প্রতীকী চিত্র
কলকাতা চিরকালই ধাত ছাড়া। তাই ভেবেই আমরা গর্বিত। তবে কলকাতার মানুষের সঞ্চয়ের গতি প্রকৃতি নিয়ে সাম্প্রতিক সব সমীক্ষা কিন্তু চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিকতম সমীক্ষাটি বিমা সংস্থা ম্যাক্স লাইফের করা “ইন্ডিয়া প্রোটেকশন কোশেন্ট ৩.০”। সমীক্ষাটি আগের সব সমীক্ষার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলছে, বিমা করার দৌড়ে কলকাতাবাসী গোটা দেশের অন্য সব শহরের থেকে এগিয়ে আছে। এমনকী মুম্বইয়েরও আগে। তবে বিমা নিয়ে জানার ব্যাপারে সব থেকে পিছিয়ে থাকা শহরও কিন্তু কলকাতা! আর আর্থিক নিরাপত্তার অভাবে ভোগা নাগরিকের নিরিখে এই শহর সবার উপরে!
বিমা নিয়ে না-জেনে বিমা কেনার বিপদ হচ্ছে, অযথা প্রিমিয়াম বেশি দিয়ে লাভ কম পাওয়া। বিমা সংস্থাগুলি সব সময়ই সেই বিমা বিক্রি করতে চায় যাতে তাদের লাভ বেশি। বিমার এজেন্টরাও সেই সব বিমাই আমাদের কাছে তুলে ধরে। এতে আপনার-আমার তুলনামূলক ক্ষতি হলেও এজেন্ট বা বিমা সংস্থার লাভ বেশি হয়।
যেমন, এনডাওমেন্ট বনাম টার্ম প্ল্যান। আমাদের প্রবণতা হল এনডাওমেন্টের দিকে ঝোঁকা। কিন্তু আমরা যদি টার্ম প্ল্যান কিনি তাতে প্রিমিয়াম কম দিয়েও অনেক বেশি অঙ্কের বিমার সুযোগ পাওয়া যায়। আর এনডাওমেন্টে একই সাম অ্যাসিওরেন্সের জন্য যে বেশি প্রিমিয়াম দিতে হয়, সেই ফারাকের অঙ্কটা অন্য কোনও ভাবে বিনিয়োগ করলে কিন্তু আখেরে লাভ অনেক বেশি হয়।
এই সমীক্ষাও কিন্তু বলছে কলকাতাবাসী বিমা সংস্থাদের জন্য স্বর্গ, কারণ কোন বিমায় লাভ বেশি সেই অঙ্ক না করে মেয়াদ শেষে কত টাকা ঘরে আসবে সেই অঙ্কটুকুতেই এখানে মজে থাকেন সবাই। তাই প্রিমিয়াম এই শহর থেকে অনেক বেশি গেলেও সঞ্চয়ের অঙ্কে শহর পিছিয়েই।
তবে যদি এটা সান্ত্বনা হয় তো সান্ত্বনা । মুম্বইও কিন্তু বিমা নিয়ে অজ্ঞতায় কলকাতার পাশেই দাঁড়িয়ে। তবে হ্যাঁ, অতিমারির সময়ে কিন্তু কলকাতা সঞ্চয় নিয়ে অনেক বেশি জেনেছে এবং ভেবেছে। এবং বিমায় আওতায় থাকা মানুষের অনুপাত ৮৬ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৯ শতাংশ।
তবুও কলকাতায় কিন্তু যে পলিসি কেনা হয়, আদতে লাভের সেই টার্ম পলিসির বিক্রি নেই। সমীক্ষার অন্তর্গত মাত্র ২২ শতাংশ মানুষের টার্ম ইনসিওরেন্স আছে।
তবে আরও চিন্তার কথা হল, কলকাতার মানুষ অন্য সব শহরের মানুষের তুলনায় সব থেকে আর্থিক নিরাপত্তার অভাবে ভুগছে। যাঁদের নিয়ে এই সমীক্ষা তাঁদের মধ্যে মাত্র ৩৪ শতাংশ বলেছেন তাঁরা আর্থিক ভাবে নিরাপদ।
আর্থিক নিরাপত্তার অভাবের সূচকে ৭৮ শতাংশ পেয়ে কলকাতা যেমন শীর্ষে, তেমনই দিল্লি, মুম্বই এবং বেঙ্গালুরুও কিন্তু খুব পিছিয়ে নেই। এরা যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছে। আর এই শহরে থাকা মানুষের আর্থিক চিন্তার অন্যতম কারণ হল—
ক) দৈনন্দিন দিন গুজরানের খরচ জোটানো
খ) চিকিৎসার খরচ জোটানো
গ) আর্থিক স্বাধীনতা বজায় রাখা
ঘ) সন্তানের শিক্ষা ও বিবাহের খরচ
চিন্তা নয়, আসলে তো দুশ্চিন্তা। কী ভাবে তা মিটতে পারে তা অন্য প্রসঙ্গ।