডুবে যেতে পারে।
সমুদ্র শুধু বাসযোগ্য জমিই গ্রাস করবে না, বহু কৃষিজমিও ভেসে যাবে। জলে লবণের উচ্চ ঘনত্বের কারণে তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেলে চাষবাসের অভাবে অনাহারে মারা যেতে পারেন বহু মানুষ।
বিএএস এখনও পর্যন্ত থোয়াইটস হিমবাহ নিয়ে দু’টি গবেষণা করেছে। দু’টি গবেষণা শেষেই বিজ্ঞানীরা একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে— থোয়াইটস হিমবাহ পৃথিবীর জন্য একটি সম্ভাব্য বিপদ।
গবেষকদের প্রথম দল ‘ডুমস্ডে’ হিমবাহের ৫০০ মিটার নীচে পর্যন্ত পরীক্ষা চালিয়ে সমুদ্রের তাপমাত্রা, লবণাক্ততা, হিমবাহ গলে যাওয়ার হার পরীক্ষা করে দেখেন। অন্য একটি দল হিমবাহের নীচের অংশ পরীক্ষা করে দেখেন।
পরীক্ষা শেষে বিজ্ঞানীরা দেখেন, গত কয়েক বছর থোয়াইটস হিমবাহের নীচের অংশের জলের তাপমাত্রা বেশ কিছুটা বেড়েছে।
গবেষণা দলে থাকা বিজ্ঞানী ব্রিটনি স্মিড্ট জানিয়েছেন, সমুদ্রের উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে হিমবাহটি প্রতি বছর গড়ে ৯৮ ফুট করে গলে যাচ্ছে। ফলে হিমবাহের ভিতরে ফাটল ধরছে।
উষ্ণতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সমুদ্রের লবণের কারণেও বরফ গলে যাচ্ছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। বিষয়টি নিয়ে সারা পৃথিবীর চিন্তাভাবনার সময় এসেছে বলেও জানিয়েছেন ব্রিটনি।