প্রতীকী ছবি।
সঞ্চয়ই হতে পারে ভবিষ্যতে ভাল থাকার একমাত্র চাবিকাঠি। আর যাই হোক না কেন, বেশির ভাগের কাছে এই একটি বিষয় খুব পরিষ্কার। সেই কারণেই অনেকে বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করে থাকেন বা বিনিয়োগের কথা ভাবেন ভাল রিটার্নের আশায়। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকির কথা কখনই অস্বীকার করা যায় না। তার উপরে বর্তমানে অনলাইন বা অফলাইনে প্রতারণার ফাঁদ তো রয়েছেই। সমাজে এমন এক দল মানুষও রয়েছেন যাঁরা এই ঝুঁকি বা অনিশ্চয়তাকে ভীষণ ভয় পান। ফলে ঠিক কোথায় বিনিয়োগ করবেন তা ভেবে উঠতে পারেন না। সঠিক সময়ে সঠিক সুদের হার-সহ বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে কি না তা ভাবতেই বেলা গড়িয়ে যায়।
যে ব্যক্তিরা এই ঝুঁকি নিতে চান না, তাঁদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প। এগুলি যেমন ভরসাযোগ্য তেমন লাভজনকও। যেখানে বিনিয়োগ করলে নিশ্চিত সুদের পাশাপাশি পাওয়া যায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষাকবচ। এমনই একটি প্রকল্প হল পোস্ট অফিস রেগুলার ইনকাম স্কিম। ভারতীয় ডাক বিভাগের এই সেভিংস প্রকল্পগুলি আমানতকারীকে নিশ্চিত রিটার্নের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই প্রকল্পে এক জন আমানতকারীকে এক সঙ্গে বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। সেই অর্থের উপর প্রাপ্ত সুদ অনুযায়ী ১২ মাসে ভাগ হয়ে যাবে। এর পরে ওই টাকার মোট সুদের পরিমাণ প্রতি মাসে আমানতকারীর অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।
পোস্ট অফিসে বিনিয়োগ করার সবথেকে বড় একটি সুবিধা হল, এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় প্রতারণার কোনও ভয় থাকে না। সেই কারণেই বহু মানুষ পোস্ট অফিসের মাসিক রোজগার প্রকল্প তথা এমআইএস-এ নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করে থাকেন। যে কোনও ভারতীয় নাগরিক পোস্ট অফিসে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। এখানে একক ভাবে অ্যাকাউন্ট খোলার পাশাপাশি জয়েন্ট অ্যাকাউন্টও খোলা যায়।
প্রথমেই বলা হয়েছে যে সরকারি এই প্রকল্পে রয়েছে নিশ্চিত আর্থিক সুরক্ষা। এই প্রকল্পে বিনিয়োগের ন্যূনতম পরিমাণ এক হাজার টাকা। একক অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাড়ে চার লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। যৌথ অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে এই বিনিয়োগের পরিমাণ ন’লক্ষ টাকা। কোনও জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে সর্বমোট তিন জন থাকতে পারবেন। কোনও ভারতীয় নাবালকের নামেও তার অভিভাবক এই প্রকল্পে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে নাবালকের বয়স অবশ্যই ১০ বছরের বেশি হতে হবে।
পোস্ট অফিসের এই প্রকল্পের মেয়াদ পাঁচ বছর। পাঁচ বছর পরে মেয়াদ শেষ হলে সংশ্লিষ্ট আমানতকারী পুনরায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে পারেন। সংশ্লিষ্ট আমানতকারী যত টাকা রাখছেন, সেই টাকার উপর সুদের ভিত্তিতে প্রতি মাসে সংশ্লিষ্ট আমানতকারীর অ্যাকাউন্টে অর্থ আসতে থাকবে।
বর্তমানে পোস্ট অফিসের মাসিক রোজগার সরকার প্রদত্ত সুদের হার বছরে ৬.৬ শতাংশ। অঙ্ক অনুযায়ী, এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকৃত অর্থ দ্বিগুণ হতে পারে। সেই সঙ্গে মাসে ৪৯৫০ টাকা পেতে পারেন কোনও বিনিয়োগকারী। এই প্রকল্পের আরও একটি সুবিধা হল, ১০০ শতাংশ নিশ্চিত টাকা ফেরতের সরকারি গ্যারান্টি।
কোন অঙ্কের হিসেবে ৪৯৫০ টাকা পেতে পারেন কোনও আমানতকারী?
যে সমস্ত আমানতকারী যৌথ অ্যাকাউন্ট খুলছেন তাঁদের এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে হবে সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ, অর্থাৎ ন’লক্ষ টাকা। বর্তমান হিসেবে এই ন’লক্ষ টাকার ওপর বছরে সুদ পাওয়া যাবে ৬.৬ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি বছর সুদ পাবেন ৫৯ হাজার ৪০০ টাকা। তা হলে প্রতি মাসে সংশ্লিষ্ট আমানতকারী পাবেন ৪৯৫০ টাকা।
আবার যে আমানতকারীরা একক অ্যাকাউন্ট খুলছেন, তাঁদের বিনিয়োগ করতে হবে সাড়ে চার লক্ষ টাকা। সে ক্ষেত্রে তাঁরা প্রতি বছর সুদ পাবেন ২৯ হাজার ৭০০ টাকা। অর্থাৎ ৬.৬ শতাংশ ইন্টারেস্ট রেটে তাঁর মাসিক আয় ২৪৭৫ টাকা।
নিকটবর্তী যে কোনও পোস্ট অফিসে গিয়ে এই মাসিক রোজগার প্রকল্প খুলতে পারেন গ্রাহকরা। তবে এই ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলার আগে পোস্ট অফিসে সেভিংস অ্যাকাউন্ট থাকা কিন্তু আবশ্যিক। নথি হিসেবে অবশ্যই থাকতে হবে আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স। লাগবে দু’টি পাসপোর্ট সাইজ ছবি। এ ছাড়াও সেভিংস অ্যাকাউন্ট থাকলে আপনার মাসিক রোজগার প্রকল্পে অ্যাকাউন্ট খুলতে দিতে হবে এক হাজার টাকা। এই অর্থ নগদ অথবা চেকে দেওয়া যায়।