পৃথিবীর এক কোণে রোজ হয় সোনার বৃষ্টি! স্বপ্ন নয়। বাস্তবেই তা হয়। বরফে মোড়া এক আগ্নেয়গিরি। সেখান থেকেই রোজ ছিটকে পড়ে সোনা। একটু-আধটু নয়। রোজ প্রায় ৮০ গ্রাম করে। যার দাম ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার কাছাকাছি।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে, মাউন্ট এরিবাস থেকে রোজ ছিটকে পড়ছে সোনা। এমনটাই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় আগ্নেয়গিরি সেটি।
আন্টার্কটিকায় রয়েছে এই আগ্নেয়গিরি। একেবারে প্রায় পৃথিবীর দক্ষিণ প্রান্তে। এর থেকে দক্ষিণে আর কোনও সক্রিয় আগ্নেয়গিরি নেই।
রিপোর্ট বলছে, এই এরিবাস আগ্নেয়গিরি থেকেই গ্যাস, পাথর, বাষ্পের সঙ্গে ছিটকে বার হচ্ছে কেলাসিত সোনা। এরিবাস থেকে ৯৯৯ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে সেই লাভা। তা পরীক্ষা করেই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সোনার কাছাকাছি পৌঁছতে পারেননি তাঁরা।
প্রায় হাজার কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে বিজ্ঞানীদের। কিন্তু কেন তারা কাছে যেতে পারছেন না? বিজ্ঞানীদের একটি অংশ জানিয়েছে, বাদ সাধছে তাপমাত্রা।
এরিবাস আগ্নেয়গিরি যেখানে রয়েছে, সেখানে তাপমাত্রা যে কোনও সময়ে মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নেমে যেতে পারে। তাই সেখানে যাওয়া একেবারেই নিরাপদ নয়। মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
রস সাগরের মধ্যে রস দ্বীপ। সেখানেই রয়েছে মাউন্ট এরিবাস। ১৮৪১ সালে ক্যাপ্টেন স্যর জেমস ক্লার্ক রস এই দ্বীপ আবিষ্কার করেন। তাঁর নামেই নামকরণ হয় দ্বীপের।
আন্টার্কটিকায় রয়েছে প্রায় ১৩৮টি আগ্নেয়গিরি। তাদের মধ্যে ন’টি সক্রিয়। তার মধ্যে উচ্চতম হল মাউন্ট এরিবাস। এর উচ্চতা প্রায় ৩,৭৯৪ মিটার (১২,৪৪৮ ফুট)।
নাসার পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী উপগ্রহ জানিয়েছে, পাতলা ভূত্বকের উপর রয়েছে মাউন্ট এরিবাস আগ্নেয়গিরি। ফলে গলিত পাথর, ভস্ম আরও সহজে বেরিয়ে আসছে। প্রচুর পরিমাণে। সেই সঙ্গেই বেরিয়ে আসছে সোনাও।
মাউন্ট এরিবাসের গহ্বরে রয়েছে একাধিক লাভার হ্রদ। তার মধ্যে একটি সক্রিয় রয়েছে ১৯৭২ সাল থেকে। তার ফলে মাঝেমধ্যে এরিবাস থেকে বেরিয়ে আসছে লাভা।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই আগ্নেয়গিরির অবস্থা বেশ বিরল। ভিতরে জ্বলন্ত লাভা। অন্য দিকে, আগ্নেয়গিরিটি বরফাবৃত। এতটাই কম সেখানকার তাপমাত্রা যে, অভিযানকারীরা খুব একটা যাওয়ার সাহস দেখান না। বিজ্ঞানীরাও নন।
এই ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে মাউন্ট এরিবাস নিয়ে গবেষণার সমস্যা হয়। একই কারণে, সেখানে গিয়ে সোনা তুলে আনা এক প্রকার অসম্ভব।
মাউন্ট এরিবাস আগ্নেয়গিরির উপর নজর রাখার জন্য তৈরি হয়েছে মাউন্ট এরিবাস ভলকানো অবজ়ারভেটরি। আন্টার্কটিকায় পর্যবেক্ষণ চালানোর জন্য রয়েছে ম্যাকমার্ডো স্টেশন। সেটি পরিচালনা করে আমেরিকা। সেখানে বসেই নজর রাখা হয় এরিবাসের উপর।
এই মাউন্ট এরিবাসের উপরই একদা ভেঙে পড়েছিল একটি বিমান। প্রাণ হারিয়েছিলেন সওয়ার ২৫৭ জন। ১৯৭৯ সালের ২৮ নভেম্বর ঘটেছিল সেই ঘটনা।
এয়ার নিউ জ়িল্যান্ডের বিমান ছিল সেটি। নিউ জ়িল্যান্ডের অকল্যান্ড থেকে আন্টার্কটিকার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে আবার অকল্যান্ডে ফেরত আসার কথা ছিল। ১১ ঘণ্টার সফর।
সেই সফরে ঘটে বিপত্তি। আবহাওয়া ছিল মেঘলা। দুপুর ১টা নাগাদ আগ্নেয়গিরির উপর ভেঙে পড়ে বিমান। সব শেষ। পরে উদ্ধারকারী দল কয়েক জন যাত্রীর ক্যামেরা উদ্ধার করে। যদিও কাউকে জীবিত উদ্ধার করা যায়নি। সেই ক্যামেরায় ছিল আগ্নেয়গিরির অসংখ্য ছবি।
সেই থেকে মাউন্ট এরিবাস একটু এড়িয়েই চলেন বিজ্ঞানী থেকে অভিযাত্রীদের দল। রোজ যে এত সোনা বেরিয়ে আসছে, প্রশ্ন, সেই সোনার তা হলে কী হবে? উদ্ধার করে আনবে কে? উত্তর এখনও অধরাই।