কথায় আছে বর্তমানের বিনিয়োগই তৈরি করে দিতে পারে ভবিষ্যতের রূপরেখা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যে ব্যক্তি নিজের সঞ্চয় সঠিক ভাবে সুরক্ষিত করতে পারবেন, তিনিই আগামী দিনে স্বচ্ছল ভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন। কিন্তু সঞ্চয় মানে কখনই তা ব্যাঙ্কের সেভিংস অ্যাকাউন্ট হতে পারে না। বর্তমানে বাজার চলতি একাধিক প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এগুলির কোনওটায় রিটার্নও খুব ভাল। তবে ঝুঁকিও রয়েছে বেশ। বাজার খারাপ থাকলে লাভের বদলে উল্টে ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই এই ঝুঁকি থেকে দূরে থাকতে চান অনেকেই।
বিনিয়োগ করার পরে কম-বেশি ভালে লাভের আশা করেন প্রত্যেকেই। কিন্তু বাধ সাধে ঝুঁকি। বহু বার প্রলোভনে পা দেন বিনিয়োগকারীরা। পরবর্তী সময়ে যার ফলও ভুগতে হয় তাঁদের। তাই যে বিনিয়োগকারীরা এমন বিনিয়োগের খোঁজ করছেন যেখানে কোনও ঝুঁকি নেই, তা হলে তাঁদের জন্য খুব ভাল বিকল্প হতে পারে কিসান বিকাশ পত্র। এই প্রকল্পে ঝুঁকি তো নেই-ই, আবার লাভের অঙ্কও কোনও অংশে কম না। ১০ বছরের মেয়াদের বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ করা অর্থ দ্বিগুণ হয়ে যায়। বলা যেতে পারে বাজারচলতি প্রকল্পগুলির তুলনায় এই প্রকল্পে রিটার্ন এককথায় দারুণ।
ভারত সরকার কর্তৃক চালু করা ক্ষুদ্র ও স্বল্প সঞ্চয়পত্রগুলির মধ্যে একটি হল কিসান বিকাশ পত্র। এই প্রকল্পটি চালু হয় ১৯৮৮ সালে। যদিও বেশ কয়েকটি কারণে ২০১১ সালে সরকারি কমিটির নির্দেশ মেনে এই প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালে পুনরায় এই প্রকল্প চালু হয়।
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল কোনও বিনিয়োগকারীর দীর্ঘকালীন মেয়াদের চুক্তিতে ছোট আকারের সঞ্চয়কে সুরক্ষিত করা। ভারত সরকারের এই আর্থিক প্রকল্প অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীর জমা অর্থ দ্বিগুণ হতে সময় লাগে ১২৪ মাস বা ১০ বছর চার মাস। এই নির্দিষ্ট সময়কালই হল কিসান বিকাশ পত্রে টাকা জমা রাখার সম্পূর্ণ মেয়াদকাল। যদিও এই প্রকল্পের লক ইন পিরিয়ড মাত্র ৩০ মাস বা আড়াই বছর। অর্থাৎ এর আগে বিনিয়োগকারীরা কোনও ভাবে টাকা তুলতে পারবেন না। উপরন্তু সুদের হারে কোপ পড়বে। সে ক্ষেত্রে মূল আমানতের সঙ্গে যত দিন টাকা রেখেছেন, তত দিনের সুদ পাবেন আমানতকারীরা।
কিসান বিকাশ পত্রে টাকা রাখতে গেলে বেশ কয়েকটি বিষয় জানা জরুরি। প্রথমত, এই প্রকল্পে বিনিয়োগের ন্যূনতম অঙ্ক এক হাজার টাকা। বিনিয়োগের কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। যে কোনও পোস্ট অফিস বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে এই প্রকল্পের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
এই প্রকল্পে বিনিয়োগের কয়েকটি শর্ত রয়েছে। কোনও বিনিয়োগকারী যদি ৫০ হাজার টাকার অধিক জমা রাখতে চান, তা হলে ওই ব্যক্তিকে প্যান কার্ড দেখাতে হবে। আবার ১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর আয়ের প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক।
এই প্রকল্পের আওতায় ৬.৯ শতাংশ চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ পাওয়া যায়। যদি কোনও বিনিয়োগকারী এই প্রকল্পে বিনিয়োগের পরে এক বছরের মধ্যে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রত্যাহার করে নেন, তা হলে কোনও সুদ পাওয়া যায় না। সঙ্গে জরিমানাও গুনতে হয়।
কিসান বিকাশ পত্রে বিনিয়োগ করতে হলে আমানতকারীকে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। একক বা যৌথ ভাবে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন বিনিয়োগকারীরা। তবে হ্যাঁ, যৌথ অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা তিন অতিক্রম করলে চলবে না। ১৮ বছর পার হলেই এই প্রকল্পে অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। যদিও ১০ বছরের উপরে যে কোনও ব্যক্তি, তার অভিভাবকের অধীনে কিসান বিকাশ পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন।
কিসান বিকাশ পত্রের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার হওয়া সম্ভব। তবে তা বিশেষ কিছু ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কোনও বিনিয়োগকারীর মৃত্যু হলে উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর নমিনি সেই টাকা পাবেন। আবার জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে কোনও এক জনের মৃত্যু হলে দ্বিতীয় হোল্ডারের নামে অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশেও অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার সম্ভব।
যতই সরকারি প্রকল্প হোক না কেন, ৮০সি-র আওতায় কিসান বিকাশ পত্রে কর ছাড়ের কোনও সুযোগ নেই। উপরন্তু, বিনিয়োগের বিপরীতে পাওয়া লভ্যাংশের পরিমাণও করযোগ্য। যদিও চূড়ান্ত প্রাপ্ত অর্থের উপরে কর কাটা হয় না।
বিনিয়োগকারীরা কিসান বিকাশ পত্রে বিনিয়োগের বিপরীতে ঋণ পেতে পারেন। ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে ঋণ আবেদন করার সময় শংসাপত্রটি জমা রাখা হয়। এবং বাজারচলতি অন্যান্য ঋণ প্রকল্পের তুলনায় কম সুদের হারে ঋণ পাওয়া যায়।