আয়কর রিটার্নের সময়সীমা যত এগিয়ে আসছে, আয়কর থেকে বাঁচার রাস্তা খুঁজতে আয়করদাতারা তত ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। আর এই পরিপ্রেক্ষিতেই ভারতীয় আয়কর আইনের ৮০সি ধারাটির উপরও নজর এসে পড়েছে। ৮০সি ধারায় আয়করদাতা নির্দিষ্ট কিছু প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে বছরে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাবেন। ৮০সি ধারায় এ রকমই একটি প্রকল্প হল পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ)।
১৯৬৮ সালের ১৬ মে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অধীন ন্যাশনাল সেভিংস ইনস্টিটিউট আনে পিপিএফ। উদ্দেশ্য প্রভিডেন্ট ফান্ডের আওতার বাইরে অসংগঠিত ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ কর্মী রয়েছেন তাদের জন্য একাধারে স্বল্প সঞ্চয় অন্য দিকে কর ছাড়ের সুবিধা করে দেওয়া। সেই শুরু। ২০১৯-এ খোলনলচে পাল্টে গেল পিপিএফের।
পিপিএফের নিয়ম খুব সোজা। স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ মোট ১৮টি ব্যাঙ্কের বাছাই করা শাখা আর ডাকঘরে যে কোনও ভারতীয় নাগরিক নিজের নামে বা নাবালকের নামে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। তবে এক নামে একটিই পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের নামে বা যুগ্ম নামে অ্যকাউন্ট খোলা যাবে না।
২০১৯ সালের আইন অনুসারে, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ঠিকানার প্রমাণপত্র আর পাসপোর্ট আকারের নিজের ছবি নিয়ে নির্দিষ্ট আবেদন পত্র ভরে ন্যূনতম ১০০ টাকা দিয়ে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। একটি আর্থিক বছরে যত বার খুশি অ্যাকাউন্টে টাকা রাখা যায়। তবে সব মিলিয়ে এক আর্থিক বছরে দেড় লক্ষ টাকার বেশি রাখা যাবে না। প্রতি আর্থিক বছরে কমপক্ষে ৫০০ টাকা রাখতেই হবে।
কিন্তু পিপিএফে টাকা রেখে লাভ কি? প্রথমত অ্যাকাউন্টে বছরে জমা করা দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কর আইনের ৮০সি ধারার আওতায় ছাড় পাওয়া যাবে আর অর্জিত সুদের ওপর কোনও কর বসবে না।
দ্বিতীয়ত ব্যাঙ্কে স্থায়ী আমানতের চেয়ে এখানে বেশি সুদ মিলবে। প্রতি তিন মাসের জন্য সুদের হার কেন্দ্র নির্ধারণ করে। ২০২১-২২ আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের জন্য (এপ্রিল থেকে জুন) এই সুদের হার ৭.১ শতাংশ। উল্লেখ্য ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (এনএসসি)-র সুদের হার ৬.৮ শতাংশ আর ডাকঘরে পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়ে সুদের হার ৬.৭ শতাংশ।
১৯৭৩ সালের সরকারি সেভিংস ব্যাঙ্ক আইন অনুসারে কোনও আদালত কারও পিপিএফ অ্যাকাউন্টের অর্থ বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না। পিপিএফ অ্যাকাউন্ট থেকে ঋণও নেওয়া যায়। নিয়ম অনুসারে অ্যাকাউন্ট খোলার তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ বছরের মধ্যে ঋণ পাওয়া যায়। এই ঋণ ৩৬ মাসের মধ্যে শোধ দিতে হবে।
যাঁর নামে অ্যাকাউন্ট তিনি তাঁর পছন্দ অনুযায়ী নমিনি করতে পারেন। কারও প্রভিডেন্ট ফান্ড থাকলেও তিনি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
এই সঞ্চয় ১৫ বছরের জন্য করতে হবে। যদি এর মেয়াদ কেউ বাড়াতে চান তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছরের মধ্যে তা করতে হবে। এই মেয়াদ বৃদ্ধি পাঁচ বছর হতে পারে। এই পিপিএফ অ্যাকাউন্ট সহজেই এক ব্যাঙ্কের এক শাখা থেকে অন্য শাখায় বা এক ব্যাঙ্ক থেকে অন্য ব্যাঙ্কে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। একই ভাবে কোনও ডাকঘর থেকে ব্যাঙ্কে বা ব্যাঙ্ক থেকে ডাকঘরে সরানো যায়। এই অ্যাকাউন্ট সরানোর জন্য গ্রাহককে কোনও অতিরিক্ত খরচ করতে হবে না।
অ্যাকাউন্ট খোলার সাত বছর থেকে সঞ্চিত অর্থের কিছুটা অংশ তুলে নেওয়া যায়। তবে ঋণ আর মিলবে না। প্রাণঘাতী অসুখের চিকিৎসা বা উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনে অ্যাকাউন্ট খোলার পাঁচ বছর পরে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে টাকা তুলে নেওয়া যায়।