প্রতীকী ছবি।
বিগত কয়েক বছরে দৈনন্দিন জীবনে অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। বদলে গিয়েছে জীবনযাপন, খাওয়া-দাওয়া, কেনাকাটার ধরন। বদল এসেছে লেনদেনের প্রক্রিয়াতেও। নোটবন্দির পর থেকেই কেন্দ্রীয় সরকার বরাবরই নগদের ব্যবহার কমিয়ে ক্যাশলেস লেনদেনের উপর জোর দিয়েছে। নগদকে সরিয়ে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্লাস্টিক মানি বা কার্ডের ব্যবহার। পরিসংখ্যান বলছে, অতীতের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়েছে ক্রেডিট কার্ড।
শুনতে অত্যন্ত সহজ ও লোভনীয় হলেও, ক্রেডিট কার্ড কিন্তু ততটাও সহজ নয়। বলা যেতে পারে, ক্রেডিট কার্ড যতটা ভাল ঠিক ততটাই খারাপ। ঠিক মতো ব্যবহার করতে না পারলে বা কার্ড ব্যবহারের সময়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ঋণে জর্জরিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অতীতে এমন বহু উদাহরণ রয়েছে যেখানে দেখা গিয়েছে শুধুমাত্র ভুল ভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ফলে আর্থিক অনটনে ভুগছে স্বচ্ছল পরিবার। তাই কোনও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সময় বেশ কয়েকটি বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত।
১। দ্রুত পরিশোধ করুন
অনেকেই ক্রেডিট কার্ডে বাকি থাকা বিল সময় মতো মিটিয়ে দেন না। মাসের পর মাস ফেলে রাখেন বা প্রদেয় তারিখের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই অজান্তে কাঁধের উপরে বাড়তি ঋণের বোঝা চাপতে থাকে। মনে রাখবেন, প্রত্যেক ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট প্রদেয় তারিখ থাকে। সেই তারিখ পার হলেই সংস্থার পক্ষ থেকে অতিরিক্ত হারে জরিমানা করা হয়। যার পরিমাণ অনেকটাই। তাই ক্রেডিট কার্ডের বিল আসার পরে শেষ প্রদেয় তারিখের জন্য অপেক্ষা না করে যত দ্রুত সম্ভব সেই বকেয়া অর্থ মিটিয়ে ফেলুন। তা হলে বাড়তি সুদের বোঝা গুনতে হবে না।
হতেই পারে কোনও মাসে আপনার হাতে তত টাকাও অবশিষ্ট নেই যা দিয়ে আপনি ক্রেডিট কার্ডের বিল মেটাতে পারবেন। তবে সে ক্ষেত্রে আরও একটি বিকল্প রয়েছে। ক্রেডিট কার্ডের বিল মেটাতে সংস্থা ন্যূন্যতম বিল মেটানোরও সুবিধা দেয়। পুরো টাকা মেটাতে না পারলে অন্তত সেই টাকাটুকু মিটিয়ে দিন। তা হলে বাড়তি সুদ গুনতে হবে না।
প্রতীকী ছবি।
২। ক্রেডিট লিমিট নিয়ে সাবধান
প্রত্যেক ক্রেডিট কার্ড সংস্থাই গ্রাহকদের একটি নির্দিষ্ট ক্রেডিট লিমিট বেঁধে দেয়। অর্থাৎ কোনও গ্রাহক, ক্রেডিট কার্ডের দ্বারা সেই পরিমাণ অর্থের বেশি খরচ করতে পারেন না। ব্যাঙ্ক বা ক্রেডিট কার্ড সংস্থার বদলে এই সীমা নির্ধারণ করুন আপনিই। কারণ, নিজের আয়, ব্যয়, খরচের হিসেব আপনার থেকে ভাল কেউ জানে না। তাই সমস্ত বিষয় বিশ্লেষণ করে তবেই সেই সীমারেখা নির্ধারণ করুন। এতে প্রকৃতপক্ষে আপনারই সুবিধা হবে। আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য এই সীমা বাড়াতে পারেন। তবে হ্যাঁ, ক্রেডিটের সীমা বেড়ে যাওয়া মানেই আপনি তার উপরে ভরসা করে যখন তখন যা ইচ্ছা তাই কেনাকাটি করলেন তেমনটা করবেন না। এতে উল্টে ফাঁসবেন আপনিই।
৩। অটো ডেবিটের সুবিধা
প্রত্যেক ক্রেডিট কার্ড সংস্থাই অটো ডেবিটের বিকল্প দেয়। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট দিনে ব্যাঙ্ক থেকে নিজে থেকেই ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্ট হয়ে যায়। এত দু’টি সুবিধা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ক্রেডিট কার্ডের বিল মেটাতে ভুলে যান অনেকেই। অটো ডেবিট হয়ে গেলে সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবার সময় মতো পেমেন্ট হয়ে গেলে বাড়তি ঋণের বোঝা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
৪। নগদ টাকা কোনও ভাবেই না
প্রত্যেক সংস্থাই ক্রেডিট কার্ডে নগদ অর্থ তোলার বিকল্প দেয়। তবে ক্রেডিট কার্ড থেকে নগদ অর্থ না তোলাই শ্রেয়। কারণ কার্ডে নগদ অর্থ তুললেই সুদ চালু হয়ে যায় যা অনেকটাই বেশি।
৫। খেয়াল রাখুন কত টাকা ধার নিচ্ছেন
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সময়ে সর্বদা সতর্ক থাকুন। দেখে নিন কত টাকা আপনি ধার নিচ্ছেন এবং সেই টাকা কত দিনে আপনি সহজেই পরিশোধ করতে পারবেন তো। প্রয়োজনে সেই অর্থ ইএমআই-তে ভেঙে নিন। প্রত্যেক ক্রেডিট কার্ড সংস্থাই নির্দিষ্ট একটি অঙ্কের বিনিময়ে তিন মাস, ছ’মাস ও ১২ মাসে ইএমআই-তে ভেঙে নিতে দেয়। বাড়তি সুদ এড়াতে এই পন্থাও অবলম্বন করা যেতে পারে।
৬। ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন রেশিয়ো
ক্রেডিট কার্ডের বিল সঠিক সময়ে মিটিয়ে দিলেও তা কিন্তু আপনার ক্রেডিট স্কোর নেমে যেতে পারে। এটি নির্ভর করে ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন রেশিয়োর উপরে। যে গ্রাহক যত বেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন তাঁর ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন রেশিয়ো বেশি। আবার যে গ্রাহকদের ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন রেশিয়ো বেশি সেই গ্রাহকেরা ব্যাঙ্কের চোখে ঝুঁকিবহুল গ্রাহক। তাই যে কোনও গ্রাহকেরই উচিত ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন রেশিয়ো ঠিক রাখা। এই ক্ষেত্রে একাধিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে খরচকে ভাগ করে দিন। অন্য দিকে আপনার ক্রেডিট কার্ডের সর্বোচ্চ সীমার ৫০ শতাংশ বা তার কম ক্রেডিট ব্যবহারে আপনার ক্রেডিট স্কোর বাড়তে পারে।
মনে রাখবেন, ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার খারাপ নয়। কিন্তু অবশ্যই যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করা একান্ত প্রয়োজনীয়।