বিশ্বের প্রায় প্রতিটি উন্নত দেশই সেনায় বিশেষ বাহিনী রাখে। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষিত এই বাহিনী অভিযানে নামে। নিতান্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সহায়তা করে সেনার।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতেও রয়েছে একাধিক স্পেশাল ফোর্স বা বিশেষ বাহিনী। তবে এগুলির মধ্যে সর্বাধিক চর্চিত পাঁচটি বাহিনী। এই পাঁচটি বাহিনীর নাম, কাজের প্রকৃতি, এমনকি প্রশিক্ষণের প্রক্রিয়া সবই আলাদা।
ভারতীয় সেনার বিশেষ বাহিনীর মধ্যে সাহসিকতা, পারঙ্গমতা ইত্যাদি মাপকাঠিতে প্রথমেই যাদের নাম আসে, তারা হল ‘মার্কোস’। মূলত নৌসেনাকে সহায়তা করার কাজ করে এই বাহিনী।
তবে স্থল এবং আকাশপথেও যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় দক্ষ এই বাহিনীর সদস্যেরা। জলপথে শত্রুদেশ কিংবা জলদস্যুর হানা হোক, কিংবা কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নৌ আধিকারিকেরা ভরসা রাখেন মার্কোসের উপরেই।
সাম্প্রতিক অতীতে লোহিত সাগরকে ইরানের মদতপুষ্ট ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুথির ধারাবাহিক আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে কিংবা আরব সাগরে নিরাপত্তা পরিস্থিতি অটুট রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে মার্কোস।
প্রশিক্ষণ পর্বেই মার্কোসের সদস্যদের কঠিন শারীরিক এবং মানসিক পরীক্ষার ভিতর দিয়ে যেতে হয়। এই ফৌজের সদস্যেরা যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষকে বিভ্রান্ত করতে নকল দাড়ি লাগান। তাঁদের এই ছদ্মবেশের জন্য অনেকে মার্কোসের সদস্যদের ‘দাড়িওয়ালা ফৌজ’ বলে থাকেন।
সেনার বিশেষ বাহিনীগুলির মধ্যে অন্যতম প্যারা কম্যান্ডো বাহিনী। সেনাবাহিনীর অন্দরে এই বাহিনীকে ‘রেড ডেভিল’-ও বলা হয়ে থাকে। ১৯৬৬ সালে এই বাহিনী তৈরি হয়।
এই বাহিনীর প্যারাসুট রেজিমেন্ট আলাদা করে গুরুত্বের দাবি রাখে। এই রেজিমেন্টের সদস্যেরা অতর্কিতে শত্রুদের পিছনে পৌঁছে যান এবং সেখান থেকে হামলা চালিয়ে বিপক্ষের রণকৌশল ঘেঁটে দেন।
সেনার বিশেষ বাহিনীর মধ্যে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ‘ঘাতক’ বাহিনী। শত্রুপক্ষের উপর নিবিড় নজরদারি, বিপক্ষের অস্ত্রভান্ডারে অতর্কিতে হানা দেওয়ার কাজে বিশেষ ভাবে দক্ষ ঘাতকের সদস্যেরা।
ভারতের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং সফল বাহিনী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ‘কোবরা’-কে। মূলত ঘন জঙ্গলে শত্রুকে ঘিরে ধরে আক্রমণ চালানোর ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা আছে কোবরা বাহিনীর।
২০০৮ সালে ভারত সরকার কোবরা বাহিনীর ১০টি ইউনিট খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। মূলত মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় নিযুক্ত করা হয় কোবরা বাহিনীকে।
এ বার যে বাহিনীর নাম করা হচ্ছে, সেটি সরাসরি ভারতীয় সেনার অংশ নয়। তবে যে কোনও পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেন এই বাহিনীর সদস্যেরাও।
মুম্বইয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর বিশেষ বাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে মুম্বই পুলিশ। তৈরি হয় ‘ফোর্স ওয়ান’। এই বাহিনীর সদস্যেদের অধিকাংশই যুবক। তাঁরা স্বেচ্ছায় এই বাহিনীতে যোগ দেন।
তার পর অবশ্য কঠোর প্রশিক্ষণ পর্বে উত্তীর্ণ হতে পারলেই কাজে যোগ দিতে পারেন এই বাহিনীর সদস্যেরা। মহারাষ্ট্র বিধানসভা-সহ মুম্বইয়ের বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ আবাসনগুলি রক্ষার দায়িত্ব আছে এই বাহিনীর উপরে।
এ ছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে রয়েছে জাতীয় সুরক্ষা বাহিনী (এনএসজি)। এনএসজির কাজে আরও পেশাদারিত্ব আনতে প্রক্ষিক্ষণ পর্বের মাত্র ২০-৩০ শতাংশ যোগ্য সদস্যকেই এই বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আবার দেশের আকাশপথকে সুরক্ষিত রাখতে ২০০৪ সাল থেকে সেনাবাহিনীর তরফে যে বিশেষ বাহিনীকে নিযুক্ত করা হয়েছে, তার নাম ‘গরুড়’। বিশেষ বাহিনীগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দিন ধরে প্রশিক্ষণ পর্ব চলে এই বাহিনীর সদস্যদেরই।