১০৮ সংখ্যার পিছনে রয়েছে এক অঙ্ক। ফাইল চিত্র
সন্ধিপুজোকে দুর্গাপুজোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বলা হয়। কখন সন্ধিপুজো হবে তার নির্দিষ্ট নিয়মও রয়েছে সনাতন বিশ্বাসে। বলা হয় অষ্টমী তিথির শেষ দণ্ড (২৪ মিনিট) এবং নবমী তিথির প্রথম দণ্ড (২৪ মিনিট) মিলিয়ে ৪৮ মিনিট সময়কে সন্ধিকাল বলা হয়। বলা হয়, এই সময়ে দুর্গার আরাধনায় সবচেয়ে বেশি ফল মেলে। আর এই পুজোয় চাই ১০৮টি লালপদ্ম। সেই সঙ্গে দেবীর সামনে জ্বালাতে হয় ১০৮টি প্রদীপ।
এই ১০৮ সংখ্যাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সনাতন বিশ্বাসে। একটি পদ্ম কম পড়ায় কমললোচন রামচন্দ্র নাকি নিজের চোখ উপড়ে দেবীকে দিতে চান। তবে সে ছিল দেবীর ছলনা। ভক্তের পরীক্ষা। পাশ করেছিলেন রামচন্দ্র। কিন্তু ১০৮ সংখ্যাটি কেন গুরুত্বপূর্ণ তার উত্তর বেশ কঠিন। পাশ করতে হলে জানতে হবে সেই অঙ্ক।
দুর্গাপুজো বিষয়ে গবেষক তথা সংস্কৃত পণ্ডিত নবকুমার ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘হিন্দু ধর্মে ইষ্ট দেবতার নাম জপের ক্ষেত্রেও ১০৮ সংখ্যাটি গুরুত্বপূর্ণ। নিত্য আহ্নিকের সময়ে ১০৮ বার জপ করতে হয়। ঠিক তেমন ভাবেই সন্ধিপুজোয় ১০৮টি লালপদ্ম দেবীকে আহ্বান করতে হয়। আর ১০৮টি প্রদীপ জ্বেলে অন্ধকার মুছে জ্যোতি প্রাপ্তির প্রার্থনা করা হয়। দীপ শিখা হৃদয়কে উদ্ভাসিত করে। ১০৮ প্রদীপের আলো অজ্ঞতা ও অশুদ্ধতারও বিনাশক।’’
কিন্তু ১০৮ কেন? এর উত্তরে নবকুমার যে হিসেব দিয়েছেন তা হল, একজন সুস্থ মানুষ সারাদিন গড়ে ২১ হাজার ৬০০ বার প্রশ্বাস নেয় এবং নিশ্বাস ছাড়ে। এই ২১ হাজার ৬০০-কে ১০০ দিয়ে ভাগ করলে হয় ২১৬। এটাকে আবার ২ দিয়ে ভাগ করলে হয় ১০৮। এই সংক্রান্ত একটি কাহিনিও বলেন নবকুমার। তাঁর কথায়, ‘‘মেধসমুনি বৈশ্য সমাধিকে দু’বেলা ১০৮ বার করে দুর্গামন্ত্র জপ করতে বলেছিলেন। সমাধি সেই জপকে ক্রমে ২০০ গুণ বাড়িয়ে ২১ হাজার ৬০০-তে পৌঁছে গিয়েছিলেন। তাঁর ব্রহ্মজ্ঞান লাভ হয়েছিল। সুরথ রাজা দুর্গার আরাধনা করে রাজত্ব পেয়েছিলেন আর বৈশ্য সমাধির মোক্ষ লাভ হয়েছিল।’’